বিজ্ঞাপন

করোনায় শূন্য কুয়াকাটা, বেহাল দশায় পর্যটননির্ভর পেশাজীবীরা

April 9, 2020 | 8:38 am

মো. মনিরুল ইসলাম, লোকাল করেসপন্ডেন্ট

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী): বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের মতো না হলেও বছরজুড়ে পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে। অথচ সেই কুয়াকাটা এখন জনশূন্য। স্থানীয়রা বলছেন, তাদের জীবদ্দশায় এমন জনমানবহীন পরিস্থিতি দেখেননি তারা। এখন সমুদ্র সৈকতে দাঁড়ালে পুব-পশ্চিমের বালিয়ারি ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ছে না। চিরচেনা কুয়াকাটাকেই যেন চেনা দায়।

বিজ্ঞাপন

কেবল পর্যটক তো নয়, স্থানীয়দের জন্যও যে ঘর থেকে বেরোনো নিষেধ। বাস্তবতা বিবেচনায় এ পরস্থিতি মেনেও নিতে হচ্ছে তাদের। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেভাবে বিস্তার লাভ করতে শুরু করেছে, তা ঠেকাতে এ পরিস্থিতি মেনে না নিয়েই বা উপায় কী! সেটা মেনে নিলেও পেট মানছে না। কারণ পর্যটন ঘিরেই যে এই সমুদ্রকন্যার স্থানীয় বাসিন্দাদের বড় একটি অংশের জীবিকা আবর্তিত হয়। পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ায় সেই জীবিকায় টান পড়েছে। আবাসিক হোটেল থেকে শুরু করে ভাতের হোটেলের মালিক-কর্মচারী তো বটেই, সৈকতে বাদাম বিক্রি করে বেড়ানো কিশোরটাকে পর্যন্ত পাড় করতে হচ্ছে অলস সময়। উপার্জনহীন হয়ে তাদের সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, করোনার আক্রমণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন হোটেল-মোটেল, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ কুয়াকাটায় অবস্থানরত ট্যুর অপারেটররা। বেকার হয়ে পড়েছেন পর্যটনমুখী স্বল্প আয়ের মানুষগুলো।

 

বিজ্ঞাপন

সন্ধ্যার পর জনমানবশূন্য কুয়াকাটা সৈকতে নামলে গা ছম ছম করে। দীর্ঘ সৈকতজুড়ে এখন বিরাজ করছে শুনশান নিরবতা।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ মার্চ পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের নির্দেশে কুয়াকাটায় সৈকতে পর্যটদের চলাচল নিষিদ্ধ করে কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ। বন্ধ করে দেওয়া হয় আবাসিক হোটেল-মোটেলসহ সব বিনোদনকেন্দ্র।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে ওই সময় কুয়াকাটায় অবস্থানরত পর্যটকদেরও যত দ্রুতসম্ভব ফিরে যেতে বলা হয়। একইসঙ্গে সৈকতের সব দোকানপাট সরিয়ে দেওয়া হয়। তখন থেকেই পর্যটকশূন্য কুয়াকাটা। পর্যটকদের ভ্রমণে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় হোটেল-মোটেলসহ খাবার রেস্টুরেন্টগুলেও বন্ধ। ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর সাধারণ মানুষদের চলাচলও সীমিত হয়ে পড়ে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, কুয়াকাটা সমুদ্র উপকূলের জেলেরাও পড়েছেন বিপাকে। সমুদ্রে মাছ ধরা নিষেধ না থাকলেও ক্রেতা সংকটের কারণে মাছের দাম কমে গেছে। বাজারজাত করতে পারছেন না আড়তদারা। যে কারণে কোনো সরকারি নির্দেশনা ছাড়াই অধিকাংশ জেলেরা সমুদ্রে মাছ শিকার বন্ধ রেখেছে। বেকার হয়ে পড়েছেন মৎস্য খাতের সঙ্গে যুক্ত শত শত জেলে ও শ্রমিক।

আবাসিক হোটেল সৈকতের মালিক জিয়াউর রহমান শেখ বলেন, উপজেলা প্রশাসনের নির্দশনার পর আমাদের হোটেল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বেশিরভাগ হোটেলের কর্মচারীদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।

কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, করোনাভাইরাসের কারনে পর্যটনমুখী ব্যবসায়ীরা শত কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ট্যুরিস্ট গাইড, পর্যটননির্ভর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ট্যুর অপারেটররা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ট্যুরিস্টদের ওপর নির্ভরশীল নিম্ন আয়ের মানুষগুলো কর্মহীন হয়ে পড়ায় সংসার চালাবেন কিভাবে, সেই চিন্তাই দূর করতে পারছেন না তারা।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, আমরা জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পরই আবাসিক হোটেল বন্ধ করে দিয়েছি। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কোনো পর্যটককে কুয়াকাটায় আবাসিক সুবিধা না দেওয়ার বিষয়েও জেলা প্রশাসনের নির্দেশ রয়েছে। এমন নির্দেশের বিষয়টি আমরা কুয়াকাটার শতাধিক আবাসিক হোটেলের মালিকদের চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এতে করে আমাদের আয়-উপার্জনের সব পথ যে বন্ধ হয়ে গেছে, তা নিয়েই এখন দুশ্চিন্তা সবার। এ পরিস্থিতি কতদিন থাকবে, ততদিন পর্যন্ত কিভাবে দিন চলবে আমাদের, বুঝতে পারছি না।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন