বিজ্ঞাপন

অগ্নিকাণ্ড বিষয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের ‘বক্তব্য’

May 29, 2020 | 9:08 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চিকিৎসাধীন পাঁচ জন রোগী মারা গেছেন। এই পাঁচ জনের মধ্যে তিন জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত ছিলেন। বাকি দুইজনের কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছিল না। এই ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয়েছে একাধিক তদন্ত কমিটি।

বিজ্ঞাপন

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শুরু থেকেই নানা রকমের অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিপক্ষে। সেসব অভিযোগ নিয়েই সারাবাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।

হাসপাতালের যোগাযোগ ও ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান ডা. সাগুফা আনোয়ার বলেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যে নির্দেশনা, সেটা মেনেই আমাদের এখানে পাঁচ শয্যাবিশিষ্ট একটি আইসোলেশন সেন্টার করা হয়। এটি মূল ভবনের সঙ্গেই ছিল। এখানে কোভিড-১৯ সাস্পেক্টেড যে রোগীরা ছিলেন, তারা হাই ফ্লো অক্সিজেনের মধ্যে ছিলেন। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমরা তাদের বাঁচাতে পারিনি। অক্সিজেন অত্যন্ত দাহ্য একটি গ্যাস। যার কারণে বাতাসের তীব্রতায় আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় আমাদের ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই। আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে নেয় পুরো আইসোলেশন ইউনিট। রোগীদের বের করার আগেই দুর্ভাগ্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন।’

‘আমরা সঙ্গে সঙ্গেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে খবর দেই। যারা এই ঘটনায় স্বজন হারিয়েছেন তাদের সবার সঙ্গেই আমরা সারা রাত ছিলাম। সকালে আনুমানিক ভোর পাঁচটার দিকে চার জনের মরদেহ দেওয়া হয়। একজনের মরদেহ আমাদের মর্গে ছিল যা আমরা দুপুরে হস্তান্তর করি’, বলেন ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘আগুনের সূত্রপাত হওয়ার পর থেকে আমাদের ডিউটি ম্যানেজার, হেড অফ সিকিউরিটি থেকে শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করা হয়। এক্ষেত্রে ৪-৫ মিনিট দেরি হতে পারে ফোন দিতে। কিন্তু আমরা আগুন লাগার পরেই ফায়ার সার্ভিসকে ফোন করি যার রেকর্ড হাসপাতালের ফোন রেকর্ডেই আছে। ফায়ার সার্ভিসের সেন্ট্রাল টাওয়ার, গুলশান ও বারিধারার অফিসে আমরা ফোন করি। ফায়ার সার্ভিস এসে পৌঁছানোর পরে আগুন নেভাতে পারে খুব দ্রুত। কারণ আমাদের এখানে হাসপাতালের সঙ্গে থাকা আইসোলেশন ইউনিটের পাশেই পানির হাইড্রেন্ট ছিল। যেহেতু আমরা আলাদা আইসোলেশন ইউনিট করছি তাই সেখানে দাহ্য অক্সিজেন থাকবে, লাইফ সাপোর্ট লাগবে। একই সঙ্গে ডিজইনফেকশনের কিছু ব্যবস্থা থাকবে। আর তাই সেই হাইড্রেন্টের পাশেই ইউনিটটা করা হয়। সেই ব্যবস্থা থাকার কারণেই আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিস তাই এসে আমাদের হোস পাইপ ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে।’

মেয়াদোর্ত্তীণ অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালের কিছু অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র মেয়াদোর্ত্তীণ হয়েছিল এপ্রিল মাসে। কোভিড-১৯ এ লকডাউন পরিস্থিতির কারণে সেগুলো সচল করা যায়নি। তবে যে মাত্রায় আগুন লেগেছিল তাতে আসলে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রে আগুন নেভানো যেতো না।’

বিজ্ঞাপন

ডা. সাগুফা বলেন, ‘এখানে আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল পাঁচ জনকেই। তাদের সবার মধ্যেই উপসর্গ ছিল কোভিড-১৯ এর। যে কারণে রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও তাদের সেখানে রাখা হয়েছিল যাতে অবজারভেশনে আমরা চিকিৎসা দিয়ে যেতে পারি। রোস্টার পদ্ধতিতে সেখানে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা দায়িত্ব পালন করছিল। একজন রোগীর আমাদের এমন ছিল যার রিপোর্ট নেগেটিভ কিন্তু ক্লিনিকালি ইম্প্রুভমেন্ট হচ্ছিল না। সেটা আমরা ওনাদের স্বজনদের জানিয়েছি। উনারা বলেছিলেন চিকিৎসা দিয়ে যেতে। এ সময় উনারা প্লাজমা থেরাপি দেওয়া যায় কিনা সে বিষয়েও বলছিলেন। আমরা তাতেও রাজি হয়েছি। কিন্তু একটা দুর্ঘটনা সব এলোমেলো করে দিলো। এখন আসলে এসব বলে আমি কাউকে সান্তনা দিতে পারবো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে যখন সব বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে বলা হয় তখন আমরা এখানে আইসোলেশন ইউনিট করি। যা আসলে রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্যেই। এক্ষেত্রে নিয়মের বাইরে কোনো ঘটনা ঘটেনি। বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে এভাবে এগিয়ে না আসলে দেশের সেবা করা মনে হয় কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।’

হাসপাতালে এখন সকল চিকিৎসাসেবা অব্যাহত আছে জানিয়ে ডা. সাগুফা বলেন, ‘আমাদের এখানে যে পাঁচজন মারা গেছেন তারাও চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ড বিষয়ে ইতোমধ্যেই তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। আর তাই কোনো আলাদা মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’ ইউনাইটেড হাসপাতালে রোজার আগে আইসোলেশন ইউনিট প্রস্তুত করা হয়েছিল বলে জানান ডা. সাগুফা। হাসপাতালে এখনও আটজন কোভিড-১৯ রোগী আছে বলেও জানান ডা. সাগুফা।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, গত বুধবার (২৭ মে) রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে হাসপাতাল সংলগ্ন (মূল ভবনের বাইরে) করোনা আইসোলেশন ইউনিটে আগুন লাগে। এতে সেখানে থাকা পাঁচজন রোগীর সবাই মারা যান। এই ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুনে পুড়ে মারা গেলেন ৫ করোনা রোগী

সারাবাংলা/এসবি/এমও

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন