বিজ্ঞাপন

অন্তত ৬ মাস পিছিয়ে যাচ্ছে পদ্মাসেতু

May 9, 2020 | 8:27 am

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আগামী বছরের জুনে পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে এই সেতুর কাজ। ফলে কাঙ্ক্ষিত সময়সীমার মধ্যে এর কাজ শেষও হবে না। সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, অন্তত ছয় মাস দেরি হবে এই সেতুর কাজ শেষ হতে। সে হিসাবে আগামী বছরের জুনের পরিবর্তে ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হতে পারে পদ্মাসেতুর কাজ। যদিও এ বিষয়ে সরকারিভাবে পদ্মাসেতু চালু বিষয়ক কোনো ‘ডেডলাইন’ এখনো ঘোষণা করা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

২০১৪ সালে নির্মাণ শুরুর পর বলা হয়েছিল, চার বছরে শেষ হবে সেতু নির্মাণ। সে হিসেবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পদ্মার বুকে খুঁটি স্থাপনে জটিলতা দেখা দেওয়ায় একবছর পিছিয়ে যায় কাজ। এরপর গত বছর সরকার জানায়, ২০২১ সালের জুনে সেতুর কাজ শেষ হবে। তখনই সেতুতে একসঙ্গে সড়ক ও রেলপথ চালু করা হবে।

পদ্মাসেতু প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে কাজ বন্ধ হয়নি পদ্মাসেতুর। কিন্তু গতি কমেছিল। দেড়মাস বন্ধ ছিল নাইট শিফটের কাজ। গত সপ্তাহ থেকে অবশ্য রাতের শিফটের কাজ শুরু হয়েছে।

পদ্মাসেতুর মূল অবকাঠামো প্রকল্পের একজন একজন কর্মকর্তা জানান, করোনা সংকটে দেরির বড় কারণ নির্ধারিত সময়ে স্প্যান না আসা। চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে চীন থেকে যে দু’টি স্প্যান দেশে আসার কথা ছিল, সেগুলো এখনো আসেনি। চীনে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এপ্রিলে সেই স্প্যান বাংলাদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। এখন বাকি থাকা দু’টি স্প্যান চীন থেকে জাহাজে উঠানো হচ্ছে। মে মাসের মধ্যেই স্প্যান ‍দুইটি বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে।

বিজ্ঞাপন

পদ্মাসেতু প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, পরিকল্পনা ছিল মাচে্র্যর মধ্যে সবগুলো খুঁটি বসানো হবে। আর জুলাইয়ের মধ্যে সবগুলো স্প্যান বসানোর কাজ শেষ করব। এর মধ্যে খুঁটি বসানোর কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হলেও চীন থেকে স্প্যান না আসায় এখন কাজ কিছুটা পিছিয়েছে।

সেতু ভবনের একজন কর্মকর্তা বলেন, এখন পদ্মাসেতুর আর ১২টি খুঁটি বসানোর কাজ বাকি আছে। ধারণা করছি, এই স্প্যানগুলো বসানোর কাজ শেষ হতে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস চলে আসবে। এর ওপর আবার শুষ্ক মৌসুমে কাজে নাব্য সংকটের যে বাধা আসে, সেটিও রয়েছে। এজন্য জাজিরার দিকে যে দু’টি স্প্যান এখনো বসানো হয়নি, সেগুলো আগে বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এদিকে পদ্মাসেতুতে একইসঙ্গে রেল চালুর ঘোষণা দেওয়া থাকলেও রেলপথের কাজ অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। পদ্মাসেতুর দুই পাশে রেলপথের কাজের অগ্রগতি এখনো ২৫ শতাংশও নয়।

বিজ্ঞাপন

পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প পরিচালক জানান, ঢাকা থেকে পদ্মাসেতু পর্যন্ত রেলপথ একসঙ্গে চালু হবে না। শুধু ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত পদ্মাসেতু পাড়ি দেবে রেলপথ। এ অংশে পদ্মাসেতুর চালুর দিন ট্রেন চালানো যাবে। রেলসংযোগ পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হতে আরও দুই থেকে তিন বছর লাগবে।

পদ্মাসেতুর তথ্য

স্বপ্নের পদ্মাসেতু নির্মাণ করতে গিয়ে প্রমত্তা পদ্মার বুকে খুঁটি বসাতে হয়েছে ৪০টি। এর ১৮টিতে ছয়টি করে পাইল সাজিয়ে খুঁটি নির্মাণ করা হয়েছে। আর ২২টি খুঁটিতে সাতটি করে পাইল গাঁথা হয়েছে। দুই পাড়ে রয়েছে মূল সেতুর আরও দু’টি খুঁটি। সব মিলিয়ে ৪২টি খুঁটির ওপর বসছে পদ্মাসেতু। তবে সড়কের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে দুই পাশের আরও অনেক খুঁটিই রয়েছে। সব মিলিয়ে পদ্মাসেতুতে খুঁটির সংখ্যা ১৩৩টি।

মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। তবে দু’পাশে সড়কের সঙ্গে সংযোগ মিলিয়ে সেতুটি সাড়ে ৯ কিলোমিটার লম্বা।

বিজ্ঞাপন

এই সেতু তৈরিতে যে পাথর ব্যবহৃত হচ্ছে, তার একেকটির ওজন এক টন। পাথরগুলো ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পাকুর নামক স্থান থেকে আনা হয়েছে। এসব পাথর এত ভারী ও বড় যে মাত্র ১৫ টুকরো পাথরে ভরে যায় একটি বড় ট্রাক।

পদ্মাসেতুর সড়কপথ হবে চার লেনের। প্রস্থ ২২ মিটার। নিচে যে রেললাইন থাকছে, সেটি সিঙ্গেল লাইন। তবে মিটারগেজ ও ব্রডগেজ— দুই ধরনের ট্রেন চলার উপযোগী পথই থাকবে এই সেতুতে।

পদ্মাসেতুর একেকটি খুঁটি ৮০ মিটার থেকে থেকে ১২২ মিটার গভীরে নেওয়া হয়েছে। নদী তলদেশে এর কাঠামো এতই শক্তিশালী যে এর একেকটি কাঠামো ৪০ তলা ভবনের সমান। এক খুঁটি থেকে আরেক খুঁটির দূরত্ব ১৫০ মিটার। সে হিসাবে একেকটি স্প্যানও ১৫০ মিটার লম্বা। দুই প্রান্তের দুইটিসহ মোট ৪২টি খুঁটির ওপর বসবে এমন ৪১টি স্প্যান।

পদ্মাসেতুতে ৪১টি স্প্যানের মধ্যে এখন পর্যন্ত বসেছে ২৯টি স্প্যান। এর মধে ১৮টি বসেছে শরিয়পুরের জাজিরা প্রান্তে। এ প্রান্তে আর দুইটি স্প্যান বসানো বাকি। বাকি স্প্যানগুলোর মধ্যে মাদারীপুরে বসানো হয়েছে একটি, মাওয়া প্রান্তে ১০টি।

সরকারের সেতু কর্তৃপক্ষ সচিব বেলায়েত হোসেন সারবাংলাকে জানিয়েছেন, পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৮৭ শতাংশ। নদীশাসন কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭১ শতাংশ। আর সার্বিক অগ্রগতি ৭৯ শতাংশ।

সারাবাংলা/এসএ/টিআর     

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন