বিজ্ঞাপন

নিজের জায়গা ধরে রাখতে আত্মবিশ্বাসী সাদমান

April 4, 2020 | 7:14 pm

মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

লাল সবুজের হয়ে সাদা পোষাকে অভিষেকেই জাত চিনিয়েছেন সাদমান ইসলাম অনীক। বয়সে একেবারেই তরুণ হলেও সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেকের দিনেই মিরপুর শের-ই-বাংলার ২২ গজে দৃঢ় ব্যাটিংয়ে এঁকে দিয়েছেন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ঝকঝকে তকতকে এক ছবি। সেদিন ৭৬ রান সংগ্রহ করতে সাদমান খেলেছিলেন ১৯৯টি বল। অভিষেকে বাংলাদেশের হয়ে এত বেশি বল খেলতে পারেননি আর কোনো ওপেনার। এই সংগ্রহে তিনি সময় নিয়েছিলেন ২২০ মিনিট! শুনলে অবাক হবেন এই ঠান্ডা রক্তের তরুণই ২০১৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো তিনি একেবারেই স্ট্রোকপ্রেমী নন। বরং ধৈর্য্যশীল ব্যাটিংয়ে লম্বা ইনিংস খেলতেই তিনি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। আর এই একটি বিষয়ই তাকে অন্যদের চাইতে আলাদা করেছে, দিয়েছে নিখাঁদ টেস্ট ব্যাটসম্যানের তকমা। যা তাকে বাংলাদেশ দলে জায়গা ধরে রাখার আত্মবিশ্বাস যোগায় নিরন্তর।

বিজ্ঞাপন

শুধু অভিষেকেই নয়, এরপর যে‍ক’টি (৫টি) ম্যাচই খেলেছেন তার প্রতিটিতেই ছিল বড় ইনিংস খেলার দৃপ্ত অঙ্গীকার। এতে করে অভিষেকের পর থেকে লাল সবুজের ইনিংসের গোড়াপত্তনকারী হিসেবে সাদমানের ব্যাটেই আস্থা রাখতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন টাইগার টিম ম্যানেজমেন্ট। কাজেই নতুন কেউ দলে এলেই তিনি বাদ পড়বেন বা তাকে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে এটা তিনি ভাবতে তিনি একেবারেই নারাজ।

পাঠক হৃদয়ে প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে হঠাৎ করে সাদমানের জায়গা ধরে রাখার প্রসঙ্গ কেন উঠছে? কারণ হলো, গেল ফেব্রুয়ারিতে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে আরো এক তরুণের অভিষেক হয়েছে। নাম তার সাইফ হাসান। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রতিনিয়ত যার ব্যাটে রানের ফোয়ার ছোটে! কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান সিরিজের পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচেও নিজেকে প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের বিপক্ষে ফিরেছেন রানের খাতা না খুলেই! আর দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ১৬ রান। একই মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে খেলেছেন ৮ রানের ইনিংস (দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে নামতে হয়নি)।

বিজ্ঞাপন

সেটা নিঃসন্দেহে সাইফ হাসানের জন্য নিরন্তর ভাবনার কারণ। কেননা রুঢ় বাস্তবতা হলো, তামিম, সৌম্য ও লিটন যুগে ক্রিজের অপর প্রান্তে তিনি যত ব্যর্থ হবেন সাদমানের পথ ততই মসৃণ হবে। যদিও সাদমান এভাবে ভাবতে প্রস্তুত নন। বরং সতীর্থের জন্য তার শুভ কামনার এতটুকু কমতি নেই।

বাঁহাতের কব্জিতে সফল অস্ত্রোপচার শেষে গত ১৭ মার্চ অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরেছিলেন সাদমান। ফিরেই বিসিবি’র নির্দেশনায় চলে গেছেন হোম কোয়ারেনটাইনে। বিসিবির প্রধান চিকিৎসক শক্ত করে বলে দিয়েছিলেন, আগামি ১৪ দিন নিজ কক্ষ থেকে বের হওয়া যাবে না। করেছেনও তাই। চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে প্রাণঘাতী করেনার প্রাদুর্ভাব রোধে নিজেকে বাসার একটি কক্ষে আবদ্ধ রেখেছেন। সেই সময় গত সপ্তাহেই শেষ করেছেন। তাই মিলেছে নিজের রুম থেকে মুক্তির আনন্দ। কিন্তু করোনার ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাব তাকে ঘর থেকে বেরুতে দেয়নি! ঘরে বসে গেমস খেলে, বই পড়ে, পুরোনো খেলা দেখে তার সময় কাটছে। কখনো সখনো সর্বোচ্চ ছাদে বা পাশের ফ্ল্যাটে বেড়াতে যান।

তবে অস্ত্রোপচারের পরে শল্য চিকিৎসক গ্রেগ হয়ের বেঁধে দেওয়া হাতের ব্যান্ডেজটা এখনো খুলতে পারেননি। কেননা করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে চলছে অলিখিত লকডাউন। বাইরে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। হাসপাতালে গিয়ে হাতে ড্রেসিং করাতে পারছেন না সাদমান। এমনকি ব্যান্ডেজও খুলতে পারছেন না। তবে দুঃশিচন্তা মুক্ত করা তথ্য হচ্ছে সাদমানের হাতের অবস্থা এখন ভালো।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলার সঙ্গে মুঠোফোনে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথাই জানালেন লাল সবুজের এই তরুণ তুর্কি ব্যাটসম্যান। জানিয়েছেন বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের অপার সম্ভাবনার কথাও। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরা হলো-

সারাবাংলা: আপনার ইনজুরির কী অবস্থা?

সাদমান: ভালোই আছি। তবে নতুন করে ড্রেসিং করা হয়নি। যেভাবে ছিলাম ওভাবেই আছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: অন্যান্য প্লেয়ারদের করোনার সময়টা যেমন যাচ্ছে আপনার অবস্থা একটু ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই। কারণ আপনি অস্ট্রেলিয়া থেকে অস্ত্রোপচার করিয়ে দেশে ফিরে মাত্রই হোম কোয়ারেনটাইনে থেকে এসেছেন। কেমন লাগছে?

সাদমান: অবশ্যই ভালো লাগছে। কারণ অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে ১৪ দিন রুমের মধ্যেই ছিলাম। রুম থেকে বের হতে পারিনি। আম্মা এসে আমার টেবিলে খাবার রেখে যেতেন। পুরো সময়টা গেমস খেলে, আগের খেলা দেখে, বই পড়ে আর মুভি দেখে কেটেছে। এখন তো তাও বাসার ভেতর এই রুমে ওই রুমে যেতে পারছি, সবার সঙ্গে কথা বলতে পারছি। তবে একটু কষ্ট হচ্ছে কেননা বাসার বাইরে যেতে পারছি না। বেশি খারাপ লাগলে সর্বোচ্চ ছাদে যেতে পারছি।

সারাবাংলা: বাংলাদেশের সব ক্রিকেটারদের মধ্যে টেস্ট ক্রিকেট খেলার মানসিকতা দেখা যায় না। একজন টেস্ট ওপেনার হিসেবে আপনি এই ব্যাপারটা কীভাবে দেখেন?

সাদমান: ছোট বেলায় আমি অনেক টেস্ট ম্যাচ দেখতাম আর পছন্দও করতাম খুব। তখন মনে হয়েছে যদি ক্রিকেট খেলি টেস্ট ক্রিকেটার হওয়ারই ইচ্ছে আছে। আমি যখন তিন দিন চার দিনের ম্যাচ খেলেছি সেখানে অনেকগুলো বল খেলতাম। তখনই মনে হয়েছে টেস্ট ক্রিকেটার হওয়া সম্ভব। সেজন্যই টেস্ট ক্রিকেটেই আছি।

সারাবাংলা: আপনার ক্যারিয়ারে আপনার বাবার প্রভাব কতটা? যেহেতু তিনি গেমস ডেভেলপমেন্টে ছিলেন।

সাদমান: বাবার প্রভাব অবশ্যই আছে। আমি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান করার পরে সবাই আমাকে চিনেছে। হয়তো ৮০ ভাগ মানুষই জানত না আমার বাবা বিসিবি’র অফিসিয়াল। তারপর থেকেই সবাই আস্তে আস্তে জানতে শুরু করল। আব্বু ‍অনেক সাহায্য করেছে, কখন কীভাবে খেলতে হয়, কখন কীভাবে খেললে ভালো খেলা যায়।

সারাবাংলা: টেস্ট ক্রিকেটে ওপেন করতে গেলে সবচেয়ে বেশি কী প্রয়োজন হয়?

সাদমান: সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় আত্মবিশ্বাস। সাথে সাথে আরেকটা জিনিস প্রয়োজন হয় সেটা হলো, বিশ্বাস যে আমি পারব। এবং নিজের উপর যথেষ্ট ফোকাস থাকতে হয়।

সারাবাংলা: টেস্টে যে মাচগুলো খেলেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ কয়েকটি ম্যাচের অভিজ্ঞতা শুনতে চাই।

সাদমান: নিউজিল্যান্ড ট্যুরের আগে সবসময় চিন্তায় ছিলাম কী করে ওদের বল মোকাবিলা করব। তবে সবচেয়ে বেশি চিন্তায় ছিলাম কী করে ওয়েগনারের বল খেলব। কারণ আমি জানতাম না ও এত বাউন্সার দিতে জানে। কিন্তু ওর বল খেলার পরে ধারণা আরো বদলে গেল ও এত পরিমাণ বাউন্সার দিতে জানে সেটা আমার ধারণাই ছিল না। আরো একটা ব্যাপার হলো, ওয়েগনারের স্লেজিং। কারণ ও প্রতিটি ওভার শেষে আমার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় স্লেজিং করত।

সারাবাংলা: সম্প্রতি বাংলাদেশের টেস্ট স্কোয়াডে সাইফ হাসান এসেছে। ওর আসাটা আপনার জন্য ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়াল কিনা?

সাদমান: এরকমভাবে আসলে কখনই চিন্তা করি না। কারণ যার যার জায়গা তাকেই ধরে রাখতে হয়। আমি চাইব না যে খারপ খেলি। তেমনই সাইফ ও না। তবে আমার মনে হয় না আমার জায়গা কেউ নিতে পারবে। কেননা ধরে রাখাার দায়িত্বটা আমারই।

সারাবাংলা: আপনার কী মনে হয় টেস্টে ভালো ফলাফল নেই বলে সবার এই ফরম্যাটের প্রতি আগ্রহ কম?

সাদমান: হয়তো। তবে আমরা টেস্ট কম খেলি বলেই এটা চোখে পড়ে। হয়তো যখন বেশি বেশি খেলব, সময় দিলে খেলতে খেলতে হয়ত আমরা আরো ভালো করব।

সারাবাংলা: টেস্ট ক্রিকেটার হতে গেলে কোন দক্ষতাটা বেশি থাকতে হয়?

সাদমান: ধৈর্য্য ও প্যাশন! এই দুইটা থাকলেই হয়।

সারাবাংলা: বাংলাদেশে বড় মাপের কোনো টেস্ট বোলার নেই। আপনার কি মনে হয় দেশে ভালো মানের পেসারকে মোকাবিলা করতে পারলে আন্তর্জাতিক টেস্ট আরো সহজ হত?

সাদমান: আমার জানা মতে আছে। রাহি, এবাদত। তবে আপনি যদি ঈশান্ত শর্মা ও উমেষ যামব মানের পেসারদের কথা বলে থাকেন তাহলে অপেক্ষা করতে হবে। নিশ্চয়ই আসবে। কিন্তু এটাও সত্যি আমাদের ক্রিকেটের বয়সটা ভারত, অস্ট্রেলিয়ার মতো অত বেশি না। তবুও মনে করি আমরা যদি নিজেদের প্রস্তুত করি কঠিন না।

সারাবাংলা: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

সাদমান: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আরো পড়ুন:

মিডল অর্ডারেই স্বাচ্ছন্দ্য মিঠুনের

নিজের জায়গা ধরে রাখতে আত্মবিশ্বাসী সাদমান

বাতাসে বল ঘুরাতেই নাঈমের যত আনন্দ

করোনা থামিয়ে দিয়েছে সৌম্য’র বিশ্বকাপ ভাবনা

পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটাই আমাদের টার্নিং পয়েন্ট ছিল: আকবর

বিশ্বকাপে আমাদের এক-দুইটা ম্যাচ জেতা সম্ভব ছিল: জেসি

‘এমনভাবে ফিরতে চাই যেন আর বের হতে না হয়’

সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে চান নাঈম

নেইমারের সঙ্গে নিজের মিল খুঁজে পান সাইফউদ্দিন

সারাবাংলা/এমআরএফ/এসএস

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন