বিজ্ঞাপন

অনুদান নয়, ঋণ প্যাকেজ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী: ফখরুল

April 5, 2020 | 5:16 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: `গরিব মানুষের জন্য অনুদান নয়, ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণ প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি দিয়ে চলমান সংকট নিরসন হবে না’— এমনটিই মনে করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৫ এপ্রিল) বিকেলে উত্তরায় নিজ বাসায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি দলের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনটি বিএনপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সরাসরি প্রচার করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এই প্রণোদনা ঘোষণা তখনই পজিটিভ বলতে পারতাম যদি আমরা দেখতাম যে, আসল সমস্যার সমাধান করার জন্য উনি উদ্যোগী হয়েছেন। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের, খেটে খাওয়া মানুষের, ইনফরমাল সেক্টারের কৃষকদের জন্য উনি কিছু করেছেন। বস্তুত তাদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজে কিছু নেই।’

‘৭২ হাজার কোটি টাকা তো ঋণ প্যাকেজ। তারা এখন জনগণকে বলবে, ৭২ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। দিয়েছে তো ঋণ, পুরোটাই ঋণ। এখানে অনুদান বলতে কিছু নেই। সব ঋণের প্যাকেজ’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘দিন আনে দিন খায়’ গরীব মানুষের জন্য আমরা সরকারকে ১৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার কথা বলেছিলাম। সুনির্দিষ্টভাবে বলেছিলাম এটা অনুদান দিতে হবে। আমরা বলেছি, ভাতা বাড়াতে, চিকিৎসক-নার্সদের প্রণোদনা দিতে হবে, স্বাস্থ্যখাতে প্রণোদনা বাড়াতে হবে। অনুদান, ভাতা, বেতন বাড়িয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে।’

‘যে বিষয়গুলো অত্যন্ত জরুরি, সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সেইভাবে কথা বলেননি। ‘দিন আনে দিন খায়’— এই শ্রেনীর মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। আনফুরচুনেটলি সেই সেক্টারের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে, তার প্যাকেজের মধ্যে কোথাও সেই ধরনের কিছু আমরা দেখতে পাই নাই। রেমিট্যান্স যারা পাঠান তাদের কোনো কথা এই প্রণোদনা প্যাকেজে নেই’— বলেন বিএনপির মহাসচিব।

গার্মেন্টস খাতের প্রণোদনা শ্রমিকদের কাছে যাবে কিনা, তা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট নয় বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতের বিষয়ে প্যাকেজে কোনো কথা উল্লেখ নেই। হেলথ সেক্টারটা একেবারেই নেগলেটেড। কোনো কথাই বলা হয়নি  হেলথ সেক্টর নিয়ে। এই মুহূর্তে সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন পরীক্ষা, পরীক্ষা, পরীক্ষা— যেটা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেছেন। অথচ বাংলাদেশে এখন পরীক্ষা নেই, পরীক্ষা নেই, পরীক্ষা নেই অবস্থা দাঁড়িয়ে গেছে। যেখানে যাবেন বলবে যে, এখানে হবে না। ভেন্টিলেটর তৈরি করার কোনো কথা প্রণোদনা প্যাকেজে নেই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হেলথ ডিপার্টমেন্টের মধ্যে পারস্পরিক যে সমন্বয় থাকা দরকার সেটাও ঠিক নেই। ডিজি হেলখ এক কথা বলছেন, আইইডিসিআর ডিজি আরেক কথা বলছেন আর স্বাস্থ্য মন্ত্রী তো আরো ভীষণ কথা বলছেন। যেসব কথা শুনলে মনে হবে দেশে ভাইরাস নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মানবসভ্যতার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জটা মোকাবিলা করার জন্য আমরা সবাই হাত বাড়িয়ে আছি, আমরা সবাই উদ্যোগী হয়েছি। তারপরেও তারা বলছেন যে আমরা নাকী দায়িত্বজ্ঞানহীন-কান্ডজ্ঞানহীনের মতো কথা বলছি! ‘আমরা তো ২৭ টা দফা দিয়েছি। তার বর্ণনা দিয়েছি।’

পুরো লকডাউন দরকার

বিজ্ঞাপন

এই মুহূর্তে সারাদেশ পুরো লকডাউন দরকার কী না?— এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমি তো মনে করি যে, পরিপূর্ণ লকডাউন করা উচিত। দ্যাট ইজ দ্যা অনলি এনসার। যে ভয়াবহতা আসছে, এখনো রিয়েলাইজ করতে পারছে না তারা। ২৭ দিন হয়ে গেছে। অলরেডি কিন্তু গতকালের চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুন হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এটা জ্যামিতিক হারে বাড়বেই। ওই জিনিসটা যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি, আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে এদেশ স্বাধীন করেছি, আমরা ওইভাবে পরাজিত করবো, পরাজিত তো অবশ্যই করবো। তবে তার জন্যে যে অস্ত্র দরকার, যে উইপেন্স দরকার, সেই উইপেন্সগুলো তো আমরা পাচ্ছি না।’

ফখরুল বলেন, ‘৮৭% হাসপাতালে সাধারণ চিকিৎসা নেই। যেমন আপনার এপেনডিসাইটিজ হলো, আপনি চাইবেন যে, ডাক্তারের কাছে গিয়ে আলট্রাসোনোগ্রাম করা হোক, সেটা আপনি পাবেন না। আপনার হার্ট এ্যাটাক হলো হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা পাবেন না। জাস্ট ফ্যাক্ট।’

তিনি বলেন, ‘এই বিষয়গুলো সরকার নজর দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। অন্যদিকে সমন্বয় কোনো খানেই নেই। এই বিষয়গুলো জনগণের মধ্যে অনাস্থা তৈরি করেছে এবং প্রথম দিক থেকে প্রত্যেকটা ইস্যুতে বাংলাদেশের মানুষের আস্থা এই সরকারের ওপর থেকে প্রায় চলে গেছে।’

বিএনপি নেতারা ঘরে বসে শুধু অভিযোগ করছে, করোনা মোকাবিলায় তাদের ভুমিকা নেই— আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘এই ধরনের বক্তব্যের একটাই প্রতিক্রিয়া, সেটি হলো- দায়িত্ব সম্পূর্ণ সরকারের। ইতিমধ্যে আমাদের নেতা-কর্মীরা নিরাপত্তার মধ্যে থেকে দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তারা খাবার দিচ্ছেন, তারা মাস্ক দিচ্ছেন। সিলেটে মেয়র বৃহৎ আকারে খাবার নিয়ে মানুষের পাশে যাচ্ছেন, প্রত্যেকটা জেলা, প্রত্যেকটা উপজেলা, প্রত্যেকটা ইউনিয়নে আমাদের নেতা-কর্মীরা কাজ করছে। ফলে আওয়ামী লীগ নেতাদের  সঠিক নয়। এসব অলিক অভিযোগ। এখন কী অভিযোগ করার সময়?’

সারাবাংলা/এজেড/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন