বিজ্ঞাপন

খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ ব্যাংক

March 22, 2020 | 12:39 pm

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: খেলাপি ঋণের কারণ এবং তা আদায়ে ব্যাংকগুলো কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সে বিষয়ে জানতে ৩০টি ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ তাদের মোট বিতরণ করা ঋণের ৫ শতাংশের বেশি- এমন ব্যাংকগুলোকেই ঋণ কমিয়ে আনতে কঠোর বার্তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিজ্ঞাপন

গত সপ্তাহে ব্যাংকগুলোকে পাঠানো এক চিঠিতে পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাংকগুলোর খেলাপির ঋণের কারণ, আদায় পরিস্থিতি ও পরবর্তী পদক্ষেপ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করে চিঠির জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এর সুফলও পাওয়া গেছে। ২০১৯ সালের শেষ প্রান্তিকে দেশে খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। আগামীতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও কমে আসবে।’

ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে নির্দেশনা দিচ্ছে তা যদি পালন করা যায় তবে খেলাপি ঋণ অনেকটাই কমিয়ে আনা যাবে বলে মনে করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ‘ব্যাংকগুলোর মধ্যে বিতরণ করা ঋণের ৫ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে- এমন ব্যাংকগুলোর কাছে বিভিন্ন তথ্য চেয়ে চিঠি দিযেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চিঠিতে যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের বেশি তাদের ঋণ আদায় এবং খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে ১০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে এমন ব্যাংকগুলোকে উদ্বেগজনক তালিকায় রেখে মনিটরিং করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ১০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে এমন ব্যাংকের সংখ্যা ১৫টি।’

সূত্র জানায়, বিতরণকৃত ঋণের ১০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে এমন ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সোনালী ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও  বেসিক ব্যাংক। এর মধ্যে গত ডিসেম্বর শেষে মোট বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫৩ শতাংশ, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ৫০ শতাংশ, জনতা ব্যাংকের ২৯ শতাংশ, সোনালী ব্যাংকের ২২ শতাংশ, রূপালী ব্যাংকের ১৫ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংকের ১৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

এগুলোর বাইরে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আইসিবি ইসলামি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৮৪ শতাংশ, পদ্মা ব্যাংকের ৭২ শতাংশ, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৪৭ শতাংশ, এবি ব্যাংকের ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ যথাক্রমে ১৭ শতাংশ, ১৬ শতাংশ এবং ১৫ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে হাবিব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১১ শতাংশ এবং ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের ৯৮ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে পাঁচ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে এমন বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ওয়ান ব্যাংকের ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ, মেঘনা ব্যাংকের ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ, উত্তরা ব্যাংকের ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংকের ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ, সিটি ব্যাংকের ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ, আইএফআইসি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ,  মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংকের ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ, শাহ্জালাল ইসলামি ব্যাংকের ৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, সাউথইস্ট ব্যাংকের ৫ দশমিক ২১ শতাংশ এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। এর আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের মার্চ শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। একই বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা আর সেপ্টেম্বর শেষে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।

সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন