বিজ্ঞাপন

খায়েশ

May 28, 2020 | 4:51 pm

বিশাল এসব আকাশগামী দালানের মধ্যে কী হয়, আর কী হয় না- তা নিয়ে আমাদের গল্পের অন্যতম কুশীলব ওমর সানীর কোন মাথাব্যথা নেই। ওর দৃষ্টি শুধু অফিসের চিপাচাপা ফাঁকফোকরে। যদি একটা কৌটা পাওয়া যায়, পাওয়া যায় কাগজের ফাইলের ছেঁড়া অংশ কিংবা নিদেনপক্ষে কিছু কাগজ। তাতেই ও সন্তুষ্ট। কেউ দেখল কি দেখল না সেদিকে খেয়াল না করেই বখাটের মোটর সাইকেলের গতিতে তা বস্তায় পুরবে। আজকাল অবশ্য মোটা কাগজের ফাইলপত্র তেমন ওর ভাগ্যে জোটে না।

বিজ্ঞাপন

সানী দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তার পাশে, কিছুক্ষণ পরে গিয়ে ওঠে রোড ডিভাইডারের ওপর। প্রতিদিনের অভ্যস্ত চোখে দেখতে থাকে গাড়ির আসা-যাওয়া। কিছুটা আনমনা হয়ে তাকিয়ে থাকে।

মতিঝিল থেকে প্রেসক্লাবের দিকে যাওয়া একটা প্রাইভেটকারের জানালা খুলেই ঠোঙার মতো প্যাকেট ফেলে দিল একটি হাত। সানী দেখতে পেল হাতটি পুরুষের, পাশে বসা ঝলমলে এক যুবতী। কিন্তু সেদিকে ওর দৃষ্টি মোটেও আকর্ষণ করে না, চোখ খুঁজছে মৌসুমী গেল কোথায়? পরক্ষণেই ভাবে মৌসুমী এখন গোল্লায় যাক। আগে চাই ঠোঙার মতো ওই প্যাকেটটা। হঠাৎ বড় একটি বাস এসে পড়ায় তা বুঝি আর হলো না! পড়ে গেল তা বাসের তলায়, তবে পিষ্ট না হওয়ায় রক্ষে!

শুরু হলো ট্রাফিক জ্যাম। এখন যদি ওপাশ থেকে মৌসুমী কিংবা মিশা সওদাগর চলে আসে, তবে সব মাঠে মারা যাবে। মৌসুমীকে হয়তো পটানো যাবে কিন্তু মিশা তো ফাজিলের হাড্ডি। তক্কে তক্কে থাকে ওর টার্গেট করা কাগজ, কৌটা, লোহা, ভাঙারি, কাচের টুকরোর দিকে। সুযোগ পেলেই দৌড়ে গিয়ে চিলের মতো ছোঁ দিয়ে নিয়ে যাবে। চালাকি করে ওর সঙ্গে পেরে ওঠা দায়।

বিজ্ঞাপন

তবে একটা জায়গায় সানী মহারাজা। মৌসুমী কেন যেন ওর সঙ্গে থেকে টোকাতে ভালোবাসে। এমনকি মৌসুমী একদিন ওকে বলেছে, মিশা নাকি খুব শয়তান। ওর জিনিস কেড়ে নেয়, কিল মারে, চুল ধরে জোরে টান দেয়।

এখন সানীর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কেমন করে ওই প্যাকেট টা আনবে। প্যাকেটটায় কী থাকতে পারে; একটু অনুমান করার চেষ্টা করে। কয়েক সেকেন্ড ভাবে। নাহ্, অনুমান করা যাচ্ছে না। ‘ওরা কি আমাগো লাইগা কিছু রাহে’ মনে মনে বলে তারপর ভাবতে থাকে কীভাবে প্যাকেটটা হস্তগত করা যায়। কীভাবে আনবে ঠোঙাটা? বাসের চাকা থেকে সামান্য ভেতরের দিকে ওই তো দেখা যায় ওটা নিশ্চিন্তে শুয়ে আছে রাস্তায়। আকাংখার জোয়ারের বাঁধ ভেঙে আসে। তীব্র সেই জোয়ারে নেমে পড়ে রোড ডিভাইডার থেকে। বাসের চাকার কাছে বসে হাত বাড়ায়। দশের একটু কম বা বেশি বয়সের হাত নাগাল পায় না। মাথাটা ঝুঁকিয়ে আরেকটু এগিয়ে চেষ্টা করে তবুও পায় না ছোঁয়া। শঙ্কিত চোখে একবার ট্রাফিক জ্যামের দিকে তাকায়। বেশ বড় জটলা বেঁধেছে। এখন অফিস ছুটির সময়, সিগন্যাল ছাড়তে দেরি হবে। ভাবে, একবার রাস্তায় বসে পা দিয়ে আনলে কেমন হয়। মনে শঙ্কা ভর করে যদি সিগন্যাল ছেড়ে দেয় আর বাসে থেঁতলে যায় পা!

ভাবতে ভাবতে বসে পড়ে। এই বসা অবস্থায় মৌসুমী কিংবা মিশা যদি দেখে ফেলে; ঠোঙাটা ওদের মধ্যে কেউ নিয়ে গেলে তো সর্বনাশ!

বিজ্ঞাপন

এদিক ওদিক তাকিয়ে ক’মুহূর্তের মধ্যেই সব ভাবনা উড়িয়ে দেয়। ডান কাঁধে বস্তা রেখে বাঁ হাতে ভর রেখে ডান পা দ্রুত চালিয়ে দেয় বাসের নিচে। ঠোঙাটা ঝড়ের বেগে নিয়ে আসে। মুখে ফুটে ওঠে সাফল্যের রোদ্দুর। লাফিয়ে আবার উঠে যায় রোড ডিভাইডারে। যত দ্রুত পারা যায় প্যাকেটটা ভরে ফেলে বস্তায়। সামনে তাকাতেই দেখে- আগে মৌসুমী পিছনে মিশা, গাড়ির ফাঁকফোকর দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। মৌসুমীর চোখে চোখ পড়তেই হাসি লেনদেন করে দু’জন। মৌসুমী এগিয়ে আসে ওর কাছে। মিশা চলে যায় অন্যদিকে। রাস্তা পার হয়ে ফুটপাথ ধরে চলতে থাকে ওরা। শকুনের মতো চোখে খুঁজতে থাকে আরাধ্য বস্তু; ডানে-বাঁয়ে, সামনে, কখনোবা পিছনে। টোকাতে টোকাতে এসে দাঁড়ায় পল্টন ময়দানের পুব পাশে উঁচু টাওয়ারটার সামনে। চলার গতি কিছুটা ধীর হয়ে যায়। একসময় থেমেও যায়। সানী আর মৌসুমীর চোখে একসঙ্গে কৌতূহল তড়পায়।

মৌসুমীই আগে বলে, ‘মানুষ ওই অত উপ্রে ক্যামনে উডে?’

সানী ভালো জানে না বলে জবাব দেয়। তবে মৌসুমীর কৌতূহল মেটাতে বলে, ‘মায়ে কয় উই শ্যাষ মাতা পযুন্তু লিট আছে।’

– লিট কী?

বিজ্ঞাপন

– লিট অইল গিয়া ছোড ছোড রেলের বগির লাহান। হের মধ্যে মানুষ ঢুইকা দাঁড়ায়া থাহে আর উপ্রে উইঠ্যা যায়।

– অত উপ্রে উডে ক্যামনে?

– কারেন্টের তারে টাইনা উডায়।

– একদিন যুদি চইড়বার পাত্তাম!

– এ…হ! ক্যামনে চড়বি, ওগুনোয় চড়ে সাবেরা। আমরা সাহেব নাকি? ওইডার কাছে যাইবার পারবি? গার্ড ব্যাডারা যা খাচ্চোর, সিঁড়ির ধারেই যাইতে দ্যায় না!

– বড় অইলে তুই আমারে চড়াইবি?

– হ, তোরে পরান ভইরা চড়ামু। আমি তহন গার্ডের চাকরি লমু। নে চল…

বঙ্গভবনের দিকের রাস্তা ধরে এগোতে থাকে ওরা। ওই ভবনের কাছাকাছি মোড়টা পার হয়ে গুলিস্তানমুখি রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকে। অল্প এগোতেই বাঁ পাশে ঢুকে পড়ে ডেরায়। এই পার্কটাতেই ওদের ডেরা।

সন্ধ্যা তখনো নামেনি গুলিস্তান চত্বরে। পূবের সারি সারি পাম গাছ এনে দিয়েছে একটুখানি অন্ধকারের ছায়া। ব্যায়াম আর খেলুড়ে পোশাক পরে হাঁটছে সুস্থতা সন্ধানী মানুষ। কেউ কেউ হালকা দৌড়ায় মাঝের পুকুরটাকে বৃত্ত করে। পশ্চিমে মহানগর নাট্যমঞ্চ সাদা দাঁত বের করে কাকে যেন উপহাস করছে। ওখানে কীভাবে, কেমন নাটক হয় আমাদের নায়ক ওমর সানী তা জানে না। তবে রাত নামলে যে নাটকের দৃশ্য পার্কজুড়ে অভিনীত হয়, তা দেখে ঘুমিয়ে পড়ে প্রতিদিন ওমর সানী, মৌসুমী, মিশা সওদাগররা। সে বড় বিচিত্র নাটক। স্বাভাবিক জীবনের আলো দেখে না।

নিজেদের ‘জায়গা’য় সানী এসে বসে পড়ে। পাঁচ লিটারের বোতল থেকে ঢক ঢক করে পানি ঢালে গলায়। পলিথিনের বিছানায় বসে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আজকের টোকানো ‘মাল’ নিয়ে। খানিক পরেই মহাজন আসবে এসব কিনতে। কোনো কোনো দিন ওরাই নিয়ে যায় তার কাছে। মহাজনের কথা মনে হতেই গালি দিয়ে বসে- ‘শালার পুত দেড় কেজিরে বানায় এক কেজি। দামও দ্যায় কম।’

বস্তার জিনিস ঢালতে থাকে। ওর তাবত কৌতূহল ওই গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া ছোট প্যাকেটকে ঘিরে। একটু দূরে বসে ওর মা কাজ দেখছে, করছে তদারকি। কাগজ, টিনের কৌটা, ভাঙা টিন আর লোহা আলাদা করে রাখতে বলে। সানীর আগ্রহ সেই প্যাকেটটার দিকে। রাস্তায় হঠাৎ হইচই শুনে ওর মা দৃষ্টি ফেরায় সেদিকে। রিকশাওয়ালাকে পেটাচ্ছে ট্রাফিক সিপাই। এই ফাঁকে প্যাকেটটা খুলে ফেলে। খুলে যা পেল তা নিয়ে কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকে সানী। বেশ কৌতূহল একই জাতীয় দুটি জিনিস নিয়ে। ভাবে, ফোলালে বেশ বড় হবে। সেই পুরান ঢাকায় দেখেছে, রমনা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলায় দেখেছে কতবড় বেলুন। মুখ দিয়ে যেই ফোলাতে যাবে অমনি ওর মা হেই হেই করে তেড়ে আসে। বলে, ‘এই গোলামের পুত, ফালা, ফালা উডা মুখি দিছ না কইলাম। ওয়াক!’

নিজের গায়ে পড়বে বা সত্য হতে পারে বলে ‘খানকির পুলা’ শব্দটি আর ব্যবহার করল না। সানীর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে পুকুরের দিকে ফেলে দেয় মনুষ্য শুক্রাণু ভরা দুটি কনডম। সঙ্গে সঙ্গেই মনে পড়ে যায়- গতরাতে দেওয়া এনজিও ভাইয়ের ওই একই জিনিসের কথা। রাতে জিনিসটার অপরিহার্যতা মনে করে নিজের পোটলার তলায় লুকিয়ে রাখা এ বস্তু হাতড়িয়ে দেখে, ঠিকমতো আছে কি না! উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর একটু স্বস্তি পায়।

পার্কজুড়ে রাত নেমে আসে মৃদু বাতাসের মতো। এই শব্দ আছে; তো এই নেই। ঘরমুখী কিছু মানুষ বেরিয়ে যায়। কিছু মানুষ উড়ন্ত তুলোর মতো নিঃশব্দে ঢোকে। টাকা দিয়ে সুখ কেনার প্রত্যাশী তারা। বাড়তে থাকে তাদের আনাগোনা। সানীর মনে পড়ে, এ পার্কটির পুব কোনায় যে মোড়টি আছে ওখানে সবসময় থাকে সিপাই। ওদিকে সাধারণ কাউকে এগোতে দেওয়া হয় না। দূর থেকেই মানুষকে করা হয় সতর্ক। রঙে ভরা আর পাঁচিলে ঘেরা ওই জায়গাটি নিয়ে ওর রাজ্যের কৌতূহল। মা বলে ওটা নাকি রাজবাড়ি। রাজার প্রাসাদ ভেতরে। ওখানে থাকেন তিনি। বৃষ্টি-বাদলের রাতে মায়ের যখন কাম কম থাকে তখন পলিথিনের ছাউনি ঘেরা ঘরে পলিথিনের বিছানায় মায়ের বুকের ওম নিতে নিতে কত গল্প শোনে সানী। রাজারানি, রাজকন্যা, দৈত্য-রাক্ষসের গল্প।

ওই রাজবাড়ির রাজা নাকি গাড়িতে আসা-যাওয়া করেন। প্রাসাদ থেকে তিনি যখন বের হন তখন রাস্তা থেমে যায়। সাধারণ মানুষও চলাচল থামাতে বাধ্য হয়। সিপাই আটকে দেয়। অনেকদিন সিপাই ওকে ধমক দিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে কোনো গলিতে বা চিপায় দিয়েছে ঢুকিয়ে। ওর যত রাগ ওই সিপাইয়ের ওপর। মায়ের কামাইয়ের টাকা নাকি তারা কেড়ে নেয়। রাজা যখন প্রাসাদে ঢোকেন এবং মন্ত্রীরা দেখা করতে যান তখনো একই অবস্থা হয়, রাজার রাজধানী যায় থেমে। রাজাকে দেখার বহু দিনের শখ, অনেক দিনের সাধ। দেখবে কেমনে! রাজা যান কালো কাচে ঘেরা গাড়িতে চড়ে। আগে-পিছে সান্ত্রী-সেপাই। বাঁশি-হুইসেল বাজে হরদম। রাস্তায় দাঁড়ানোর প্রশ্নই ওঠে না। রাজাকে দেখা তো দূরের কথা। ওর মনে জমে ফোঁটা ফোঁটা ক্ষোভের তপ্ত জল।

আজ বেশ ভ্যাপসা গরম। সানীর মা মুখে স্নো-পাউডার মাখতে মাখতে একটু দূরে একই কর্মে রত মৌসুমী ও মিশার মাকে বলে, ‘আজ কাম-কাজ কম অইবার পারেরে! বিষ্টি অইব মনে অয়। কাস্টমামের ভাবও ভালা মনে অইতাছে না।’

পর পর দুই দিন সানীর কামাইয়ের টাকা কেড়ে নিয়েছে সিপাই আর এলাকার সোর্স রাজিব। যাকে সবাই ভিলেন রাজিব বলেই ডাকে। জোর করে পুলিশে কাম করে যায়, টাকা তো দেয়-ই না; বরং মারধর করে, যা পায় তাও নিয়ে যায় কেড়ে।

কাল বাকিতে খাবার বাটি দেয়নি আনোয়ারা খালা। আজও দেবে বলে মনে হয় না। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কপাল কিংবা সিপাইকে ‘খানকির পুলা’ বলে গালি দিয়ে সানীকে বলে, ‘এই ল, দুইডা পুরি আইনা রাখছিলাম, খাইয়া শুইয়া পড়। আমি কামে যামু।’ সানী এমন বাস্তবতায় অভ্যস্ত। অনেকটা শান্ত স্বভাবেরও কিন্তু আজ কিছুটা বিদ্রোহ করে বসে, ‘না, খালি পুরি খামু না। তুই খা। আমারে ভাত আইনা দে!’

সানীর কথায় ওর মায়ের মাথায় রক্ত চড়ে। খেঁকিয়ে ওঠে, ওই গোলামের পুত, যা তোর বাপের থনে যাইয়া ভাত খা গা। খাইলে খাইবি নাইলে মাইর খাইবি।’ সানীও রেগে পুরি দুটি মায়ের কোলে ছুড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। হাঁটা দেওয়ার আগেই মেক-আপের সরঞ্জাম একপাশে সরিয়ে রেখে খপ করে চুল ধরে দমাদম কয়েক ঘা বসিয়ে দেয় পিঠে। সানীর কান্না শুনে মৌসুমী এগিয়ে আসে, মিশা দূরে দাঁড়িয়ে হাসে। পুরি দুটি জোর করে সানীকে গছিয়ে দিয়ে ওর মা চলে যায় হন হন করে। অনেকক্ষণ পুরি হাতে বসে থাকার পর একসময় পেট জ্বলে ওঠে অতিমাত্রায়। পেট যেন বলছে, যাই হোক কিছু একটা ঢোকা বাবা সানী! সানী তখন পেটের বাধ্য হয়।

পুরি পেটে যাওয়ার পর শুয়ে পড়ে। গরমে হাসফাঁস করছে। হঠাৎ এক পশলা শীতল বাতাস শরীর জুড়িয়ে দিলেও পেটের আগুন নেভাতে পারে না। মনে ভেসে ওঠে মহাজনের পানখেকো জলবসন্তপোড়া মুখ, মায়ের কামাইয়ের টাকা কেড়ে নেওয়া না দেখা সিপাইয়ের অস্পষ্ট শরীর, রাস্তা থেকে দাবড় দেওয়া গোঁফ কামানো সিপাইয়ের ভুঁড়ি।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা, শিশুপার্ক, ঈদগা ও হাইকোর্টের পাশে থাকা রাজ্জাক, আলমগীর, ফারুক, সোহেল রানা, ওয়াসিম, রুবেল, ফেরদৌস, রিয়াজ, শাকিল, শাকিব আজ ওরাও এসেছে ওর কাছে, ওর পাশে। ওদেরও প্রায় একই সমস্যা। সমাধানের পথ জানা নেই; এবার খুঁজতে হবে। কী করা যায়! প্রায় প্রতিদিনই শাহবাগ, গুলিস্তান, পল্টন, প্রেসক্লাব এলাকায় অনেক মানুষ গরম গরম কথা বলে। ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে বলে দাবি-দাওয়ার কথা। কেউ কেউ না খেয়েও বসে থাকে। তারা বলে অনশন। ওরাও তো একরকম না খেয়েই আছে। তা হলে কি অনশন করবে?

ওদের তো ব্যানার নেই। তবে কথা জানাবে কার কাছে, কীভাবে? খালি পেটে তো গলায় জোরও পাওয়া যাবে না! ওদের মধ্যে রাজ্জাক একটু বয়সে বড়। সবার কাছে প্রিয়ও বটে। রাজ্জাক বলে, ‘আমাগো কতা আমাগোই কইতে অইব। আমরা সরাসরি রাজারেই কমু। রাজার বাড়ি তো বগলেই। চল সবাই তার কাছেই যাই।’

সবাই তাকে সমর্থন করে। সানী সবাইকে বলে, ‘আমি কিন্তু মহাজনের মাপে বেশি নেয়া, দাম কম দেয়া, মায়ের ট্যাহা কাইড়া নেয় সিপাই, রাজার বাড়ির এত কাছে থাইহাও না খাইয়া থাহি, এসব কতা কমু।’ আলমগীর বলে, ‘হ, কইস। তয় চল।’

যে কথা সেই কাজ। দলবেঁধে ওরা এগোতে থাকে। পার্ক পেরিয়ে রাস্তা, রাস্তার পর ঘন গাছে ঘেরা আরেকটি ছোট পার্ক। সেখানে সবারই প্রবেশ নিষেধ। তারপর সরাসরি রাজবাড়ির গেইট। ওরা এখন সেই গেইটের সামনে। কিছুটা যেতেই সেপাইরা অস্ত্র কাঁধে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে আসে। ভয় পেয়ে খানিকটা থমকে দাঁড়ায় ওরা। হঠাৎ শুরু হয় মৃদু বৃষ্টি। ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে হালকা ফোঁটার জল মাথায় সইতে পারে না সেপাইরা। দ্রুত ঢুকে পড়ে রাজবাড়ির গেইটের মধ্যে। দূর থেকে ধমকায়, ‘ওই ছোট লোকের বাচ্চা; শালার পিচ্চিরা ভাগ! আগাইলে মাইর খাবি। পিটায়ে গরাদে ভরব; কইয়া দিলাম।’

সানীদের দল আরেকটু এগোয়। সিপাইরা এবার অস্ত্র তাক করে। রাজ্জাক সবাইকে থামায়। মৃদুস্বরে বলে, ‘অহন কী করা যায়? ঢুকপার তো দিতাছে না।’ ফারুক রাগ ঝাড়ে, ‘যে রাজার বাড়ি মানুষ ঢুকতি পারে না, মনের কতা জানাবার পারে না, সেই রাজবাড়ি ভইরা মুতি।’

সোহেল রানা বলে,‘তাই করি।’.

ওয়াসিম বলে, ‘কী করবার চাস?’

সোহেল রানা ফস করে প্যান্টের জিপার খুলে বলে, ‘মুতে ভাসাইয়া দে রাজবাড়ি।’

সবাই সমস্বরে বলে, ‘হ, হ মুতে ভাসাইয়া দে শালার রাজবাড়ি।’

সানীর ক্ষোভও যেন মূত্রত্যাগের মধ্য দিয়ে ফেটে পড়ে, ‘দে, দে মুতে দে’ বলে সবেগে ছর ছর করে ছুড়তে থাকে শরীরের জলীয় বর্জ্য। সবাই একযোগে একই কর্ম করতে থাকে সোৎসাহে।

বৃষ্টিতে সানীর মা দৌড়ে ঢুকে পড়ে তার ডেরায়। তাড়াতাড়ি সানীর পাশে বসতে গিয়ে পশ্চাৎদেশ ওঠে ভিজে। গন্ধ বুঝতে পেরে সবেগে সানীর পিঠে আবার গোটা দুই কিল বসিয়ে বলে, ‘গোলামের পুত গোলাম, আজও তুই ঘুমোর মধ্যে মুতে বিছনা ভিজাইছস। আমি ঘুমামু কেমনে?’

সারাবাংলা/আরএফ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন