বিজ্ঞাপন

টাচস্ক্রিন কেড়ে নিচ্ছে আঁকার হাত, লেখার শক্তি

February 27, 2018 | 10:29 pm

ফিচার ডেস্ক

বিজ্ঞাপন

প্রজন্মের নাম টাচস্ক্রিন প্রজন্ম। এই প্রজন্মের শিশুরা আজ এমন পথে এগুচ্ছে যে, তারা হারাচ্ছে লেখার জন্য পেন্সিল ধরার শক্তি কিংবা ছবি আঁকার হাত।

তারা এখন কেবলই টাচস্ক্রিনে আঙুল চালাতে জানে। হাতে আসে না ছবি আঁকার ঢঙ, জানছে না হাতে লেখার কৌশল।

বিশ্বব্যাপী আজ এই একই সমস্যা প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। গবেষকরা সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন, এমন যদি চলতে থাকে শিশুরা লেখার জন্য পেন্সিলটাই ধরতে পারবে না।

বিজ্ঞাপন

আইপ্যাড আর স্মার্ট ফোনের অধিক ব্যবহারে তাদের হাতের পেশি দুর্বল হয়ে পড়ছে, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।

গবেষকরা দেখেছেন, এরই মধ্যে স্কুলে যেতে শুরু করেছে এমন অনেক শিশুই তাদের পেন্সিল ধরা শেখেনি, লিখতে গিয়ে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে ভীষণ।

তারা বলছেন, এর আগের প্রজন্মেও শিশুরা লেখা ও আঁকার সনাতনী ধারার মধ্যে থেকে শিখে নিয়েছিলো কিছু কৌশল। ফলে চিত্রশিল্প ও কলায় তারা নিজেদের অনেকটা দূর পর্যন্ত এগিয়ে নিতে পেরেছে। কিন্তু আজ যে প্রজন্ম স্কুলে যেতে শুরু করেছে তাদের ভবিষ্যত নিয়েই শঙ্কা গবেষকদের।

বিজ্ঞাপন

তারা বলছেন, মাত্রাতিরিক্ত টাচস্ক্রিন ব্যবহারের কারণেই এমনটা হচ্ছে।

এই গবেষণায় অর্থপেডিক থেরাপিস্টদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন শিশুচিকিৎসাবিদরাও। রয়েছেন হাতের লেখা বিশারদ আর চিত্রশিল্পীরাও।

তারা সবাই মিলে বাবা-মায়েদের উদ্দেশ্যে এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন যে, ফোন, ট্যাবলেট-এর টাচস্ক্রিন শিশু দক্ষতা কেড়ে নিচ্ছে। স্কুলে যাওয়ার আগেই তাদের হাতের নাগালে টাচস্ক্রিন পৌঁছে যাওয়ায় স্কুলে তারা ঢুকছে পেন্সিল ধরার শক্তি হারিয়ে ফেলে। ফলে তাদের লিখতে শেখা হচ্ছে দারুণভাবে বিঘ্নিত।

এই প্রজন্মের শিশুরা তাদের হাতে রঙ তুলি ধরে ছবি আঁকতে পারছে না, কাঁচি হাতে কাটাকুটি করে বানাতে পারছেনা কোনও ক্র্যাফট। রঙমাখা ময়দার খামি ধরে বেলনা বেটে বানাতে পারছে না নানা রঙ্গের চাকতি। ওদের হাতের পেশিগুলো কিংবা কাঁধ, কনুই, কব্জিতে পাচ্ছে না প্রয়োজনীয় শক্তি।

বিজ্ঞাপন

স্কুলের শিক্ষকরা অভিযোগ করছেন, ক্লাসরুমে শিশুরা যখন আসছে তারা পেন্সিল ঘোরানোর মূল কৌশলটিই আয়ত্ব করতে পারছে না।

যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার অন্যতম চিকিৎসক স্যালি পেইনকে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ান একটি রিপোর্টে বলেছে, শিশুরা এখন ব্লক দিয়ে ভবন বানানোর সনাতনি খেলাটিও ভুলে যেতে বসেছে… ওরা বরং সময় কাটাচ্ছে ট্যাবের স্ক্রিনে।

দেশটির জাতীয় হাতের লেখা সংস্থার পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, টাচস্ক্রিনের ছড়াছড়িতে শিশুদের হাতের লেখ খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকেই যাচ্ছে।

যুক্তরাজ্যে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ৫৮ ভাগই কোনও না কোনও ট্যাব কিংবা মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে সময় কাটিয়েছে।
অনেক স্কুলে নার্সারির শিশুদের জন্য স্মার্টবোর্ড বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। রয়েছে টাচ স্ক্রিন কম্পিউটারও। ডিজিটালে শিশুর দক্ষতা বাড়াতেই এই উদ্যোগ। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে শিশুরা তাদের শরীরের উপরের অংশের শক্তি ক্রমেই খুইয়ে ফেলছে। শিক্ষকরাই বলছেন, এই ইন্টারনেট যুগে তারা শ্রেণিকক্ষে শিশুদের আর আগের মতো সক্রিয় পান না।

মনোবিদরা দুষেছেন বাবা-মায়েদের। তারা বলছেন, কোথাও গেলে শিশুরা যাতে এদিক সেদিক ছোটাছুটি না করে সেটা নিশ্চিত করতে ওদের হাতে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ধরিয়ে দিয়ে নিজেরা নিশ্চিন্ত থাকতে চান অনেক বাবা-মা।

মেলিসা প্রানটি নামের এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বলেছেন, সবচেয়ে ভয়াবহ দিকটি হচ্ছে, এই কারণটি নিয়ে আমরা সামান্য ভাবছিও না। শিশু যখন লিখতে চায় না, কিংবা দ্রুত লিখতে পারে না, তখন তার নানা কারণ অনুসন্ধানে আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ি। অনেক অনুমান নির্ভর সিদ্ধান্ত নেই। ফলে এই প্রযুক্তি নির্ভর কারণটি আমরা এড়িয়ে যাই।

অনেক শিশু ব্লক নিয়ে খেলার প্রতিও আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। যার অন্যতম কারণ ব্লকগুলো তুলে কোথাও বসানোর শক্তিটুকুও তাদের হাতে থাকে না।

গবেষকরা বলছেন, এটা মানতে হবে প্রযুক্তি ব্যবহারের নানা ইতিবাচক দিক রয়েছে কিন্তু শিশুর শারীরিক বিকাশে আমাদের মনে রাখতেই হবে, শিশুকে টাচস্ক্রিনে বেঁধে ফেলা যাবে না।

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন