বিজ্ঞাপন

দেশে ‘জবাবদিহিতাহীন স্বেচ্ছাচারিতায়’ টিআইবির উদ্বেগ

May 30, 2020 | 10:10 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মহামারি করোনাভাইরাস উদ্ভূত সংকটকালে ‘জবাবদিহিতাহীন স্বেচ্ছাচারের’ একের পর এক উদাহরণ সৃষ্টি হচ্ছে উল্লেখ করে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও আইনের শাসনের স্বার্থে এখনই এই প্রবণতার লাগাম টেনে ধরার দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সম্প্রতি একটি বেসরকারি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ‘নির্লিপ্ততা’, ‘গাফিলতি’ ও একটি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে বেআইনিভাবে ঋণ সুবিধা না দেওয়ায় গুলি করার মতো গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্তদের এয়ার-অ্যাম্বুলেন্সে দেশ ছাড়তে সুযোগ দেওয়ার ঘটনাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দুর্বৃত্তায়ন বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৩০ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বলছে, অনৈতিক ব্যবসায়িক চর্চাকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হচ্ছে। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে অবিলম্বে ব্যবসা খাতের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত শূন্য সহনশীলতা’ নীতির কঠোর বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

ইউনাইটেড হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডে পাঁচ জন চিকিৎসাধীন রোগীর প্রাণহানির ঘটনার বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই মর্মান্তিক ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ সামনে এসেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, যে আইসোলেশন ইউনিটে আগুন ধরেছিল সেখানে দাহ্যপদার্থ নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, অগ্নিনির্বাপন যন্ত্রগুলো ছিলো মেয়াদোত্তীর্ণ। এছাড়াও নিহতরা সবাই লাইফ সাপোর্টে ছিলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন দাবি তাদের স্বজন ও বিশেষজ্ঞরা নাকচ করে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, মালিকপক্ষের এমন ‘বিভ্রান্তিকর আচরণ’ এবং কোনো প্রকার দায় স্বীকারে ব্যর্থতা অবশ্যই অগ্রহণযোগ্য। ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিটি যাতে যেকোনো ধরনের প্রভাব উপেক্ষা করে বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন দিতে পারে এবং প্রতিবেদনে ‘অপরাধমূলক গাফিলতির’ প্রমাণ পাওয়া গেলে নিহত পরিবারকে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণসহ আইনের কঠোরতম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ​

বিজ্ঞাপন

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সম্প্রতি অবৈধ ঋণ পাইয়ে দিতে একটি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে গুলি করা, একাধিক কর্মকর্তাকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগে মামলার ঘটনায় তোলপাড় হয়েছে। অথচ যাদের বিরুদ্ধে মামলা তারাই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ‘প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়’ ‘মিথ্যা রুগী সেজে’ ‘এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে’ দেশ ছাড়লেন। তাদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি’ এমন অজুহাতে এখানে দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে বিশ্বজুড়ে আকাশপথে যোগাযোগ কার্যত বন্ধ থাকার পরও যেরকম অস্বাভাবিক দ্রুততায় পুরো আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাদের দেশ ছাড়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এখন সরকারের এক বিভাগ অন্য বিভাগের ওপর যেভাবে দায়িত্ব দিয়ে নিজের দায় এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে, তাতে অবৈধ যোগসাজশের আশঙ্কা আরও জোরদার হয়েছে। অনৈতিক ব্যবসায়িক সুবিধা নিয়ে দেশের ব্যাংকিং খাতকে প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছেন প্রভাবশালীরা। বরাবরের মতো এবারও যদি তারা সরকারের ‘প্রত্যক্ষ মদদে’ দায় মুক্তি পেয়ে যান, সেটা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে  প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ‘শূন্য সহনশীলতা নীতির’ সরাসরি বরখেলাপ।

ড. জামান বলছেন, সংবাদ শিরোনাম হয়েছে যে, আসন্ন বাজেটে আবারও কালো টাকা সাদা করার সুযোগই কেবল দেওয়া হচ্ছে না, বরং পাচারকৃত অর্থসহ এর আওতা আরও বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। দুর্নীতি দমনের ঘোষণা আর দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদকে বৈধতা দেওয়া শুধু পরস্পর বিরোধী নয়, বরং অনৈতিক, অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক। বছরের পর বছর এই সুবিধা দিয়ে দেশের অর্থনীতির কোনো দৃশ্যমান উপকার হয়নি। অথচ অনৈতিকতা প্রশ্রয় পেয়েছে আর সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, এমন বাস্তবতায় সরকারকে এই আত্মঘাতী পদক্ষেপ থেকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জিএস/আইই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন