বিজ্ঞাপন

‘১৪৫’ এ ধারাবাহিক হতে চান এবাদত

May 17, 2020 | 3:59 pm

মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

‘রবি পেসার হান্ট’এ গতির ঝড় তুলে জাতীয় দলের আঙিনায় পা রেখেছিলেন এবাদত হোসেন। সেই গতিই তাকে লাল-সবুজের টেস্ট দলের নিয়মিত মুখে পরিণত করেছে। নির্বাচক মন্ডলী থেকে শুরু করে টিম ম্যানেজমেন্টও সাদা পোষাকের ক্রিকেটে তার কাঁধে অগাধ আস্থা রাখেন। তার বলেই তারা আগামির অপার সম্ভাবনা দেখেন। তার বলের গতি ঘণ্টায় ১৩৫-১৪০ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ ১৪৫ এর আশেপাশে। ভবিষ্যতে অবশ্য এই গতিতেই (১৪৫) ধারাবাহিকভাবে বল ছুঁড়তে চান এ তরুণ। গতিকে অস্ত্র বানিয়ে জাতীয় দলের অপরিহার্য সদস্য হতে চাইছেন সিলেটের এই এক্সপ্রেস বোলার।

বিজ্ঞাপন

করোনাকালে মাঠের ক্রিকেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবাদত ফিরে গেছেন শেকড়েরর কাছে, মৌলভীবাজারের বড়লেখায়। সেখান থেকে মুঠোফোনে সারাবাংলাকে কথাগুলো জানিয়েছেন। কথা বলেছেন করোনাকালের রুটিন, বিমান বাহিনী থেকে ২২ গজের লড়াইয়ে আসার গল্প ও ব্যতিক্রমী উদযাপনসহ আরো নানান বিষয়ে। সারাবাংলার পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরা হলো:

সারাবাংলা: আপনার তো ক্রিকেটার হওয়ার কথা ছিল না। বিমান বাহিনীতে ছিলেন। সেখান থেকে ক্রিকেটে এসেছেন। গল্পটা যদি বলতেন।

বিজ্ঞাপন

এবাদত: মূলত ‘রবি ফাস্ট বোলার হান্ট’ থেকে ক্রিকেটে উঠে আসা আমার। রবি ফাস্ট বোলার হান্ট যখন আয়োজন হলো তখন আমি ফরিদপুর থেকে অংশ নিই, সেখানে আমি প্রথম হই। তারপর জাতীয় একাডেমিতে ফাইনাল অডিশন ভালো করেছি, গতি তারকা হই। এরপর বোর্ডের অধীনে এইচপিতে (হাই পারফরম্যান্স) কাজ করলাম তিন বছর। এইচপির পাশাপাশি বিভিন্ন সফরে গেলাম কাজ করলাম। আফগানিস্তান, জিম্বাবুয়ের সঙ্গে খেললাম। এভাবেই আস্তে আস্তে জাতীয় দলে অভিষেক হলো।

সারাবাংলা: এয়ারফোর্সকে মিস করেন?

বিজ্ঞাপন

এবাদত: অবশ্যই! কারণ এয়ারফোর্স আমাকে অনেক সমর্থন দিয়েছে। তারা তখন নিষেধ করলে হয়তো আমার বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার সৌভাগ্য হতো না। আমি কৃতজ্ঞ এয়ারফোর্সের কাছে। কারণ তাদের কারণেই আমি জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছি।

সারাবাংলা: শুনেছি আপনি নাকি ভালো ভলিবলও খেলতেন?

এবাদত: হ্যাঁ, আমি ক্রিকেটার হওয়ার আগে ভলিবল খেলোয়াড়ই ছিলাম।

সারাবাংলা: সেখান থেকে ক্রিকেটে আসা কেন?

বিজ্ঞাপন

এবাদত: আমি আসলে ক্রিকেট ভালোবাসি। ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল যে, আমি ক্রিকেট খেলব। দ্বিতীয় কথা হলো, আমার একটা লক্ষ্য ছিল যে আমি ক্রিকেটের শেষ দেখে ছাড়ব। নিজের মধ্যে এটা একটা জেদ ছিল। ছোটবেলায় যখন জাতীয় দলের খেলা দেখতাম তখন থেকেই ভাবতাম, কীভাবে জাতীয় দলে খেলা যায়। কিন্তু তারপর যখন এয়ারফোর্সে ঢুকলাম তখন সুযোগ পাইনি। কারণ আপনি হয়তো জানেন, বিমান বাহিনীতে খুবই কড়াকড়ি। বাইরে যাওয়া, আসার ক্ষেত্রে একটা নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে থাকতে হয়। ফলে সেভাবে ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। যখন রবি পেসার হান্ট হলো সেখানে অংশ নিলাম এবং স্পিড স্টার হয়ে বের হয়ে আসলাম। তারপর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের তত্বাবধানে এগিয়েছি। আকিব জাবেদ (পাকিস্তানের সাবেক তারকা পেসার) আসলেন (কোচ হিসেবে) আমরা তখন দশজন ছিলাম। উনি আমাকে দেখে বলেন যে, ছেলেটার প্রতিভা, সামর্থ্য আছে। যদি বোর্ডের সমর্থন পায় তবে জাতীয় দলকে সার্ভিস দিতে পারবে। ওনার ওই কথাটার জন্য বিমান বাহিনী খুবই মূল্যায়ন করেছে। তারপর ক্রিকেট বোর্ড থেকে বিমান বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারাও সমর্থন করে। সব মিলিয়ে সুযোগ তৈরি হয়।

সারাবাংলা: টেস্টে আপনাকে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পেসার বলা হয়। এটাতে কতটা অনুপ্রাণিত হন এবং নিজে কতটা প্রস্তুত?

এবাদত: অবশ্যই, দেখেন আমি এইচপিতে যখন দুই বছর কাটিয়েছি তখন চাম্পাকা রামানায়েকে আমাদের কোচ হিসেবে আসলেন। তো উনিই আমাকে বলেছিলেন যে, তোমার ধৈর্য্য যেমন, তুমি যেভাবে বোলিং করো তাতে যদি টেস্ট ক্রিকেটটা বেছে নাও তবে তোমার জন্য ভালো হয়। সুযোগ পাবা তাড়াতাড়ি। তুমি দেখ কীভাবে মাইন্ডসেট করবা। ওনার এই সাজেশনটা আমার খুবই কাজে লেগেছে। তখন থেকেই আমি আসলে মাইন্ডসেট করি। উনি বলেছিলেন, তোমার পেসও ভালো আছে, আরও বাড়াতে পারবা। যখন আর একটু বুঝতে শিখবা তখন তুমি ভালো করবা। যদি মনোযোগ ধরে রাখতে পারো তবে আমার মনে হয় তুমি বাংলাদেশের অনেক ভালো একজন টেস্ট বোলার হতে পারবে।

তারপর ওনার সঙ্গে কাজ করি। এবং নিজেকে সেভাবেই তৈরি করেছি যে আমি টেস্ট খেলব। সেভাবেই মাইন্ডসেট করেছি। আর আমার কাছে একটা বিষয় মনে হয় যে, আমি যদি টেস্ট ক্রিকেটটা ভালোভাবে ধরতে পারি তবে অন্যান্য ফরম্যাট আমার জন্য সহজ হয়ে যাবে। অতএব আমাকে আগে টেস্ট শিখতে হবে। ওনার কথার ওপর ভিত্তি করে নিজেকে তৈরি করার চেষ্টা করেছি, মাইন্ডসেট করেছি। উন্নতি করেছি এবং করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যাতে ভালো একজন টেস্ট ক্রিকেটার হতে পারি। কারণ টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকে আমরা (বাংলাদেশ) আসলে ভালো খেলতে পারিনি, দল হিসেবে খেলতে পারিনি। গত পাকিস্তান সিরিজের পর থেকে আমরা উন্নতি করার লক্ষ্য ঠিক করেছি, আমাদের অধিনায়ক সেটা বলেছেনও। আপনারা হয়তো সেটা জানেন। আমি যেমন ফিল্ডিং নিয়ে বাড়তি কাজ করেছি, ক্যাচিংয়ে ঘাটতি আছে। সেটা নিয়ে কাজ করেছি। যার যেখানে ঘাটতি আছে আগামী এক বছরের মধ্যে যাতে উন্নতি করতে পারি এই চেষ্টা আমরা সবাই করছি।

তো আমার ইচ্ছাটা আসলে চাম্পাকার ওই কথার পর থেকেই। উনি আসলে অনেক সহযোগিতা করেছেন আমাকে। আমি বিশ্বাস করি উনি একজন ভালো মানের কোচ। আমার বোলিংয়ে বেশি কিছু পরিবর্তন করেননি। কিন্তু ছোট ছোট অনেক বিষয়ে পরিবর্তন এনেছেন আর সেটাতে আমি অনেক উপকৃত হয়েছি।

সারাবাংলা: বোলিংয়ে গতি বাড়ানোর চেষ্টা করছেন?

এবাদত: গতি বাড়ানোর ইচ্ছা আছে। কারণ দেখেন আমাদের যথেষ্ট পেস বোলার আছে। আমাকে সবাই চিনে কারণ জোরে বোলিং করতে পারি। সো আমার চেষ্টা হচ্ছে আমাকে জোরে বল করতে হবে। এবং ইম্প্রুভ করতে হবে। আমার আসল বিষয় হলো পেস, পেসটা আমাকে বাড়াতে হবে। বর্তমান সময়ে (করোনাভাইরাসের সময়ে) শুধু চেষ্টা করছি নিজেকে ফিট রাখার। তাছাড়া ফিজিও ও ট্রেনার আমাদের আলাদা একটা সিডিউল দিয়েছেন। আমাকে আলাদা একটা সিডিউল দিয়েছেন। এসব নিয়ে কাজ করছি। আমি নিজে থেকে কিছু বিষয় চেষ্টা করছি। আমি চেষ্টা করি আসলে কীভাবে পেস বাড়ানো যায়।

সারাবাংলা: আপনার বলের গতি গড়ে ১৩৫-১৪০। আরো কত বাড়াতে চান?

এবাদত: আমার লক্ষ্য যদি গতিটা ১৪৫’শে নিতে পারি। একটা দুটা ডেলিভারি না, আমি যাতে ধারাবাহিকভাবে এই গতিতে বোলিং করতে পারি। জানি না কতটা পারব, তবে আমি চেষ্টা করব।

সারাবাংলা: নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে আপনি বোলিং করেছেন। সেখানে তো অনেক বাতাস। বাতাসের বিরুদ্ধে বোলিং করা পেসারদের জন্য আসলে কতটা কঠিন?

এবাদত: হ্যাঁ কঠিনই। আমাকে যেটা ফেস করতে হয়েছে…. তখন কোর্টনি ওয়ালাশ বোলিং কোচ ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, দেখো তোমার অস্ত্র তো পেস। ওইসব কন্ডিশনে যেটা হয় বাতাসের বিরুদ্ধে হুট করেই গতি বাড়িয়ে দেওয়া যায় না। কোর্টনি আমাকে বলেছিলেন তুমি এখানে ধীরে ধীরে গতি বাড়াবে। আমিও তাই করেছিলাম।

সারাবাংলা: আবু জায়েদ রাহি’র সঙ্গে বোলিং জুটি কেমন উপভোগ করেন?

এবাদত: খুবই ভালো! ও একপাশ থেকে সুইং দিয়ে ব্যাটসম্যানকে পরাস্ত করতে চায়, আর আমি গতি দিয়ে। তাছড়া বিভাগীয় ক্রিকেটেও যেহেতু আমরা ৪ বছর যাবৎ একসঙ্গে খেলছি সেহেতু দুজনের মধ্যেই বোঝাপড়াটা বেশ ভালো।

সারাবাংলা: উইকেট পেলেই আপনি একটু দৌঁড় দিয়ে স্যালুট দেন। এই উদযাপনের মানে কি?

এবাদত: এটা ২০১৭ সালের কথা। জাতীয় ক্রিকেট লিগে উইকেট পেয়ে আমার উদযাপন দেখে রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ) বললেন তুই এভাবে উদযাপন কর। তখন থেকেই আমি উইকেট পেয়ে ওভাবে উদযাপন করি।

সারাবাংলা: করোনার সময়টা কেমন কাটছে?

এবাদত: সিলেটে মানে আমার বাড়িতে আছি। করোনার সময়টা কি আর করা বাড়িতে শুয়ে, বসে কাটছে। তবে ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আপনি জানেন যে খেলা শুরু হলেই আবার মাঠে ফিরতে হবে। তাই ফিটনেস ঠিক রাখাটা জরুরী।

সারাবাংলা: আপনাকে ধন্যবাদ।

এবাদত: আপনাকেও।

সারাবাংলা/এমআরএফ/এসএস

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন