বিজ্ঞাপন

 মা দিবসে নির্যাতনের শিকার ৪ সন্তানের জননী

May 11, 2020 | 2:08 am

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

নোয়াখালি: মা দিবসে যখন সারা বিশ্বে চলছে মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন আর কৃতজ্ঞতা জানানো, এমনই দিনে নির্যাতনের শিকার হতে হল একজন মাকে। চার সন্তানের জননী এই নারীর বাড়ি নোয়াখালি সদরর চরমটুয়া ইউনিয়নে। স্বজনদের অভিযোগ, নির্যাতনের ঘটনায় প্রশাসনের কোন সহযোগিতা পায়নি তারা।

বিজ্ঞাপন

নির্যাতিতার বড় সন্তান মোঃ রুবেল (২২) সারাবাংলাকে বলেন, রোববার (১০ মে) সকাল দশটার দিকে তাদের বাড়ির থেকে অল্প দূরত্বেই তার নানার বাড়ি যাওয়ার পথে তিন নারী ও এক পুরুষ মিলে তার মাকে আড়মোড়া করে ধরে মারধোর করে। পরে তারা তার চুল কেটে দেয় ও সারা শরীরে লবণ ও মরিচ মেখে দেয়। খবর পেয়ে দৌড়ে যেয়ে দেখেন তার মা রাস্তায় পড়ে আছেন এবং সেখানে উপস্থিত কেউ কোন প্রতিবাদ বা তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করেননি। পূর্ব শত্রুতার জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন তিনি।

দিনের শুরুতে আরও একটি ঘটনার উল্লেখ করে রুবেল বলেন, ‘সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মা উঠানে বের হয়ে দেখে ঘন্টাখানেক আগে যত কাপড় রোদে দিয়েছে, সবগুলো কেটে দু’ভাগ করে ফেলে রাখা। এটা দেখে মা হতবাক হয়ে যায়। আমরা তখনও ঘুমাচ্ছিলাম। পরে মায়ের ডাকাডাকিতে বেরিয়ে ঘটনা দেখে আমরাও অবাক হই। কিন্তু এ কাজ কে করেছে তা ভেবে পাচ্ছিলাম না।’

সকালের এই ঘটনা নিয়ে খোঁজখবর নিতেই ভদ্রমহিলা তার বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন বলে জানান তার ছেলে। তখনই পথের মধ্যে আক্রমণের ও নির্যাতনের শিকার হন তিনি। এময়ের নারীটির চিৎকারে আশপাশের মানুষ ছুটে আসলেও আক্রমণকারীদের হাতে দেশিয় অস্ত্র থাকায় কেউ কাছে যেতে সাহস করেনি। ইব্রাহীম নামের স্থানীয় একজন যেয়ে তাদের হাত থেকে নারীটিকে উদ্ধার করেন। রুবেলের অভিযোগ, নির্যাতনকারীরা যাওয়ার সময় এই ঘটনা নিয়ে থানায় মামলা বা অভিযোগ করতে নিষেধ করেছে। এমন কিছু ঘটলে তারা প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ঘটনার জন্য রুবেল নির্যাতক পুরুষকে আবু জাফরের ছেলে আরিফের কথা বলেন। অপর তিন নারীর পরিচয় তিনি জানেন না।

রুবেল অভিযোগ করেন, এ ঘটনার পর ৯৯৯ এ কল দিলে সুধারাম থানা থেকে এসআই জয়নাল এসে তাকে নিয়ে আরিফদের বাসায় যায়। কিন্তু সেখানে যেয়ে আরিফকে না পেয়ে তার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে থানায় ফিরে যান এসআই জয়নাল। এরপর তার মাকে নোয়াখালি সদর হাসপাতালে ভর্তি (বেড-২৭, ওয়ার্ড-৩) করে থানায় ফিরে মামলা করতে চাইলে মামলা নিতে অস্বিকৃতি জানায় জানিয়েছে ওসি নবীর হোসেন। তারা সোমবার (১১ মে) দুই পক্ষের সঙ্গে বসে মিটমাট করার কথা বলেন।

চরমটুয়ায় নারী নির্যাতনের ঘটনার কোন অভিযোগ পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নবীর হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, না এমন কোন অভিযোগ তারা পাননি। কিন্তু তাকে যখন বলা হয় ভিকটিমের সঙ্গে তার থানার এসআই জয়নাল ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। সেটি কেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘অহ এটা তো নারী নির্যাতনের ঘটনা না। এটা তো মেয়েলি একটা ঘটনা। তাদের পারিবারিক দ্বন্দ। এক বছর আগে এক পক্ষের মেয়ে নিয়ে গেছে অন্য পক্ষের ছেলে। এটা নিয়ে উভয় পক্ষ চুল টানাটানি করছে। এটা তো ছোটখাটো ঘটনা। এটা আবার নারী নির্যাতন হয় কেমনে। এরকম ঘটনা দিনে আট দশটা ঘটে।’

বিজ্ঞাপন

কিন্তু ভিকটিমের অভিযোগ সেখানে চুল টানাটানির ঘটনা নয়, মারধর করে চুল কেটে আঘাতের স্থানে মরিচের গুড়া দেওয়া হয়েছে। জবাবে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এক পক্ষে কথা বললে হবে নাকি।’

ভিকটিমদের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাত সোয়া ১১ টার দিকে নোয়াখালীর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আলমগীর হোসেন বলেন, ‘নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্নেই আসে না। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। এসময় তিনি এ প্রতিবেদকের কাছ থেকে ভিকটিমের তথ্য সংগ্রহ করেন।’

এই ঘটনার পেছনে পারিবারিক পূর্বশত্রুতার জের থাকার কথা বলেন রুবেল। বছর খানেক আগে আরিফের ভাই সাইফুল ইসলাম রিয়াদ ও রুবেলের বোন প্রেম করে নিজেরাই বিয়ে করে। এ বিয়ে দুই পরিবার থেকে মেনে নেয়নি। কিন্তু ঘটনার মাস তিনেক পর তারা দু’জনে রুবেলদের বাড়ি আসলে প্রথমে মেনে না নিলেও পরে মেনে নিয়েছে পরিবার। তাদেরকে মেনে নেওয়ার সপ্তাহখানেক পরেই আরিফের বাবার নির্দেশে ২০ জনের সন্ত্রাসী বাহিনী এসে রুবেলদের বাড়ি থেকে তাদের ছেলেকে নিয়ে যায় ও শেকল পরিয়ে আটকে রাখে বলে অভিযোগ করেন রুবেল। পরে রিয়াদ কোনভাবে মুক্তি পেয়ে আবারও রুবেলের বোনের সঙ্গে পালিয়ে আলাদা থাকতে শুরু করে। তারপর থেকেই রুবেলদের পরিবারকে নানা ধরণের হুমকি দেওয়া হত বলে অভিযোগ করেন তিনি। সেই ঘটনার জেরেই তার মায়ের উপর হামলা হয়েছে বলে মনে করেন রুবেল।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসটিএইচ/আরএফ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন