বিজ্ঞাপন

নমুনা পরীক্ষার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ

May 15, 2020 | 1:20 pm

সারাবাংলা ডেস্ক

দিন যত যাচ্ছে, নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের পরিমাণ তো বটেই, সংক্রমণের হারও বাড়ছে। যত বেশি নমুনা পরীক্ষা চলছে, তত বাড়ছে সংক্রমণ সংখ্যা। সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার দুই মাস পর থেকে যেন সর্বোচ্চ গতি পেয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ। যে কারণে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে আগের সব সংখ্যাকে। সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হলো, নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার হার বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। যার অর্থ, নমুনা পরীক্ষা বাড়লেই বাড়বে আক্রান্তের সংখ্যাও।

বিজ্ঞাপন

ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী মে মাসের প্রথম সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায়, ওই সপ্তাহে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৭৫৮ জন। এপ্রিলের শেষ সাত দিনের তুলনায় এই সংখ্যা ছিল ৩৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৪৩৮ জন। মে মাসের প্রথম সপ্তাহের তুলনায় এই সংখ্যা ৩৫ দশমিক ৩১ ভাগ বেশি। এপ্রিলের চতুর্থ সপ্তাহেও আগের সপ্তাহের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেড়েছিল আক্রান্তের হার। অর্থাৎ ধারাবাহিকভাবেই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বৃদ্ধির এই হারও কমছে না কোনোভাবেই।

হাজার নমুনা পরীক্ষায় হাজার সংক্রমণ

মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসেছে একদিনে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। গত এপ্রিলে একদিন ছয় শতাধিক শনাক্তের রেকর্ড ছিল। সেখানে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে কেবল দুই দিন ছয়শ’র কম ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন। বাকি পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিনই শনাক্তের সংখ্যা ছিল সাতশ’র বেশি। এর মধ্যে ৬ মে সর্বোচ্চ ৭৯০ জনের আক্রান্তের সংখ্যা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

বিজ্ঞাপন

আগের সব রেকর্ড ভেঙে যায় মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে। এই সপ্তাহে একদিন কেবল সাতশ’র কম সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। সাতশ’র বেশি একদিন, আটশ’র বেশি একদিন এবং ৯শ’র বেশি সংক্রমণ পাওয়া যায় আরও একদিন। বাকি তিন দিন সংক্রমণ ছিল হাজারের ঘরে। এর মধ্যে ১৩ মে সর্বোচ্চ এক হাজার ১৬২ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়।

এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, যে তিন দিন হাজারের বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, সেই তিন দিনই নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ছিল ৭ হাজারের বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নমুনা পরীক্ষাও হয় সর্বোচ্চ ১১৬২ জন শনাক্তের দিন— ৭ হাজার ৯শটি।

নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে আক্রান্তের হার বেড়েছে

কেবল আক্রান্তের সংখ্যা নয়, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসেছে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও বেড়েছে ব্যাপকভাবে। এই সপ্তাহে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ছিল ৪৬ হাজার ৪১৭টি। অন্যদিকে প্রথম সপ্তাহে মোট নমুনা পরীক্ষা ছিল ৪০ হাজার ৯০৭টি।

বিজ্ঞাপন

এই হিসাবে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। সেখানে দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার দাঁড়িয়ে ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশে। এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহেই কেবল নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল এর চেয়ে বেশি— ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, তাদের করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার ল্যাবের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। শুরুতে কেবল আইইডিসিআরে এই পরীক্ষার সুযোগ থাকলেও বৃহস্পতিবারের (১৪ মে) সবশেষ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছে, ৪১টি ল্যাবে চলছে করোনা পরীক্ষা। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। সেক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-পরিসংখ্যান বলছে, নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়লে আরও বেশি কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হবেন। আর নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার বৃদ্ধির এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে কোভিড-১৯ পজিটিভ ব্যক্তির সংখ্যা দিন দিন বাড়বে ব্যাপক পরিমাণে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো করোনা সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছেছে কি না, সেটি নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না এখনই।

মৃতের সংখ্যা ফের বাড়ছে, এক সপ্তাহে সর্বোচ্চ

এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহের পর থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা কিছুটা কমতে শুরু করে। টানা দুই সপ্তাহ সেই প্রবণতা অব্যাহত ছিল। তবে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে মৃতের সংখ্যাও ব্যাপক পরিমাণে বেড়ে যায়। এই সপ্তাহে মোট ৮৪ জনের মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর, যা এখন পর্যন্ত এক সপ্তাহে সর্বোচ্চ।

এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ২৯ জন মারা গিয়েছিলেন। তৃতীয় সপ্তাহে সেই সংখ্যায় দাঁড়ায় ৬৪ জনে। চতুর্থ সপ্তাহে অবশ্য তা কমে আসে। ওই সপ্তাহে ৪৫ জন মারা গিয়েছিলেন। এপ্রিলের শেষ সাত দিন হিসাব করলে সেই সংখা ছিল ৪১।

বিজ্ঞাপন

মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মৃতের সংখ্যা আরও কমে আসে। সে সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। তবে দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে প্রথম সপ্তাহের প্রায় তিন গুণ কোভিড-১৯ পজিটিভ ব্যক্তি মারা যান। এর মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ ১৯ জন মারা গেছেন ১৩ মে। এই সপ্তাহের কেবল প্রথম দুই দিন ১০ জনের কম কোভিড-১৯ রোগী মারা গেছেন।

দ্বিতীয় সপ্তাহের এই ৮৪ জন মিলিয়ে ১৪ মে পর্যন্ত দেশে মোট ২৮৩ জন কোভিড-১৯ রোগী মারা গেলেন। অন্যদিকে এই সপ্তাহে কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হওয়া ছয় হাজার ৪৩৮ জন নিয়ে মোট কোভিড-১৯ পজিটিভ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৮৬৩ জনে।

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন