বিজ্ঞাপন

গতি নেই বিমানের ৯ প্রকল্পে

March 29, 2020 | 8:37 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রস্তাবের শুরুতেই ঠিকঠাক মতো সম্ভাব্যতা যাচাই না করা, বার বার ডিপিপি পরিবর্তন, জমি অধিগ্রহণে সমস্যা, দরপত্র প্রক্রিয়ায় সময় বেশি লাগাসহ নানাবিধ কারণে গতি হারিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ৯ গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প। এর মধ্যে মেয়াদ ফুরিয়ে এলেও এখনও দুটি প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য। অন্যগুলোর অবস্থাও প্রায় একই রকম। এক্ষেত্রে প্রকল্প তৈরির গোড়ায় গলদ রয়েছে বলে মনে করছে সংসদীয় কমিটি।

বিজ্ঞাপন

গত ২৮ জানুয়ারি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। বৈঠকে সংসদীয় কমিটি বলেছে, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরির সময় সংশ্লিষ্ট সংস্থা সতর্ক থাকলে পরবর্তী সময়ে ঘন ঘন ডিপিপি পরিবর্তনের প্রয়োজন হতো না; প্রকল্পগুলো সঠিক সময়ে শেষ হতো।

এ বিষয়ে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেকোনো প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেরি হলে সেখান থেকে উপকারভোগীরা যে সুবিধা পাওয়ার কথা তা থেকে বঞ্চিত হয়। তাছাড়া বাস্তবায়ন দেরি হলে ব্যয় বৃদ্ধিরও আশঙ্কা থাকে। এতে দেশ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

এদিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পগুলোর ধীর গতির বেশ কিছু কারণ রয়েছে। একেকটির ক্ষেত্রে একেকরকম কারণ দায়ী। তবে মোটা দাগে বলতে গেলে, জমি অধিগ্রহণের সমস্যা ছিল, ঠিকাদাররা সময় মতো কাজ করেনি এবং একই যন্ত্রপাতি বা শ্রমিক একাধিক জায়গায় ব্যবহারের ফলে কোনো কাজেই অগ্রগতি আসেনি। এছাড়া বিদেশ থেকে মালামাল আনতেও বিলম্ব হয়েছে। এমনকি দরপত্র প্রক্রিয়ায় দেরি হওয়াও একটি অন্যতম কারণ।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, বৈঠকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিমানবন্দর উন্নয়নসহ বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় জানানো হয়, কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পটি ২০১৯ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এ পর্যন্ত অগ্রগতি হওয়ার কথা ৫১ শতাংশ। কিন্তু বাস্তব অগ্রগতি শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ। একবছর পার হলেও আর্থিক অগ্রগতি শূন্য দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এছাড়া সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখনও এ প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য।

বৈঠকে জানানো হয়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিদ্যমান এক্সপোর্ট কার্গোর উত্তর দিকে অ্যাপ্রোন সম্প্রসারণ ২য় পর্যায় প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশ। অথচ ২০১৭ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের বিদ্যমান রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য। এটি ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। হযরত শহিজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ ১ম পর্যায় প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ২ শতাংশ। অথচ এ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

বৈঠকে আরও জানানো হয়, বিমানবন্দর উন্নয়ন ছাড়াও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের নোয়াখালী জেলার হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের একই অবস্থা। এটি ২০১৮ সালের মার্চ থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। কিন্তু অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মহানন্দায় শেখ হাসিনা সেতু সংলগ্ন এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ। এ প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। এছাড়া পঞ্চগড় পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা। কিন্তু অগ্রগতি হয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। এদিকে বরিশাল জেলার দূর্গাপুর এলাকায় পর্যটন সুবিধা প্রবর্তন প্রকল্পটি গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। কিন্তু অগ্রগতি হয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. নূরুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পগুলোর কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নেই। তবে সংসদীয় কমিটির সভায় গতি বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ও আশ্বস্ত করেছেন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে গতি আনা হবে।’

বৈঠকে আলোচনায় অংশ নিয়ে কমিটির সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘হযরত শাহাজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের ব্যয় এক বছরের মধ্যে ৫৬ শতাংশ বেড়েছে। এর কারণ কি?’ অল্প সময়ের মধ্যে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপও জানতে চান তিনি। এ সময় তিনি সমস্যা সমাধানে মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনে স্থায়ী কমিটি অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।’ বৈঠকে সাবের হোসেন চৌধুরী আরও বলেন, ‘শেষ মুহূর্তে শত শত প্রকল্প আসে। যেগুলোর কোন সম্ভাব্যতা যাচাই হয় না। ফলে সময় মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় না এবং প্রকল্পের মূল্য বেড়ে যায়।’

এদিকে সাবের হোসেন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামিমা নার্গিস জানান, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটিতে আন্তর্জাতিক মানের সুবিধা যোগ করা হয়েছে। এজন্য বেশ কিছু নতুন কম্পোনেন্ট যোগ করতে হয়েছে। ফলে প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে।

এ সময় কমিটির সদস্য ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ ডিপিপি তৈরি করে থাকে। আবার কিছুদিন পর সেই কর্তৃপক্ষই আবার ডিপিপি সংশোধন করে। যেখানে নতুন আইটেম যোগ করে এবং আপগ্রেডেশন হয়। ফলে মূল্য বেড়ে যায়। এর উল্টো চিত্রও আছে। যেমন জাইকার অর্থায়নে সম্প্রতি সমাপ্ত হয়েছে গোমতী ও মেঘনা ব্রিজের উন্নয়ন প্রকল্প। এটি প্রাক্কলিত ব্যয় থেকে ৭০০ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত হয়েছে। পাশাপাশি দেড় বছর আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

এসব বিষয় নিয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পগুলো অনেক সময় এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর বাস্তবায়নের আগেই সংশোধনের জন্য আসে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সঠিকভাবে ডিপিপি তৈরি, মূল্যায়নের সমস্যা ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার অভাব দায়ী।’

সমস্যা সমাধানে আইএমইডি সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় সমস্যা হচ্ছে জমি অধিগ্রহণ ও দরপত্র কার্যক্রম। এ দুটি সমস্যার সমাধান করা গেলে প্রকল্প দ্রুত গতিতে সামনের দিকে এগুতে পারে।’

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন