বিজ্ঞাপন

কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল: নেই পর্যাপ্ত আইসিইউ, খাবার আসে বাইরে থেকে

April 5, 2020 | 10:58 pm

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারিতে পরিণত হওয়া করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশেও। এরই মধ্যে দেশে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৮ জন, এর মধ্যে ৯ জন মারাও গেছেন। ৩৩ জন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেও এখনো চিকিৎসাধীন ৪৬ জন। মৃদু লক্ষণ থাকায় ১২ জনের চিকিৎসা হচ্ছে বাসায়। তবে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ৩৪ জনকে। যেসব হাসপাতালে এই কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল। অধিদফতরের তথ্য বলছে, ২৬টি নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) রয়েছে এই হাসপাতালে, রয়েছেন পর্যাপ্ত চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী। তবে সূত্র বলছে, অধিদফতরের অনেক তথ্যের সঙ্গেই বাস্তবতার মিল নেই।

বিজ্ঞাপন

কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত এই হাসপাতালের একাধিক সূত্র বলছে, অধিদফতর ২৬টি আইসিইউয়ের কথা বললেও বাস্তবে এই হাসপাতালে আইসিইউ বেডের সংখ্যা ১০টি। তবে তার সবগুলোকেও পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ দাবি করা যায় না। তাছাড়া রয়েছে জনবলের ঘাটতি। আবার কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে খাবার বরাদ্দ থাকলেও চিকিৎসকদের খাবার আসছে বাইরে থেকেই।

রোববার (৫ এপ্রিল) কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের। সূত্রগুলো বলছে, কোভিড-১৯ রোগী থাকায় এই হাসপাতালটির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ যত কম রাখা যায়, ততই ভালো। কিন্তু চিকিৎসকদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা না থাকায় চিকিৎসকদের কিছু সংগঠন খাবার দিয়ে যাচ্ছে। আর হাসপাতালের পাশের একটি হোটেলে চিকিৎসকদের থাকার ব্যবস্থা আছে।

হাসপাতালের আইসিইউ সেবার বিষয়ে জানতে চাইলে সূত্রগুলো বলছে, আইসিইউ বলতে যে ‘স্ট্যান্ডার্ড’ প্রয়োজন হয়, সেটি এই হাসপাতালে নেই। যেমন— আইসিইউতে রাখা রোগীদের জন্য ব্লাড গ্যাস অ্যানালাজিংয়ের প্রয়োজন হয়। এর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রের দাম খুব বেশি নয়— ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। কিন্তু সেই মেশিন এখানে নেই। আবার পিপিই (পারসোনাল প্রটেকশন ইক্যুইপমেন্ট) পরা থাকায় রোগীকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায় না। সিটি স্ক্যান না হলেও ন্যূনতম এক্সরে করার সুবিধা থাকলে এই সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করা যায়। কিন্তু সেই ব্যবস্থাও হয়নি।

বিজ্ঞাপন

এ তো গেল মানের কথা। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতর এই হাসপাতালে ২৬টি আইসিইউ বেডের যে তথ্য বলছে, তার সঙ্গেও বাস্তবতার মিল পাওয়া যাচ্ছে না। সূত্র বলছে, আইসিইউ বেডের সংখ্যা মাত্র ১০টি। বাকি ১৬টি বেডের কাজ চলছে, যে কাজ শেষ হতে আট থেকে ১০ দিন লেগে যেতে পারে। বর্তমানে দু’জন সংকটাপন্ন রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সূত্র বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে আইসিইউসহ হাসপাতালের চলমান কার্যক্রমে সমস্যা হচ্ছে না। তবে রোগীর চাপ বাড়লে সমস্যায় পড়তে হবে।

হাসপাতালের জনবল নিয়ে জানতে চাইলে একাধিক সূত্র বলছে, হাসপাতালে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর সংকট রয়েছে। সপ্তাহ তিনেক আগেই প্রয়োজনীয় জনবল চেয়ে চাহিদা দেওয়া হলেও তা পূরণ করা হয়নি। একইসঙ্গে আইসিইউ’র মতো সংবেদনশীল জায়গায় প্রশিক্ষিত নার্স প্রয়োজন। তারও ঘাটতি রয়েছে। এভাবেই চলছে এখানে চিকিৎসাব্যবস্থা।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতালে কতজন চিকিৎসক আছেন— জানতে চাইলে একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে রয়েছেন একজন সহযোগী অধ্যাপক, যাকে অন্য একটি হাসপাতাল থেকে পাঠানো হয়েছে। তার সঙ্গে আছেন দু’জন সহকারী অধ্যাপক। এছাড়া ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনে এমডি করা একজন চিকিৎসক আছেন। সব মিলিয়ে ক্রিটিক্যাল কেয়ারে এমডি করা তিন জন চিকিৎসক আছেন। তাদের আইসিইউতে কাজ করার অভিজ্ঞতাও অনেক দিনের। এর বাইরেও অ্যানেসথেসিয়া সংশ্লিষ্ট আরও চার জন চিকিৎসক আছেন। সব মিলিয়ে সাত জন চিকিৎসক আইসিইউতে কাজ করছেন।  আর গোটা হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসক রয়েছেন ৬২ জন। তবে নার্সিং স্টাফের সংকট রয়েছে। ক্লিনিক্যাল অন্যান্য স্টাফের সংখ্যা চালিয়ে যাওয়ার মতো।

হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গেছে, চিকিৎসকদের যাতায়াতের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুবিধা দেওয়া হয়নি। তাদের জন্য একটি আবাসিক হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তারা সেখানেই থাকছেন, খাওয়া-দাওয়া করছেন চিকিৎসক সংগঠনগুলোর সহায়তায়। তবে এখানে আইসোলেশনে থাকা রোগীদের সরকারের পক্ষ থেকে খাবার দেওয়া হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে হাসপাতাল সূত্র।

এ বিষয়ে ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিজের (এফডিএসআর) মহাসচিব ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন সারাবাংলাকে বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে সাধারণ ছুটি চলছে। বেশিরভাগ জায়গাতেই হোটেল কিংবা ক্যান্টিন বন্ধ। যারা এ অবস্থায়ও করোনা আক্রান্ত রোগীদের বিশেষ সেবা দিচ্ছেন, তাদের জন্য আমরা সেবা দিচ্ছি। আমাদের সঙ্গে হিউম্যান এইড নামে একটি সংস্থাও সহযোগিতা করে যাচ্ছ। আমরা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালেও চিকিৎসকদের জন্য খাবার দিচ্ছি।

এতসব সীমাবদ্ধতার ক্ষেত্রেও একটি বিষয়টি নিয়ে সন্তুষ্ট সবাই— পিপিই (পারসোনাল প্রটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট)। সূত্রগুলো বলছে, হাসপাতালে পিপিই’র কোনো সংকট নেই। সবার জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক পিপিই রয়েছে। এই পিপিইগুলো এফডিএ থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত ও ডিসপোজেবল। ফলে এগুলো যারা পরছেন, তাদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।

বিজ্ঞাপন

কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের এসব বিষয় সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. শিহাব উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় এই হাসপাতালে ২৬টি আইসিইউ বেড প্রস্তুত রয়েছে। কেউ যদি ভিন্ন কিছু বলে থাকে, তবে সেটি আসলে আমাকে বলার দরকার নেই। আমি যা বলছি, জেনেই বলছি।

চিকিৎসকদের খাবারের বিষয়টিও সরকারিভাবেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন ডা. শিহাব। তিনি বলেন, ফেসবুকে কত লোকে কত কথা লিখে। সেগুলো কি আমি থামাতে পারি? আমি হাসপাতালের ম্যানেজমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত আছি। এসব নিয়ে মাথা ঘামাই না। যে যা ইচ্ছা বলুক।

হাসপাতালে ২৬টি আইসিইউ বেড প্রস্তুত না থাকা, পোর্টেবল এক্সরে মেশিন বা ব্লাড গ্যাস অ্যানলাইজার না থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আমিনুল হাসানও। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, হাসপাতালে সবকিছুই প্রস্তুত আছে। চিকিৎসকদের খাওয়া-দাওয়ার বিষয়টিও এরই মধ্যে সরকারিভাবেই করা হচ্ছে। ১০ দিন ধরে তারা হোটেলে থাকছেন সরকারি ব্যবস্থাপনাতেই। তাদের যাতায়াতের জন্য তিনটি গাড়ি দেওয়া হয়েছে।

এ সময় ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষ’ ছাড়া অন্য কারও বক্তব্য না শোনারও পরামর্শ দেন ডা. আমিনুল হাসান।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন