বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুকন্যার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন আজ

May 17, 2020 | 12:28 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ১৭ মে ১৯৮১। আজ থেকে ঠিক ৩৯ বছর আগের এই দিনে সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশের মাটিতে পা রেখেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘ ছয় বছরের নির্বাসন শেষে তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সেই দিনটিই ঠিক করে দেয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ফের ঘুরে দাঁড়াবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে। সেদিনই ঠিক করে দেয়, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে আবদ্ধ হয়ে থাকবে না বাংলাদেশ। স্বৈরশাসনের নাগপাশ থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হয়ে যাত্রা করবে গণতন্ত্রের পথে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নরঘাতকরা ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। এসময় বিদেশে থাকায় বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

এদিকে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে বাঙালি জাতির অস্তিত্বকে বিপন্ন করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করে ঘাতকগোষ্ঠী। বাঙালি জাতির জীবনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও তখন যেন খানিকটা এলোমেলো। ঠিক এমনি ক্রান্তিলগ্নে আওয়ামী লীগ নেতারা বুঝে যান, বঙ্গবন্ধুকন্যাই আওয়ামী লীগ, তথা দেশকে ফের গণমানুষের দিকে ফিরিয়ে আনতে পারবেন। সেই অনুযায়ী ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫, ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাক তার অনুপস্থিতিতেই দায়িত্ব দেওয়া হয় সংগঠনের।

বিজ্ঞাপন

এই গুরুদায়িত্ব পেয়ে দেশে ফিরতে এক মুহূর্ত ভাবেননি শেখ হাসিনা। কিন্তু ভয় পায় ঘাতকগোষ্ঠী। খুনি সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে না দেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সেসব প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করেই ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রিয় স্বদেশভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা। অবসান ঘটে দীর্ঘ ৬ বছরের নির্বাসনের।

সেদিনের ঝড়-বাদল আর জনতার আনন্দাশ্রুতে অবগাহন করে শেরেবাংলা নগরে লাখ লাখ জনতার সংবর্ধনার জবাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার বিচার করতে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থসামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’

শেখ হাসিনা সেদিন আরও বলেছিলেন, ‘জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়। মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত থেকে বঞ্চিত হয়।’ সত্যিই নিজের জীবনেই তিনি দেখিয়েছেন, জীবনকে নিয়ে তিনি ভাবেন না।

বিজ্ঞাপন

দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার, বঙ্গবন্ধুহত্যা ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সার্বভৌম সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। শুরু হয় নিরবচ্ছিন্ন দীর্ঘ সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের ফল মেলে ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে, ১৯৭৫ সালের পর ফের ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী হন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

বঙ্গবন্ধুর মতো বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও যখনই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন, এ দেশের মাটি ও মানুষের কল্যাণে বাস্তবায়ন করেছেন বহুমাত্রিক উদ্যোগ। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের প্রতি অগাধ প্রেম এবং অক্ষয় ভালোবাসাই হলো তার রাজনৈতিক শক্তি।

করোনাভাইরাসের এই বৈশ্বিক মহামারিতেও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জনগণের জীবন ও জীবিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিঃস্বার্থভাবে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। জাতির অভিভাবক হিসেবে ৩১-দফা নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। জনগণের জীবন-জীবিকা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এ পর্যন্ত ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা জিডিপির ৩.৬ শতাংশ। করোনা সংকটের সময় কেউ যেন খাদ্যাভাবে কষ্ট না পায়, সেজন্য ব্যাপক খাদ্য সহায়তার ব্যবস্থা করেছেন। ৫০ লাখ পরিবারকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রমও উদ্বোধন করেছেন।

তবে এই করোনা সংকটের কারণেই বঙ্গবন্ধুকন্যার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঐতিহাসিক দিবসটিতে এবার কোনো ধরনে রাজনৈতিক কর্মসূচি রাখা হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবার ঘরে বসে দেশবাসীকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন কামনায় পরম করুণাময়ের নিকট প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন