বিজ্ঞাপন

কার্টনে মাস্ক কম কেন— ব্যাখ্যা চেয়ে তমা কনস্ট্রাকশনকে চিঠি

June 11, 2020 | 3:17 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নিয়মিত মাস্ক সরবরাহ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তবে সেই মাস্ক নিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম-জালিয়াতির তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এবার জানা গেলে, মাস্ক সরবরাহকারী হিসেবে চুক্তিবদ্ধ তমা কনস্ট্রকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের সরবরাহ করা মাস্ক সংখ্যায় কম এসেছে। প্রথম ২০টি কার্টন খুলে পরীক্ষা করার সময় দেখা গেছে, পাঁচ-ছয়টি কার্টনে এক থেকে দুইটি করে মাস্কের বক্স কম সরবরাহ করা হয়েছে। এসব বক্সের প্রতিটিতে ২০টি করে মাস্ক থাকার কথা।

বিজ্ঞাপন

এ পরিস্থিতিতে সরবরাহ করা কার্টনে মাস্কের বক্স কম থাকার বিষয়টির ব্যাখ্যা চেয়ে তমা কনস্ট্রাকশনকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ওষুধাগার (সিএমএসডি)। আর তমা কনস্ট্রাকশন বলছে, তারা শিপমেন্টের পর নিজেরা গণনা না করেই সিএমএসডি’তে মাস্ক সরবরাহ করেছিল। আর পরিমাণে কম গেলে বিষয়টি অবহিত করলেই তারা পরবর্তী লটের সঙ্গে ঘাটতি মাস্ক সমন্বয় করে দিতে পারত।

কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের ডেস্ক অফিসার (স্টোর) ডা. সাব্বির আহমেদ বুধবার (১০ জুন) এই চিঠিটি ইস্যু করেন। চিঠিতে বলা হয়, চালান অনুযায়ী তমা কনস্ট্রাকশনের এক লাখ আটশ পিস মাস্ক সরবরাহ করার কথা ছিল। সিএমএসডি এসব মাস্ক গ্রহণ করার সময় দৈব চয়নের ভিত্তিতে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে প্রথম দিকের ২০টি কার্টনের মধ্যে পাঁচ-ছয়টি কার্টনে দুয়েকটি করে বক্স কম পাওয়া যায়। এভাবে কার্টনে বক্স না থাকলে আনুপাতিক হারে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মাস্ক কম পাওয়া যাবে।

বিজ্ঞাপন

বিষয়টিকে ‘চুক্তিশর্ত লঙ্ঘন’ উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, ‘এ কারণে প্রাথমিকভাবে মালামাল গ্রহণ করা হলো না। এ বিষয়ে আপনাকে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো।’

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় ওষুধাগারে ৩ লাখ পিস মাস্ক সরবরাহের ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছিল তমা কনস্ট্রাকশন। এর আগে তারা কিছু মাস্ক সরবরাহও করেছিল। সিএমএসডি থেকে সে সময় সরবরাহ করা মাস্কের সংখ্যা জানা যায়নি। তবে এবারের লটে এক লাখ আটশ মাস্ক সরবরাহ করার কথা ছিল তাদের। আর সেই চালানের কিছু কার্টন পরীক্ষা করতে গিয়েই দেখা গেছে, তাতে বক্স কম রয়েছে।

এ বিষয়ে সিএমএসডি’র ডেস্ক অফিসার (স্টোর) সাব্বির আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘তমা কনস্ট্রাকশনের সরবরাহ করা এই এন৯৫ মাস্ক আমরা রিসিভ করিনি। কোনো অর্ডার আমাদের এখানে আসার পর রিসিভ করার আগে আমরা র‌্যান্ডম চেক দেই। সেখানে ২০টি কার্টনের মধ্যে পাঁচ থেকে ছয়টি কার্টনে এক থেকে দুইটি করে বক্স কম পাওয়া যায়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে তারা আমাকে নির্দেশ দেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জবাব চাওয়ার জন্য। সে কারণেই এই চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এর আগেও তমা কনস্ট্রাকশন মাস্ক সরবরাহ করেছে সিএমএসডিতে। ওই সময় সঠিক পরিমাণে মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছিল কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে সাব্বির আহমেদ বলেন, আমরা সেগুলোও এখন চেক করে দেখছি।

এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের পরিচালক আবু হেনা মোরশেদ জামান ও সহকারী পরিচালক ডা. মেজবাহকে ফোন দেওয়া হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তমা কনস্ট্রাকশনের মেডিকেল ডিভশনের কো-অর্ডিনেটর মো. মতিউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, আমরা মাস্কগুলো চীন থেকে আমদানি করেছি। শিপমেন্ট পাওয়ার পরপরই আমরা সেগুলো সিএমএসডি’তে পাঠিয়ে দিয়েছি। ফলে কার্টনে মাস্ক কম থাকার বিষয়টি আমরা নিজেরাই জানতাম না। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা গাফিলতি ছিল বলতে পারেন। আমাদের উচিত ছিল মাস্কগুলো নিজেরা বুঝে নিয়ে তারপর সিএমএসডি’তে সরবরাহ করা।

বিজ্ঞাপন

মতিউর রহমান আরও বলেন, তবে আরেকটি বিষয় আছে। স্টোরে যদি মাস্ক কম যায়, তারা গণনা করে সেই পরিমাণ মাস্কই রিসিভ করে নিতে পারত। এরপর সেই অনুযায় আমাদের বিল দিতে পারত। অথবা আমাদের জানালে পরবর্তী চালানের সঙ্গে কিংবা আলাদাভাবেই যে কয়েকটি মাস্ক কম হয়েছে, সেগুলো সরবরাহ করে সমন্বয় করে দেওয়া যেত। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়ার বিষয়টি অনভিপ্রেত।

ওষুধাগারের পক্ষ থেকে ‘দৈবচয়নের ভিত্তিতে পর্যবেক্ষণে’র বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মতিউর রহমান। তবে সিএমএসডি সূত্র বলছে, তারা যেকোনো অর্ডারের মালামাল গ্রহণের বিষয়টি দুই ধাপে সম্পন্ন করেন। প্রথম ধাপে গোটা চালানের কিছু অংশ দৈবচয়নের ভিত্তিতে (র‌্যান্ডমলি) পর্যবেক্ষণ করা হয়। এরপর সেখান থেকে মালামাল চলে যায় ইনভেন্টরিতে। সেখানে প্রতিটি মালামাল পরীক্ষা করে ও গণনা করে গ্রহণ করা হয়।

সারাবাংলা/এসবি/ইউজে/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন