বিজ্ঞাপন

জেতাতেই হবে রেজাউলকে, একমত আ.লীগ নেতারা

February 23, 2020 | 10:15 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে যেকোনো মূল্যে জেতাতে একমত হয়েছেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। এক রুদ্ধদ্বার সভায় রেজাউল করিমকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রার্থী উল্লেখ করে কেউ বিরোধিতা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সভায় নেতাদের কেউ কেউ এমন মন্তব্যও করেছেন, টাকার বস্তা দিয়ে যে মনোনয়ন বাগিয়ে আনা যায় না, রেজাউলকে প্রার্থী করার মধ্য দিয়ে সেটা প্রমাণ হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীর পেনিনসুলা হোটেলে কেন্দ্রীয় নেতারা উত্তর, দক্ষিণ, মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বসেন। সভা চলে রাত পর্যন্ত।

সভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ছিলে। এছাড়া নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তরের সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান এবং নগর কমিটির সহ-সভাপতি ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা এবং চট্টগ্রামের অধিকাংশ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যরাও ছিলেন।


সভায় উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমে সূচনা বক্তব্য দিয়ে মোশাররফ হোসেন সভার কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর নেতারা একে একে বক্তব্য দেন। বক্তব্য দেন মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী ও মনোনয়ন বঞ্চিত আ জ ম নাছির উদ্দীনও। সব নেতাই মূলত ঐক্যবদ্ধ থেকে রেজাউল করিমকে জিতিয়ে আনা এবং কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি বাড়ানোর প্রসঙ্গ টেনে বক্তব্য দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

নগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য সারাবাংলাকে জানান, মোশাররফ হোসেন সূচনা বক্তব্যে বলেছেন, ‘রেজাউল করিম চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রার্থী। কাউন্সিলর পদে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তারাও শেখ হাসিনার প্রার্থী। এখানে বিদ্রোহী কেউ থাকতে পারবেন না। যদি কেউ বিরোধিতা করেন, সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার ব্যত্যয় যদি কেউ সৃষ্টি করেন, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবার আর কেউ মাফ পাবেন না।’

আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আমি নিজে প্রার্থী হলে জেতার জন্য যেভাবে কাজ করতাম, যতটুকু পরিশ্রম করতাম, ততটুকু কাজ করে রেজাউল করিম চৌধুরীকে জিতিয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করব। আমরা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব।’

কেন্দ্রীয় নেতাদের দিক-নির্দেশনা জানাতে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম মহানগরের আওতাধীন ওয়ার্ড ও থানা কমিটি এবং কার্যনিবাহী কমিটির সদস্যদের নিয়ে সভা করা হবে বলেও তিনি জানান। কাউন্সিলর পদে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে এবং যারা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন, বিরোধিতা ঠেকাতে তাদের ডেকে মতবিনিময় করার জন্য মোশাররফকে অনুরোধ করেন নাছির। এছাড়া ফেসবুকে পরস্পরের বিরুদ্ধে লেখালেখির বিষয়ে মোশাররফের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নাছির বলেন, ‘ফেসবুকে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে লিখছে। এটা নিয়ে যদি কোনো ঘটনা হয়ে যায়, তখন দায় এসে পড়বে আমি কিংবা মহানগর আওয়ামী লীগের ওপর।’

বিজ্ঞাপন

সম্পাদকমণ্ডলীর ওই সদস্য আরও জানান, সভায় রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে কোনো বিভক্তি নেই। অনেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি কোনো নতুন মানুষ নয়, উড়ে এসে জুড়ে বসিনি। আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। আমি টাকা কামানোর জন্য আসিনি। আমি মানুষকে সেবা দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাশা পূরণ করতে চাই। এজন্য আমি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা চাই।’


নগর আওয়ামী লীগের একজন সহ-সভাপতি সারাবাংলাকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের কেউ কেউ বক্তব্যে বলেছেন, টাকার বস্তা নিয়ে যে মনোনয়ন পাওয়া যায় না, সেটা প্রমাণ হয়েছে। এখন আমাদের উচিৎ হবে ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার প্রার্থীকে জিতিয়ে আনা। যে কোনো মূল্যে রেজাউল করিম চৌধুরীকে জেতাতে হবে। আরেকটা কথা হয়েছে, ভোটারদের কম উপস্থিতি নিয়ে। কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, প্রচুর সংখ্যক ভোটারকে কেন্দ্রে আনতে হবে। ভোটারবিহীন নির্বাচনের অপবাদ যেন আওয়ামী লীগকে ঘাড়ে নিতে না হয়।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী-বাকলিয়া আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো নৌকা প্রতীকে চট্টগ্রামে একজন মেয়র প্রার্থী দিয়েছেন। রেজাউল করিম চৌধুরী সাহেব দীর্ঘদিনের পুরনো এবং পরীক্ষীত একজন নেতা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবাই উনাকে গ্রহণ করেছেন। সারাদেশেও একটা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এখন উনাকে যে কোনো মূল্যে জিতিয়ে আনাই হবে আমাদের প্রধান কাজ।’

‘আরেকটা কথা আমি বলেছি, আমরা কেউ দলের জন্য অপরিহার্য নয়। নেত্রী নৌকা দিয়েছেন বলেই আমি এমপি কিংবা উপমন্ত্রী। নেত্রী নৌকা প্রতীক না দিলে সবাই নোবডি। কারও এমন কোনো ব্যক্তিগত ক্যাপাসিটি নেই যে, দলের চেয়ে বড় হয়ে যাবেন। সুতরাং নেত্রীর সিদ্ধান্তের কথা মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে’, বলেন নওফেল।

বিজ্ঞাপন

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনে জয়ী হয়ে মেয়র হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের আ জ ম নাছির উদ্দীন। ফের প্রত্যাশী হলেও দলটি এবার নাছিরকে মনোনয়ন দেয়নি। তার পরিবর্তে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী মনোনয়ন পেয়েছেন।

এছাড়া প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম নগরীর ৪১ টি সাধারণ ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পতে দলীয় সমর্থন ঘোষণা করেছে। কাউন্সিলর প্রার্থীতা নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ আছে নগরীর তৃণমূলের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে।

সারাবাংলা/আরডি/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন