বিজ্ঞাপন

তথ্য গোপন করে রোগী ভর্তি ঝুঁকি বাড়িয়েছে ঢাকা মেডিকেলের

May 11, 2020 | 12:12 pm

সৈয়দ সোহেল রানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: গত ৯ দিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ৯১ জন রোগী। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন করোনা শনাক্ত হওয়া রোগী আছেন। বাকিরা সাসপেকটেড। এমন পরিস্থিতি ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে দেশের বৃহত্তম এ হাসপাতালের।

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় হাসপাতালের আগাম প্রস্তুতি থাকলেও এই ঝুকি কেন? জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন জানান, দেশে করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর পরেই আমাদের হাসপাতালে অনেক রোগী এসেছিলেন। সেইসব রোগী তথ্য গোপন করার কারণে ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়রা তাদের সংস্পর্শে এসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পরে সেইসব রোগীকে পরীক্ষা করে দেখা যায় তারা করোনা পজিটিভ।

পরিচালক জানান, প্রথম দিকে রোগীরা তথ্য গোপন করার কারণে তাদের সংস্পর্শে এসেই আমাদের হাসপাতালে ডাক্তার, নার্সসহ অনেকেই আক্রান্ত হয়েছে। আমাদের হাসপাতালে এখন পর্যন্ত করোনায় আনুমানিক ২০ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছে।

তিনি আরও জানান, হাসপাতালে জেনারেল আইসিইউতে শনিবার দুইজন নার্স, একজন ওয়ার্ড বয় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। যারা আক্রান্ত হয়েছে তারা সম্পূর্ণ পরিপূর্ণ সুরক্ষা সামগ্রী পরে ডিউটি করছিলেন। তারপরও তারা আক্রান্ত হয়েছেন। নতুন করে যারা আইসিউতে ছিলেন তাদেরকে হোম আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এক প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, ‘রোগীর সংস্পর্শে নার্সদের একটু বেশিই যেতে হয়। চিকিৎসকরা রাউন্ড দিয়ে চিকিৎসাপত্রে ওষুধ লিখে দেন। পরবর্তী সব কাজ নার্স ও ওয়ার্ডবয়দের করতে হয়। এখন তো অনেকেই ভয়ে তাদের কাছে যেতে চান না।’

হাসপাতালে আগে থেকেই কর্মচারীর সংখ্যা কম। ডেইলি বেসিকে অনেক কর্মচারী নেওয়া হয়েছিল। বার্ন ইউনিট কোভিড-১৯ ঘোষণা হওয়ার পর অনেকেই আসে না। ডেইলি বেসিকে আরো কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানান পরিচালক।

রোববার রাতে কথা হয় বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (ঢামেক শাখার) সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান জুয়েলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রোববার পর্যন্ত আমাদের হাসপাতালে ৭৯ জন নার্স কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১১ জন হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন। দুইজন আছেন কুয়েত মৈত্রী হাসপাতার আর বাকিরা হোম আইসোলেশনে আছেন।’

বিজ্ঞাপন

জুয়েল বলেন, ‘সুরক্ষা সামগ্রী পর্যাপ্ত না থাকায় অনেক সাধারণ ওয়ার্ডে এক পোশাক একাধিকবার পরতে হয়। এ কারণে সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এ ব্যাপারে শুরু থেকেই পরিচালক মহোদয়কে বারবার বলেছি। তিনিও যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। নতুন কোভিড-১৯ হাসপাতালেও চিকিৎসকদের চাইতে নার্সদের কাজ করতে হয় বেশি। এভাবে যদি স্থানীয়রা আক্রান্ত হন তাহলে পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর্মী পাওয়া কষ্টকর হয়ে যাবে।’

ঢামেক হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি আবু সাঈদ জানান, করোনাভাইরাস শুরুর পর থেকে এই পর্যন্ত আমাদের ১৫ জনের বেশি কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (৭মে) সুফিয়া আক্তার (৪৫) নামের এক কর্মচারী করোনাভাইরাসে মারা গেছেন।

তিনি আরও জানান, হাসপাতাল থেকে যে সুরক্ষা সামগ্রী আমাদের দেওয়া হচ্ছে সেগুলো পর্যাপ্ত নয়। এ কারণে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

ঢামেকের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুর রব জানান, করোনা প্রাদুর্ভাব শুরু থেকে রোববার পর্যন্ত ছয়জন টেকনোলজিস্ট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে একজন এক্স-রে বিভাগে ডিউটি করতেন ও বাকিরা প্যাথলজি বিভাগের। তারা হোম আইসোলেশনে আছেন।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা মেডিকেল বার্ন ইউনিট নতুন কোভিড-১৯ হাসপাতালের ওয়ার্ড মার্স্টার মোহাম্মদ রিয়াজ জানান, গত ২ মে থেকে ১০ মে রাত ১১টা পর্যন্ত নতুন কোভিড-১৯ হাসপাতালে মারা গেছে ৯১ জন। এর মধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল ৭ জন। বাকিরা সাসপেক্টেড।  গত ২ মে শুরু হয় বার্ন ইউনিটে রোগী ভর্তির কার্যক্রম। সেদিন ভর্তি শুরু হতে না হতেই মারা যায় একজন। এরপর থেকে বাড়তেই থাকে মৃত্যুর হার। গত ৩ মে মারা যায় ১২ জন, ৪ মে মারা যায় ১৩ জন, ৫ মে মারা যায় ১০ জন, ৬ মে মারা যায় ১০জন, ৭ মে মারা যায় ১০ জন, ৮ মে মারা যায় ১৫ জন, এবং ৯ মে মারা যায়, ১১ জন এবং ১০ মে মারা যায় ৯ জন।

ওয়ার্ড মাস্টার মোহাম্মদ রিয়াজ আরও জানান, বর্তমানে  হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছে ১৯৫ জন। এর মধ্যে আইসিউতে আছে ১০ জন। গত ২ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত রোগী ভর্তি হয়েছিল প্রায় ৬০০ জন। অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে বাসায় গেছেন। আবার অনেকেই হাসপাতালের কাউকে কিছু না বলে পালিয়ে গেছে।

ওয়ার্ড মাস্টার রিয়াজ জানান, হাসপাতালে আউট সোর্সিং ও ডে লেবার দিয়েই কাজ চলছে। এর মধ্যে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আবার কেউ ভয়ে কাজে আসছেন না। বর্তমানে ১৩ জন লোক নিয়ে কাজ করছি। এভাবে তো কাজ করা সম্ভব না। চিকিৎসক নার্সরা এক সপ্তাহ কাজ করে ১৪ দিন কোয়ারেনটাইনে থাকেন। জনবল সংকটের কথা হাসপাতালের পরিচালককে জানানো হয়েছে।

সারাবাংলা/এসএসআর/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন