বিজ্ঞাপন

‘স্বপ্ন দেখি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলবে বাংলাদেশ’

April 11, 2020 | 11:41 pm

জাহিদ-ই-হাসান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: মরণব্যাধী করোনাভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্বই স্থবির হয়ে আছে। বাংলাদেশেও এর ছোবলের দরুণ প্রিমিয়ার লিগ থেকে শুরু করে সকল ঘরোয়া ক্রীড়া টুর্নামেন্ট বন্ধ। এমন থমথমে অবস্থায় দেশের ক্রীড়াবিদদের ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সারাবাংলাডটনেটের ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার আয়োজনে আজকে থাকছেন জাতীয় কাবাডি দলের অধিনায়ক মাসুদ করিম।

বিজ্ঞাপন

রেইডার মাসুদ করিম দেশে নাম কুড়ানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দারুণ সুনাম কুড়িয়েছেন। ভারতে ফ্যাঞ্চাইজিভিত্তিক কাবাডি লিগে পরপর দু’বার খেলেছেন। সবশেষ ইউপি যোদ্ধার হয়ে মাঠ দাঁপিয়েছেন এই রেইডার। ভারতের বিপক্ষে বিশ্ব একাদশেও জায়গা করে নিয়েছিলেন দেশের এই ক্রীড়াবিদ। স্বপ্ন দেখেন বিশ্বকাপের ফাইনালে যাওয়ার। সেটা কিভাবে জানালেন সারাবাংলাকে। সঙ্গে দেশের কাবাডি, নিজের ক্যারিয়ার ভাবনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন এই কাবাডির তারকা খেলোয়াড়।

সারাবাংলাঃ কিভাবে সময় কাটছে এই করোনাক্রান্তিতে?
মাসুদ করিমঃ সারাদিন রুমেই থাকছি। সকালের ফজরের নামাজ পড়ে রুমেই ব্যায়াম করি। টিভি দেখা, খাওয়া-দাওয়া ও নামাজ পড়া এভাবেই সারাদিন কেটে যায়।

সারাবাংলাঃ ফিটনেস ধরে রাখতে কিভাবে চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন?
মাসুদ করিমঃ অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ গেমস বন্ধ হয়ে গেছে। সামনে রোজা। সবমিলে ফিট থাকাটাই চ্যালেঞ্জিং।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলাঃ ফিটনেস ঠিক রাখতে নিজেকে কিভাবে সময় দিচ্ছেন?
মাসুদ করিমঃ প্রতিদিনে এক-দেড় ঘণ্টার মতো সময় দিচ্ছি। ফজরের নামাজের পর আটটা বা সাড়ে আটটা পর্যন্ত ব্যায়াম করছি। বারান্দাতে। বর্তমানে আমরা যারা খেলোয়াড় আছি সবাই মূলত সার্ভিসের। সবাই করোনাভাইরাসের বিপক্ষে রুখে দাঁড়াতে নিজ নিজ সার্ভিসের হয়ে কাজ করছে। এছাড়াও ফিটনেস ধরে রাখছে। আশা করি করোনাক্রান্তি চলে যাওয়ার পর সবাই আবার একত্রিত হয়ে প্রস্তুতি নিতে পারবো।

সারাবাংলাঃ করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাংলাদেশ গেমসসহ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিবেন কিভাবে?
মাসুদ করিমঃ তখন দলগত প্রস্তুতি নিবো। দলের খেলোয়াড়রা থাকবেন। সঙ্গে কোচসহ অফিসিয়ালরা মিলে প্রস্তুতি নিবো। প্রস্তুতিটা আরও ভাল হবে। আসলে একটা গেমসের জন্য মোটামুটি দুই থেকে তিন মাস সময় পেলে আমরা ভালভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবো।

সারাবাংলাঃ বাংলাদেশে অনেকদিন থেকেই একটা ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক কাবাডি লিগ চালু করার কথা ছিল। এ বছর তোরজোড় শুরুও হয়েছিল। মাঝে করোনা কাণ্ড। কি মনে হয় হতে পারে?
মাসুদ করিমঃ যতদূর জানি স্টারস্পোর্টস ও বিশ্বকাপ আয়োজক দেশের পর্যবেক্ষকরা বাংলাদেশে সফর করে গেছেন। স্টেডিয়ামসহ যাবতীয় বিষয় দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। সেটার উপর ভিত্তি করে ফ্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগটা হবে কিনা জানা যাবে। তাছাড়া ফেডারেশনের সেক্রেটারির (হাবিবুর রহমান) প্রবল ইচ্ছা দেখেছি লিগ শুরু করার ব্যাপারে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলাঃ কখনও আলোর মুখ দেখবে বলে মনে হয়?
মাসুদ করিমঃ অবশ্যই সম্ভব। প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। করোনাক্রান্তি হওয়াতে একটু ব্যাকফুটে সবাই। পরিস্থিতি ঠিক হলেই আশা করি দ্রুত হবে। ক্রিকেটে যেমন একজন পাপন সাহেব আছেন কাবাডিতে হাবিব সাহেব আছেন। ক্রিকেটে একদিনেই এই অবস্থায় যায়নি। সময় দিতে হয়েছে। আমাদের কাবাডিতেও হবে। ক্রিকেটের মতো অবস্থানে কাবাডিও চলে যাবে।

সারাবাংলাঃ বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত ফাইনাল খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম দু’বার সেমি থেকে বিদায়। গতবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ। এবার ২০২০ সালের বিশ্বকাপের লক্ষ্যটা কি?
মাসুদ করিমঃ আগে কখনও আমাদের ফিক্সড কোন কোচ ছিলেন না। এবার পুরো কোচিং স্টাফই বিদেশি। বাইরে থেকে ফিজিও, ফিটনেস কোচসহ সবাইকে নিয়ে আসা হচ্ছে। যা ইতোপূর্বে কখন হয়নি। আগে তো টুর্নামেন্টের তিন-চার মাস আগে কোচ থাকতেন আবার চলে যেতে। আশা করছি এবার ভালকিছু হবে।

সারাবাংলাঃ আন্তর্জাতিক লিগে খেলার অভিজ্ঞতা আছে আপনার। ফেডারেশন আপনার কাছ থেকে বা যাদের অভিজ্ঞতা আছে তাদের কাছ থেকে কোনও পরামর্শ নিয়েছেন কিনা?
মাসুদ করিমঃ নাম না বললেই নয়। গাজী সাহেব (গাজী মোজাম্মেল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কাবাডি ফেডারেশন), হাবিব সাহেব (হাবিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক) সবসময় দেখভাল করছেন। বাইরে কোথায় কিভাবে লিগ চলছে, কিভাবে খেলোয়াড় হান্টিং করছে সেগুলো নিজে উপস্থিত থেকে দেখার চেষ্টা করছেন। গত সাউথ এশিয়ান গেমসে আমাদের ক্যাম্পে নিজেরাই গিয়েছেন। পর্যবেক্ষণ করেছেন।

সারাবাংলাঃ বাংলাদেশের লিগগুলো দীর্ঘমেয়াদীভাবে হয় না। এক মাসের মধ্যেই লিগ শেষ করার তাড়া দেখা যায়। এতে কি খেলার মানের ঠিক থাকে?
মাসুদ করিমঃ বাইরের দেশে খেলোয়াড় পর্যাপ্ত। আবার টুর্নামেন্টও পর্যাপ্ত। আমাদের দেশে খেলোয়াড় কম। টুর্নামেন্টও কম। জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড় কম। তাছাড়া বেশিরভাগই সার্ভিসের আওতাধীন। সিভিলের খেলোয়াড় পাওয়া যায় না বেশিরভাগ সময়েই। যে কারণে বড় লিগ করা হয় না সম্ভবত। ভারতের সাত-আট বছর থেকেই কাবাডি খেলে। জাতীয় দলে খেলার আগে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে অভিজ্ঞতা নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। সেই তুলনায় ওইরকম খেলোয়াড় আসছে না। তবে বর্তমানে বয়সভিত্তিক খেলোয়াড়দের পাওয়া যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলাঃ পাইপলাইনে খেলোয়াড় সংকট দেখছেন তাহলে?
মাসুদ করিমঃ আগে ছিল। এখন আস্তে আস্তে কাজ হচ্ছে। আমাদের এখন দুটা দল। সিনিয়র দল। জুনিয়র দল। জুনিয়র দল বিশ্বকাপ থেকে ইরানে তৃতীয় হয়ে ফিরেছে। এখন পাইপলাইন শক্ত। অনূর্ধ্ব-১৭ থেকে সব বয়সের খেলোয়াড় আছে পাইপলাইনে এখন। এরাই জাতীয় দলে ভাল করবে।

সারাবাংলাঃ দেখেন নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখেন। কি স্বপ্ন দেখেন জাতীয় দল নিয়ে?
মাসুদ করিমঃ যেভাবে কাবাডিতে গত দুই তিন বছর ধরে কাজ হচ্ছে তাতে সামনে দারুণ সম্ভাবনা দেখি। ৯০’র দশকে যেমনটা ছিল। সেই লেভেলে চলে যাবো। বিশ্ব যেভাবে এগিয়ে গেছে ওভাবে উঠছি না আমরা তবে স্টেপ বাই স্টেপ আমরাও উঠবো। বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলবো।

সারাবাংলাঃ তরুণদের প্রতি আপনার কোনও পরামর্শ?
মাসুদ করিমঃ বাংলাদেশকে কাবাডি খেলায় এগিয়ে নিতে বা ব্যক্তিগতভাবে উন্নতি করতে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। আমি কি পেলাম বা দেশ আমাকে কি দিল সেটা আমার দেখার বিষয় না। পরিশ্রম করে যাও, আপনা আপনি জায়গা করে নিবা। আমার সহকর্মীদের প্রতি একই আহ্বান থাবে আমার। এই মুহূর্তে সকলে করোনা প্রতিরোধে কাজ করুন এবং পাশের অসহায় মানুষদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।ইনশাআল্লাহ আমরা আবার খেলার মাঠে ফিরব এবং দেশকে সামনে দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। আমি কি পেলাম কি পেলাম না এসব দেখার বিষয় না।

সারাবাংলা/জেএইচ

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন