বিজ্ঞাপন

পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণ: বিকল ক্যামেরায় ‘হতাশ’ তদন্ত সংস্থা

March 2, 2020 | 9:00 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাম্প্রতিক যেকোনো স্পর্শকাতর ঘটনা তদন্তে পুলিশ ঘটনাস্থলের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় ধারণ হওয়া দৃশ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। তবে চট্টগ্রাম নগরীতে পুলিশের স্থাপনায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। কারণ ঘটনাস্থলমুখী কোনো ক্যামেরাই সচল পায়নি সংস্থাটি। ফলে বিস্ফোরণ কিংবা ওই স্থাপনায় বোমা রাখার কোনো সংরক্ষিত দৃশ্যও পুলিশের হাতে নেই। এ অবস্থায় পুলিশ আশপাশের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ক্যামেরায় ধারণ হওয়া দৃশ্য সংগ্রহ করে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা করছে।

বিজ্ঞাপন

২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে চট্টগ্রাম নগরীতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। ওই সময় তৎকালীন কমিশনার আব্দুল জলিল মণ্ডল পুরো চট্টগ্রাম নগরীকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। নগরীর বিভিন্ন জনবহুল স্পটে ১৪০টি ক্যামেরা লাগানোও হয়েছিল সিএমপির তত্ত্বাবধানে। এর বাইরে ব্যক্তিগত কিংবা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন অফিস এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে ক্যামেরা লাগানো হয়। গত বছর সিসি ক্যামেরা লাগানোর এই কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণ, সন্দেহ নাশকতার

তবে নগরীর ব্যস্ততম ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বোমা বিস্ফোরণের পর এখন এমন তথ্য বেরিয়ে আসছে যে, নগরীতে সিএমপির তত্ত্বাবধানে লাগানো অধিকাংশ সিসি ক্যামেরাই বিকল হয়ে পড়ে আছে। সিএমপির জনসংযোগ শাখা থেকে প্রতিদিন সচল ও অচল ক্যামেরার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে আপডেট দেওয়া হলেও বিকল ক্যামেরা মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

বিজ্ঞাপন

সিএমপির জনসংযোগ শাখার তথ্যানুযায়ী, নগরীতে পুলিশের তত্ত্বাবধানে স্থাপন করা ২৯টি আইপি ক্যামেরার মধ্যে সচল আছে ১৯টি। আর ৭৫টি সাধারণ ক্যামেরার মধ্যে সচল রয়েছে মাত্র ছয়টি। মোট ১২৪টি সিসি ক্যামেরার মধ্যে সচল মাত্র ২৫টি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এগুলোতো টেকনিক্যাল বিষয়। ধারাবাহিকভাবে অচল সিসি ক্যামেরাগুলো ঠিক করা হয়। হয়তো সম্প্রতি ওই এলাকার সিসি ক্যামেরা বিকল হয়ে পড়েছে। তাই আমরা বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশ বক্সের ফুটেজ পাচ্ছি না।’

এদিকে রোববার (১ মার্চ) সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান পুলিশ বক্সে বোমা হামলা পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বিকল ক্যামেরাগুলো দ্রুত মেরামতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে পুলিশ বক্সে হামলার দায় নিল আইএস

গত শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণে কমপক্ষে পাঁচজন আহত হন। আহতদের মধ্যে দুজন সেখানে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য। এরা হলেন- সার্জেন্ট আরাফাত হোসেন ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. আতাউদ্দিন। এছাড়া ১০ বছরের এক শিশু এবং আরও দুজন যুবক আহত হন। পুলিশ প্রথমে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে বিস্ফোরণ মনে করলেও প্রাথমিক তদন্তের পর জানিয়েছে, পরিকল্পিতভাবে নাশকতার উদ্দেশে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে পুলিশ বক্সে।

এই ঘটনায় সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক অনিল বিকাশ চাকমা বাদি হয়ে অজ্ঞাত সন্ত্রাসী-গোষ্ঠীকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এদিকে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ওই মামলার আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয়েছে রোববার থেকে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তদন্তের শুরুতেই ঘটনাস্থলের আশপাশে স্থাপিত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়। ঘটনাস্থলমুখী চারটি ক্যামেরা আছে বলে সিএমপির নথিতে উল্লেখ আছে। এর মধ্যে একটিও সচল পাননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এমনকি জনসংযোগ শাখার তথ্যানুযায়ী ক্যামেরাগুলোর অবস্থানও শনাক্ত করতে পারেননি তারা।

সিএমপির চারটি ছাড়া ঘটনাস্থলমুখী আর কোনো ক্যামেরা ছিল না জানিয়ে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান উপ-কমিশনার হাসান মো. শওকত আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরাসরি পুলিশ বক্সমুখী কোনো ক্যামেরা নেই। ফলে বিস্ফোরণের কোনো ফুটেজও আমাদের কাছে নেই। ক্যামেরাগুলো যদি সচল থাকতো, তদন্তে কিছু অগ্রগতি হতো। অন্তত এক বা একাধিক দুর্বৃত্ত, কারা পুলিশ বক্সে ঢুকে বোমাটা রেখে গেল, সেটা জানতে পারতাম। অপরাধী দ্রুত শনাক্ত করা যেত।’

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি বোমা বিস্ফোরণ, কীভাবে; জানে না পুলিশ!

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পুলিশ বক্সের ৫০ গজের মধ্যে বিপ্লব উদ্যানের সামনে থেকে নাসিরাবাদ অভিমুখী দুটি ক্যামেরা আছে। বিপ্লব উদ্যানের বিপরীতে মসজিদের সামনে থেকে বৃটিশ কাউন্সিলের সামনের সড়ক অভিমুখী একটি ক্যামেরা আছে। তিনটি ক্যামেরাই গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে অচল হয়ে আছে। সেখানে কোনো দৃশ্য সংরক্ষিত হয়নি।

এ অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে চারপাশের অন্তত আধা কিলোমিটার দূরত্বে জিইসি মোড়ের দিকে দৈনিক পূর্বকোণ অফিসের পাশে সাউথইস্ট ব্যাংকের সিসি ক্যামেরা, মুরাদপুরের দিকে বিমান অফিসের সামনে এবং চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের সামনে লাগানো ক্যামেরা, অক্সিজেনমুখী বেবি সুপার মার্কেটের সামনে লাগানো ক্যামেরা থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করে অপরাধী শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে।

সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম বলেন, ‘কিছু ফুটেজ আমরা সংগ্রহ করেছি। সেখান থেকেই দুর্বৃত্তদের আইডেন্টিফাই করার চেষ্টা করছি। এলাকাটা খুবই ব্যস্ততম এবং প্রচুর লোকজন যাওয়া-আসা করে। তাই নির্দিষ্ট কাউকে চিহ্নিত করা ডিফিকাল্ট।’

তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা, বোমা রেখে যাওয়া দুর্বৃত্ত বা গোষ্ঠী আগে থেকে পুলিশ বক্স এবং আশপাশের ঘটনাস্থল রেকি করেছে। ওই জায়গায় ক্যামেরাগুলো সচল আছে কি না কিংবা সচল থাকলে সেগুলোকে এড়িয়ে কীভাবে পুলিশ বক্সে প্রবেশ ও বের হওয়া যাবে, সেই কৌশল তারা আগেই নির্ধারণ করেছে। সিসি ক্যামেরাগুলো বিকল থাকার সুযোগ নিয়েই তারা বক্সের ভেতরে প্রবেশ করে এবং বোমা রেখে যায়।

এদিকে বিস্ফোরণের পরদিন শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জঙ্গি কার্যক্রম নজরদারি সংস্থা ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ’ জানিয়েছে- জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তবে পুলিশ বলছে, আইএস’র দাবিকে তারা গুরুত্ব দিচ্ছে না। বরং তদন্ত করে কারা জড়িত তাদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে তারা।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন