বিজ্ঞাপন

জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান আর নেই

May 14, 2020 | 5:28 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জাতীয় অধ্যাপক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান আর নেই। বৃহস্পতিবার (১৪ মে) বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসাপাতালে (সিএমএইচ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

ড. আনিসুজ্জামানের সন্তান আনন্দ জামান সারাবাংলাকে বাবার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুন- ‘শিক্ষক’ আনিসুজ্জামানের প্রয়াণে প্রধানমন্ত্রীর শোক

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, বিকেলে আব্বার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। এ অবস্থায় তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিট থেকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যার কারণে গত ২৭ এপ্রিল রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয় ড. আনিসুজ্জামানকে। ভর্তির পর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হতে থাকে। গত ৫ মে হাসপাতালের পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী সারাবাংলাকে জানান, তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল

আরও পড়ুন- আনিসুজ্জামানের মৃত্যু বাংলাদেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি: রাষ্ট্রপতি

পরে গত ৯ মে পরিবারের ইচ্ছায় ড. আনিসুজ্জামানকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতেও বার্ধক্যজনিত কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ড. আনিসুজ্জামান। ওই সময় তাকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন- ড. আনিসুজ্জামানের মৃত্যুতে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর গভীর শোক

এক নজরে আনিসুজ্জামান

শিক্ষাবিদ ও লেখক ড. আনিসুজ্জামানের জন্ম ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে তার গবেষণা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য।

কলকাতার পার্ক সার্কাস হাইস্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু ড. আনিসুজ্জামানের। পরে তার পরিবার বাংলাদেশে চলে এলে খুলনা জেলা স্কুলে ভর্তি হন। একবছর পরই আবার পরিবারের সঙ্গে চলে আসেন ঢাকায়। প্রিয়নাথ হাইস্কুলে (পরবর্তী সময়ে নবাবপুর গভর্নমেন্ট হাইস্কুল) ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে ম্যাট্রিক বা প্রবেশিকা পাস করেন তিনি। ১৯৫৩ সালে আইএ পাস করেন জগন্নাথ কলেজ থেকে।

বিজ্ঞাপন

উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি)। বাংলা বিভাগে ভর্তি হন তিনি। ওই সময় ঢাবি বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। আরেক শিক্ষাবিদ শহিদ মুনীর চৌধুরীও তার শিক্ষক ছিলেন। এই বিভাগ থেকেই স্নাতকের পর প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন আনিসুজ্জামান।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে করে গবেষণা বৃত্তি নিয়ে বাংলা একাডেমিতে যোগ দেন ড. আনিসুজ্জামান। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই শিক্ষক স্বল্পতার কারণে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর শিক্ষকতা আর গবেষণা— দুটিই সমানতালে চালিয়ে গেছেন তিনি।

ব্যক্তিগতভাবে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ছাড়াও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ইমেরিটাস অধ্যাপক। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক ছাড়াও সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। ভারত সরকারের দেওয়া তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ পদকও পেয়েছেন। এছাড়াও আনন্দবাজার পত্রিকার দেওয়া আনন্দ পুরস্কার, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট. ডিগ্রি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী পদক লাভ করেন ড. আনিসুজ্জামান। ২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়।

ড. আনিসুজ্জামানের গবেষণা গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য— মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য (১৯৬৪), মুসলিম বাংলার সাময়িকপত্র (১৯৬৯), স্বরূপের সন্ধানে (১৯৭৬), আঠারো শতকের বাংলা চিঠি (১৯৮৩), পুরোনো বাংলা গদ্য (১৯৮৪), Creativity, Reality and Identity (1993), Identity, Religion and Recent History (1995), আমার একাত্তর (১৯৯৭), মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর (১৯৯৮), আমার চোখে (১৯৯৯)। একক ও যৌথভাবে বহু গ্রন্থ সম্পাদনাও করেছেন।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন