বিজ্ঞাপন

খালেদা জিয়ার জন্য প্রস্তুত ‘ফিরোজা’!

March 25, 2020 | 1:23 am

আসাদ জামান ও রাজনীন ফারজানা

ঢাকা: বাসার নাম ‘ফিরোজা’। হাউজ নম্বর এনইডি-১, রোড নম্বর ৭৯, গুলশান-২।  ২০১১ সালের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এ বাড়িটির কোনো ঐতিহাসিক মূল্য ছিল না। বাড়িটির ব্যাপারে ছিল না কারও কোনো কৌতূহল বা আগ্রহ। কিন্তু সে বছর ২২ এপ্রিল বাড়িটিতে যখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বসবাস শুরু করেন, সেদিন থেকেই এর গুরুত্ব বেড়ে যায়। বেড়ে যায় মর্যাদা।

বিজ্ঞাপন

২০১১ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি— এই সাত বছর এ বাড়িটিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী-এমপি, কূটনীতিক, জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূত-ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি মিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, বিদেশি ডেলিগেট, দেশের বিশিষ্টজন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের ছিল নিত্য আনাগোনা।

বাড়ির সামনে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী (সিএসএফ), বিরোধী দলের নেতা এবং বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে প্রটোকল পুলিশ, কর্মী-সমর্থকদের ভিড়, সর্বোপরি মিডিয়াকর্মীদের সরব উপস্থিতিতে বাড়িটি ছিল আর দশটি বাড়ির চেয়ে একদম অন্যরকম।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বাড়িটির সব জৌলুস হারিয়ে যায়। হঠাৎ করে যেন নিভে যায় সবগুলো বাতি। থেমে যায় সবার আনাগোনা। একে একে চলে যায় বাড়িটির নিরাপত্তা-সৌন্দর্য রক্ষায় নিয়োজিত লোকজন। বিদেশি দূত, দেশি রাজনীতিক, মিডিয়াকর্মী, প্রোটকল পুলিশ— কেউ আর আসে না বাড়িটির আঙ্গিনায়!

কারণটা একেবারেই পরিষ্কার— ও দিনই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। সেদিনই পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগার পাঠানো হয় তাকে। সেখানে প্রায় ১৪ মাস থাকার পর গত বছর এপ্রিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। এখনো সেখানেই রয়েছেন তিনি।

তবে মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) বিকেলে আইনমন্ত্রী জানালেন, ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিচ্ছে সরকার। তবে এই ছয় মাস তাকে নিজের বাসায় থাকতে হবে। অর্থাৎ খালেদা জিয়াকে যেতে হবে সেই ‘ফিরোজা’য়— হাউজ নম্বর এনইডি-১, রোড নম্বর ৭৯, গুলশান-২।

বিজ্ঞাপন

সবকিছু ঠিক থাকলে বুধবার (২৫ মার্চ) ‘ফিরোজা’য় ফিরবেন খালেদা জিয়া। অর্থাৎ সাড়ে ২৫ মাস পর বাসায় ফিরছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) রাত ১০টার পর ‘ফিরোজা’র সামনে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) অন্যতম সদস্য সার্জেন্ট (অব.) নুরুন নবী দুই সহকর্মীকে নিয়ে বাসার গেটের সামনে বসে আছেন। সেখানে যাওয়া মাত্রই পূর্ব পরিচয়ে সূত্র ধরে এগিয়ে এসে কুশল বিনিময় করলেন। চোখ-মুখ দেখেই বোঝা গেল, খালেদা জিয়ার মুক্তির সংবাদে আনন্দে উদ্বেলিত তারা।

খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর একে একে সবাই বিদায় নিয়েছেন। রয়েছেন কেবল নুরুন নবীসহ চার জন। খালেদা জিয়া না থাকলেও তার বাড়িটি ধুয়ে-মুছে বাসযোগ্য করে রাখা, বাড়ির বাগানের যত্ন নেওয়া এবং বাড়ির সার্বিক নিরাপত্তা বিধানের জন্যই এ চার জনকে রাখা হয়েছে। তারা জানালেন, মঙ্গলবার বিকেলে খালেদা জিয়ার মুক্তির খবর শোনার পরই বিশেষভাবে পরিষ্কার করা হয়েছে বাড়িটিকে।

বিজ্ঞাপন

রান্নাঘর, থাকার ঘর, বসার ঘর, বারান্দা, বাসার লন, দরজা-জানালা, বিছানাপত্র, বাথরুম, ফ্যান-এসি, পর্দা— যা কিছু আছে, সব কিছু ধুয়ে-মুছে পরিষ্কারের কাজ চলছে তখনো। বাসার সামনে-পেছনের বাগান, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএসফের গাড়ি— সব ধুয়ে-মুছে পলিশ করা হয়েছে।

টিভি-ফ্রিজ, সোফা-আলমারি, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ অব্যাহত রয়েছে। ঝারবাতি, বাড়ির আঙ্গিনার ফ্লাডলাইট, সিসিটিভি ক্যামেরা, ফুলদানিতে জমা ময়লা, সখের সবজি বাগান, ছাদে হাঁটার জায়গা— সবকিছুই নতুন করে সাজানো হয়েছে। কোথাও কোনো কিছুর যেন ঘাটতি না থেকে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি সিএসএফ’র চার সদস্যের।

সিএসএফ সদস্য সার্জেন্ট (অব.) নুরুন নবী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ম্যাডাম বাসায় না থাকলেও প্রায় প্রতিদিনই বাসা পরিষ্কার করা হয়। উনি যদি আজকে আসতেন, আজই থাকতে পারতেন। আমরা সেভাবেই বাসাটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখি।’

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন