বিজ্ঞাপন

বিএনপি জোটে দাপুটে অবস্থান এলডিপির!

March 1, 2018 | 5:19 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: খালেদা জিয়ার কারাবন্দির পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ২০ দলীয় জোটে দাপুটে অবস্থান নিয়েছে ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের হাতে অলি আহমেদ এরইমধ্যে ধরিয়ে দিয়েছেন এলডিপির ৩০ প্রার্থীর নামের তালিকা। যারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন আসনে এলডিপি মনোনীত জোটপ্রার্থী হিসেবে লড়তে আগ্রহী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জামায়াতের নিস্ক্রিয়তা ও ইসলামী ঐক্যজোট ২০ দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর বিএনপি জোটের দ্বিতীয় বৃহৎ শক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করার জন গত দুই বছর ধরে সংগঠন শক্তিশালী করার কাজ অব্যাহত রেখেছিল এলডিপি। প্রয়োজন ছিল কেবল নিজেদের সাংগঠনিক যোগ্যতা প্রমাণের জন্য একটি প্লাটফর্ম। খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর সেই প্লাটফর্ম পেয়ে যায় এলডিপি।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া রায় শুনতে যাওয়ার সময় তার গাড়িবহর ঘিরে ব্যাপক শো-ডাউন করে এলডিপির নেতা-কর্মীরা। দলটির চেয়ারম্যান অলি আহমেদ বীর বিক্রম ও মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদের নির্দেশে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম কয়েক শ’ নেতা-কর্মী নিয়ে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে যোগ দেন।

বিজ্ঞাপন

রায়ের পর প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে দলটি। বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধন, গণঅবস্থান, প্রতীকী অনশন, গণস্বাক্ষরসহ বিএনপি ঘোষিত প্রায় সব কর্মসূচিতে কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ বীর বিক্রম, শাহাদাত হোসেন সেলিমসহ এলডিপির শীর্ষ নেতারা নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। দলীয় ব্যানারে এরইমধ্যে পালন করেছেন বেশ কয়েকটি কর্মসূচি।

কিন্তু এইসব কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের অসৌজন্যমূলক আচরণে ক্ষুব্ধ হন কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ। অভিযোগ ওঠে, ১৭ ফেব্রুয়ারি দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে অলি আহমেদ নয়াপল্টনে খালেদা জিয়ার জন্য গণস্বাক্ষর করতে  গেলে  বিএনপি নেতাদের কাছ  থেকে যথাযথ মর্যাদা পাননি।

এর পর ২০ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে এলডিপির ছাত্র সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রদল খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ সভা ডাকে। এ প্রোগ্রামের খবর বিএনপিকে আগে-ভাগে জানানোর পরও একই সময় পাশের একটি কক্ষে এনপিপির প্রোগ্রামে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফলে ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ কাঙ্ক্ষিত মিডিয়া কাভারেজ থেকে বঞ্চিত হন।

বিজ্ঞাপন

ওই প্রোগ্রামেই বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম। পরে ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রেস ক্লাবে আয়োজিত আরেকটি প্রোগ্রামে অলি আহমেদ বলেন, ‘আমরা মনে করি বিএনপি সঠিক পথে এগোচ্ছে না। আগে থেকে জানানোর পরও সেদিন এলডিপির প্রোগ্রামের পাশেই বিএনপি আরেকটি প্রোগ্রাম আয়োজন করেছে— এটা ঠিক নয়।

সূত্রমতে, ২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ওই বক্তব্যের পর রাতেই কর্নেল (অব.) অলির মহাখালী ডিওএইচএস’র বাসায় যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সন্ধ্যা থেকে রাত ১১ টা পর্যান্ত অলির সঙ্গে বৈঠক করেন ফখরুল। তার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করেন তিনি। আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম, নির্বাচন ও আসন বণ্টন নিয়েও আলোচনা হয় সেখানে।

ফখরুলের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি স্বীকার করে ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম সারাবাংলাকে বলেন, ‘হ্যাঁ, উনি আমার ওখানে গিয়েছিলেন। সেখানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায়, অন্যান্য দলগুলো নিয়ে কীভাবে যুগপৎ আন্দোলন করা যায়— সেই বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ওই বৈঠক থেকেই কর্নেল অলি আগামী নির্বাচনে তার দলের সম্ভব্য ৩০ প্রার্থীর তালিকা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীকে দেন। জোটের প্রধান সমন্বয়ককে তিনি অবহিত করেন, সারা দেশে অন্তত ১ শ’টি আসনে নির্বাচন করার জন্য তার দল এলডিপি প্রস্তুত রয়েছে। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করলে এদের মধ্য থেকে অন্তত ৩০জনকে মনোনয়ন দিতে হবে।

ওই ত্রিশ জনের তালিকায় রয়েছেন এলডিপির চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম (চট্টগ্রাম-১৪), মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ (কুমিল্লাহ-৭), প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল করিম আব্বাসী (নেত্রকোণা-১), অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোহম্মদ খলিলুর রহমান (জয়পুরহাট -২), প্রফেসর মোহম্মদ আব্দুল্লাহ (চাঁদপুর-৩), আব্দুল গণি (মেহেরপুর-২), সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম (লক্ষ্নীপুর-১), প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. কামালউদ্দিন মোস্তফা (মাগুরা-১), ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম ভুঁইয়া (ব্রাহ্মণ বাড়িয়া-৫), ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নুরুল আলম (চট্টগ্রাম-৭), উপদেষ্টা মো. আবু জাফর সিদ্দিকী (ময়মনসিংহ-২), ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নেয়ামুল বশির (চাঁদপুর-৫), যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দীন চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৬), ড. জহিরুল হক (ঝালকাঠি-১), সাংগঠনিক সম্পাদক এম. এ বাশার (ময়মনসিংহ-৮), শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. এয়াকুব আলী (চট্টগ্রাম-১২), ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. হামিদুর রহমান (ময়মনসিংহ-৯), অ্যাডভোকেট চৌধুরী এম এ খাইরুল কবির পাঠান (নেত্রকোণা-৫), যুগ্ম মহাসচিব তমিজ উদ্দীন টিটু (ঢাকা-৫), উপদেষ্টা অধ্যাপিকা কারিমা খাতুন (বগুড়া-১), সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপিকা তপতী রানী কর (ময়মনসিংহ-৬), সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল আনোয়ার (ঝালকাঠি-২), উপদেষ্টা শফিউল আলম ভূঁইয়া (চট্টগ্রাম-১), অ্যাডভোকেট মোবারক হোসেন (টাঙ্গাইল-৪), যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান (বগুড়া-৩), প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান (মাদারীপুর-২), সালাহ উদ্দীন রাজ্জাক (গোপালগঞ্জ-১), মোস্তফা কামাল চৌধুরী (নওগাঁ-১) ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান রূপা (সুনামগঞ্জ-৩)।

তবে খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় এখনই আসন ভাগা-ভাগি নিয়ে জোট শরিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি নয় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চায় জোটের দ্বিতীয় বৃহৎ দল এলডিপি। দলটি মনে করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হলে আগামী জুলাই থেকেই মাঠে নেমে পড়তে হবে সবাইকে। সেক্ষেত্রে তারা বিএনপির কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক আসন না পেলে অন্য কিছু চিন্তা করবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘নেত্রীর মুক্তির আন্দোলন এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি এক সঙ্গেই চালাতে হবে। আমরা তো শুধু আন্দোলনের জন্য জোটবদ্ধ হইনি। আমাদের লক্ষ্য নির্বাচনও। সুতরাং কালক্ষেপণ করলে চলবে না। নির্বাচন নিয়ে এখনই কথা বলতে হবে।’

সারাবংলা/এজেড/জেডএফ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন