বিজ্ঞাপন

‘সেবার মানসিকতা না থাকলে চাকরি থেকে বের করে দেওয়া উচিত’

April 7, 2020 | 11:45 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে যেসব চিকিৎসক রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন না, তাদের প্রতি ক্ষোভ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সেবার মানসিকতা যেসব চিকিৎসকের মধ্যে নেই, তাদের চিকিৎসক হিসেবে নিয়োজিত থাকার যোগ্যতাই নেই।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ১৫টি জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এমন মনোভাবের কথা জানান।

ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নিয়োজিত চিকিৎসকদের প্রশংসা করেন। জীবন বাজি রেখে তারা কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তাদের পুরস্কৃত করারও ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে যেসব চিকিৎসক এই সংকটে চিকিৎসা দেননি, তাদের প্রতি ক্ষোভ জানান তিনি। বলেন, রোগী এলে চিকিৎসা দেবেন না— এই মানসিকতা কেন? রোগী এলে চিকিৎসা দিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমন চাকমা অসুস্থ হয়ে একাধিক হাসপাতালে গেলেও তাকে ভর্তি নেওয়া হয়নি। পরে তিনি চিকিৎসা না পেয়েই মারা যান। এ ঘটনার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোগী যেখানে যেখানে গিয়েছে, সেখানে কোন কোন ডাক্তারের দায়িত্ব ছিল, তাদের নামও জানতে চাই। তাদের চিকিৎসা করার যোগ্যতা নেই। তাদের চাকরি থেকে বের করে দেওয়া উচিত।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার প্রয়োজন আছে। কোভিড-১৯ রোগ নিয়ে ভয় থাকতে পারে। কিন্তু একজন ডাক্তারের দায়িত্ব থাকে রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার। আর তাদের সুরক্ষার জন্য সবকিছু তো দিয়ে যাচ্ছি। দেশে পিপিই তৈরি করছি, বিদেশ থেকে আনছি। এখন তো বিশ্বব্যাপী এই সমস্যা। সেটা তো সবাই জানেন। এর মধ্যেও আমরা চিকিৎসকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। তারপরও কেন চিকিৎসা দেবেন না?

শর্ত দিয়ে কাউকে কাজে আনব না

পরে প্রধানমন্ত্রী করোনা মোকাবিলায় নিয়োজিত সবার জন্য স্বাস্থ্যবিমার ঘোষণা করেন। তবে যারা করোনার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার পর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন, কেবল তাদেরই এই প্রণোদনা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। বিমা দিলে কাজ করবেন— এমন শর্ত দিলে কাউকে কাজে লাগানো হবে না বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার পরও যারা কাজ করেননি, নিজেদের সুরক্ষার জন্য লুকিয়ে আছেন, যেখানে রোগীরা দ্বারে দ্বারে ঘুরে চিকিৎসা পাননি, তাদের জন্য এই প্রণোদনা নেই।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, এখন কেউ যদি শর্ত দেন, প্রণোদনা দিলে কাজে আসব, আমি বলব তার দরকার নেই। আগামীতে দুঃসময় আসছে। সেই দুঃসময়ে আপনারা কিভাবে কাজ করেন, সেটি দেখব। আগামী তিন মাস কী কাজ করেন, সেটি পর্যবেক্ষণ করব। এই সময়ে সত্যি সত্যি মানুষের জন্য সেবা দিলে চিন্তা করব। তবে শর্ত দিয়ে কাউকে কাজে আনব না। যাদের মধ্যে মানবতাবোধ নেই, তাদের প্রণোদনা দিয়ে কাজে আনার যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি না।

প্রয়োজনে দেশের বাইরে থেকে ডাক্তার-নার্স আনব

দেশে যারা চিকিৎসক আছেন, তারা ভয় পেয়ে চিকিৎসা দিলে প্রয়োজনে দেশের বাইরে থেকে চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়ে আসবেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, যদি বাংলাদেশে এরকম দুর্দিন আসেই, প্রয়োজনে বাইরে থেকে আমরা ডাক্তার নিয়ে আসব। বাইরের থেকে নার্স নিয়ে আসব। কিন্তু এই ধরনের দুর্বল মানসিকতা দিয়ে আমাদের কাজ হবে না, এটা হলো বাস্তবতা। কাজেই তারা এখন মিটিং করুক আর শর্ত দিক, ওই শর্তে আমার কিছু আসে যায় না। বরং ভবিষ্যতে তারা ডাক্তারি করতে পারবে কি না, সেই চিন্তা করতে হবে।

তিনি বলেন, ডাক্তার আমাদের প্রয়োজন আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এই মানসিকতা থাকবে কেন? মানবতাবোধ হারাবে কেন? একজন রোগী এলে চিকিৎসা করতে হবে। তার জন্য নিজেকে সুরক্ষিত করা যায়। অ্যাপ্র্যোন পরে নিন, মুখে মাস্ক লাগান, হাতে গ্লাভস পরুন, স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন; কিন্তু রোগী দেখুন, রোগী কেন ফেরত যাবে? আর একজন রোগী দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে সেই রোগী কেন মারা যাবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র কেন মারা যাবে? কাজেই এই রোগী যেখানে যেখানে গিয়েছে, সেখানে কোন কোন ডাক্তারের দায়িত্ব ছিল আমি তাদের নামটাও জানতে চাই। কারণ তাদের ডাক্তারি করার মতো বা চাকরি করবার মতো সক্ষমতা নাই। তাদের বের করে দেওয়া উচিত চাকরি থেকে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন