বিজ্ঞাপন

করোনায় রাঙ্গামাটির পর্যটনশিল্পে কয়েক কোটি টাকা ক্ষতির শঙ্কা

April 5, 2020 | 8:43 am

প্রান্ত রনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাঙ্গামাটি: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) প্রভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে রাঙ্গামাটির পর্যটনখাত। এরইমধ্যে স্থানীয় পর্যটন শিল্পের হঠাৎ ধসে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা। এই সময়ে অলস জীবনযাপন করছেন খাতসংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। এখনও বেশিরভাগ হোটেল-মোটেল মালিক দিতে পারেননি শ্রমিক ও কর্মচারীদের বেতন।

বিজ্ঞাপন

সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ মার্চ থেকে তিন পার্বত্য জেলার সব পর্যটন স্পট ও বিনোদনকেন্দ্রে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্থানীয় জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে তিন জেলার সব হোটেল-মোটেল বন্ধ রাখার কথাও বলা হয়। এতে গত ১৯ মার্চ থেকে অলস জীবনযাপন করছেন পর্যটনখাত সংশ্লিষ্টরা। মৌসুমের শেষ দিকে ২৬ মার্চকে কেন্দ্র করে তিন জেলায় যে পরিমাণ পর্যটকের ঢল নামে এবার সেটাও করোনার প্রভাবে শূন্যের কোটায়।

রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন হোটেল-মোটেল, কটেজ ও পর্যটন স্পটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগ থেকেই হোটেল-মোটেল ও পর্যটন স্পটগুলো বন্ধ রয়েছে।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে কর্মহীন শ্রমিক-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, বিগত দুই সপ্তাহ ধরে তারা অলস জীবনযাপন করছেন। এর মধ্যে তিন পার্বত্য জেলার হোটেল-মোটেল বন্ধ ও পর্যটন স্পটে নিষেধাজ্ঞতা জারির পর থেকে তারা ঘরবন্দি হয়ে আছেন। দিন দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে হাতে থাকা টাকা-পয়সাও।

বিজ্ঞাপন

সাজেক কটেজ-রিসোর্ট অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ বলেন, ‘পাহাড়ের পর্যটন স্পটে ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় সাজেকে এখন কোনো পর্যটন নেই। মৌসুমের এই শেষ সময়টাতে আমাদের মোটামুটি ভালোই ব্যবসা হতো। এ বছরও ২৬-২৮ মার্চ পর্যন্ত সাজেকের প্রায় সব কটেজ-রিসোর্টে ৬০-৭০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং ছিলো। এখন সবারই বুকিং বাতিল হয়ে গেছে।’

‘সাজেকে মোট ১০৬টি কটেজ-রিসোর্ট রয়েছে। আমাদের হিসাবে যদি সাজেকে মোটামুটি পর্যটকের সমাগম হয়; তাহলে গাড়ি, রেস্টুরেন্ট, কটেজ ও রিসোর্টসহ সব দিকের হিসেবে প্রতিদিন ৮০ লাখ টাকার বেশি ব্যবসা হয়ে থাকে। বর্তমানে সাজেক ভ্রমণের এই নিষেধাজ্ঞা দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তোলা হবে না। এতে করে আমাদের হাজারের অধিক শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে আছেন। এ কারণে আমাদের কত কোটি টাকার ব্যবসা যে থমকে গেছে সেটা হিসেব করাও বেশ বড় ব্যাপার’, বলেন সুপর্ণ দেব।

রাঙ্গামাটি পর্যটন বোট মালিক সমিতির সহ সভাপতি ও পর্যটন বোটঘাটের ম্যানেজার মো. রমজান আলী জানান, নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই শতাধিক ইঞ্জিনচালিত ট্যুরিস্টবোট অলস পড়ে আছে। অলস সময় কাটাচ্ছেন চালক-মালিকরাও। ২৬ মার্চকে কেন্দ্র করে রাঙ্গামাটিতে বেশ সংখ্যক পর্যটক আসার সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু করোনার কারণে সেটাও ভেস্তে গেছে। আমাদের হিসেবে প্রতিদিন যদি ৫০টি বোট ভাড়া হয়, তবে ২-৩ লাখ টাকা ব্যবসা হয়ে থাকে। এ খাতে যারা কাজ করে সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। এখন অনেকেই খুব কষ্টের জীবনযাপন করছেন।

বিজ্ঞাপন

রাঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া জানিয়েছেন, ২৬ মার্চ কেন্দ্র করে আমাদের ৫০ লাখ টাকার ব্যবসা হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু মার্চের শুরু থেকে ৮-৯ মার্চ পর্যন্ত ১৩-১৪ লাখ টাকার ব্যবসা হয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর অগ্রিম বুকিংও সব বাতিল হয়েছে। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্থানীয় পর্যটকের সমাগম না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব না।

রাঙ্গামাটি জেলা আবাসিক হোটেল-মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মঈনুদ্দীন সেলিম জানান, পর্যটন স্পট ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ও হোটেল-মোটেল বন্ধের সিদ্ধান্তের পর থেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছে রাঙ্গামাটির এইখাতের মাধ্যমে জীবিকানির্বাহ করা মানুষগুলো। যারা আগে তিন বেলা খেত, হয়ত তারা এখন দুই বেলা খেয়ে জীবনযাপন করছেন। অনেকেই এমন অবস্থায় এসব নিম্ন আয়ের কর্মচারীদের বেতন দিতে সক্ষম হয়নি। এ মিলিয়ে আসলে দেশের কোনো মানুষই ভালো নেই।

তিনি আরও জানান, রাঙামাটিতে সমিতির আওতাভুক্ত হোটেল-মোটেলে সংখ্যা ৪৫টি। এছাড়া সমিতির আওতাভুক্ত ছাড়া সব মিলিয়ে ৫০টির মতো হোটেল-মোটেল রয়েছে। এই অবস্থায় বেকার আছেন ৪৫০-৫০০ জন হোটেল কর্মচারী। এতে ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ জানান, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় রাঙ্গামাটিতে সরকারিভাবে ১০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ও ১০ লাখ টাকা এসেছে। আমরা উপজেলায় পর্যায়েও এই খাদ্যশস্য ও অর্থ পাঠিয়েছি। সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষদের মাঝে এসব খাদ্যশস্য অর্থ বিতরণ করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এমও/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন