বিজ্ঞাপন

৬০ শতাংশ বেতন নিয়ে ক্ষুব্ধ পোশাককর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

May 14, 2020 | 9:40 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় ফোর এইচ গ্রুপের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। ৬০ শতাংশ বেতন দেওয়ার ঘোষণায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠা শ্রমিকদের দেওয়া সড়কে ব্যারিকেড তুলতে গিয়ে পুলিশ তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। এসময় কারখানায় ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।

বিজ্ঞাপন

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশের ছোঁড়া গুলি ও কাঁদানে গ্যাসে অন্তত ১০ শ্রমিক আহত হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, শ্রমিকদের ছোঁড়া ইট-পাটকেলে তাদেরও অন্তত ১০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। এছাড়া শ্রমিকরা যানবাহনও ভাঙচুর করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কারখানা ছুটি ঘোষণা করে শ্রমিকদের বের করে দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (১৪ মে) বিকেলে হাটহাজারী উপজেলার নতুনপাড়া এলাকায় ফোর এইচ গ্রুপের ফোর এইচ লিংগেরি লিমিটেড নামে একটি কারখানায় এসব ঘটনা ঘটেছে। একই কারখানার শ্রমিকরা সকালেও প্রায় চার ঘণ্টা কারখানার সামনে ও পরে সড়কে গিয়ে বিক্ষোভ করেন।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাসুম সারাবাংলাকে বলেন, ‘কারখানাটিতে দুই শিফটে কাজ হয়। সকালে একদফা শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পুলিশ গিয়ে তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। বিকেলে আবারও কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে পুলিশ তাদের সরে যেতে বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা পুলিশ ও যানবাহনের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। তবে হাটহাজারী থানা ও শিল্প পুলিশ মিলে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শ্রমিকরা বাসায় ফিরে গেছেন।’

বিজ্ঞাপন

পুলিশ সূত্র জানায়, কারখানাটিতে সকালের শিফট হচ্ছে ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১টা এবং বিকেলের শিফট দুপুর দেড়টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। সকালের শিফটে শ্রমিক আছে ১১৪৪ জন, বিকেলের শিফটে ১১৬৩ জন। সকালে প্রায় ৫০০ শ্রমিক এবং বিকেলে প্রায় ৯০০ শ্রমিক বিক্ষোভে অংশ নেন।

কারখানার সুইং সেকশনের সিনিয়র অপারেটর সুলতানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ২১ এপ্রিল আমাদের কারখানা খুলে দিয়েছে। আমরা সবাই কাজে যোগ দিয়েছি। আজ (বৃহস্পতিবার) আমরা দুপুর দেড়টায় কারখানায় কাজে যোগ দিই। তখন আমরা জানতে পারি, আমাদের এপ্রিল মাসের ৬০ শতাংশ বেতন দেওয়া হবে। আমি আরও ৯ জনকে নিয়ে প্রোডাকশন ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করি। তিনি আমাদের কথা ভালোভাবে শুনতেই চাননি। ২টার দিকে আমরা কারখানা থেকে বেরিয়ে যাই। কারখানার সামনে বিক্ষোভের সময়  বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ম্যানেজার আবার আমাদের ১০ জনকে ডেকে নিয়ে যান। তিনি জানান, ঈদের বোনাস এবং ইফতারের বিল দেওয়া হবে। বেতন দেওয়া হবে ৬০ শতাংশ। বকেয়া টাকা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরিশোধ করা হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমি কারখানার বাইরে আসার আগেই বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা রাস্তায় ব্যারিকেড দেন। আমি মাইকে অফিসের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে তাদের কারখানার ভেতরে আসতে বলি। এসময় পুলিশ অতর্কিতভাবে আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা শ্রমিকদের কারখানার ভেতরে নিয়ে যাওয়ার জন্য গেট খুলে দিই। তখন শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে কিছু ভাঙচুর করেছে। এটা পুলিশের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে করেছে। পুলিশের গুলিতে আমাদের ১০ জনের মতো শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’

পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারখানার শ্রমিকরা দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে সড়ক অবরোধ করেন। বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে তারা গাড়ি ভা       ঙচুর শুরু করেন। এসময় তিনটি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। তখন পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। শ্রমিকরাও পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ ১৬ রাউন্ড শটগানের গুলি এবং ২২ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। শ্রমিকদের ছোঁড়া ইট-পাটকেলে কমপক্ষে ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাসুম জানিয়েছেন, সন্ধ্যা ৬টার দিকে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে শনিবার থেকে কারখানা খোলা থাকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন