বিজ্ঞাপন

এই বাজেট মানুষ বাঁচানোর বাজেট: অর্থমন্ত্রী

June 12, 2020 | 5:56 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটকে ‘মানুষ বাঁচানোর বাজেট’ বলে অভিহিত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, এবারের বাজেট কোনো গতানুগতিক বাজেট নয়। অতীতের অর্জন ও অভিজ্ঞতা পাশাপাশি বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফসহ দেশি-বিদেশি ইকোনমিক থিংক ট্যাংক যারা আছে, তাদের সবার মতামত নিয়ে এই বাজেট তৈরি করা হয়ৈছে। আমরা বিশ্বাস করি, ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা পুরো বাজেট আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব।

আরও পড়ুন- বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারব: অর্থমন্ত্রী

শুক্রবার (১২ জুন) ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ বছর প্রথমবারের মতো বাজেটোত্তর এই সংবাদ সম্মেলন অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়।

বিজ্ঞাপন

ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের এই সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী ছাড়াও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মশিউর রহমান, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাংবাদিকরা অংশ নেন।

আরও পড়ুন- করোনা মোকাবিলায় ‘শেকড়’ কৃষিতে ফেরার লক্ষ্য অর্থমন্ত্রীর

বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনের সূচনা বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বছরে মানুষকে রক্ষা করার জন্য, মানুষকে বাঁচানোর বাজেট দেওয়া হয়েছে। টাকা কোথায় থেকে আসবে, কত টাকা লাগবে, সেটা আমরা দেখিনি। মানুষকে বাঁচানোর জন্য যত টাকা লাগবে, তার ব্যবস্থা করা হবে। দেশের মানুষকে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করার জন্য আমরা আগে খরচ করব, তারপর আয় করব। গ্রামবাংলাসহ সারাদেশের অবকাঠামো পুনর্গঠন করা হবে। এই মুহূর্তে অমাদের দায়িত্ব হলো দেশের মানুষকে রক্ষা করা। আমাদের সামনে অন্ধকার নেমে এসেছে, এই অন্ধকার মোকাবিলা করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এরই মধ্যে আমরা ১০০টি ইকোনমিক জোন করে দিয়েছি। এসব জোনে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে। ব্যাংকের সুদের হার ৯ শতাংশ করা হয়েছে। এতে করে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। গত পাঁচ বছর আমরা বাজেটে দেওয়া প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এ বছরেও ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হব।

আরও পড়ুন- ‘মানুষকে বাঁচাতে আয়ের অপেক্ষা না করেই খরচের হিসাব করেছি’

এ বছর দুইটি বিষয় মাথায় রেখে বাজেট তৈরি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। বিষয় দুইটি হলো— করোনাভাইরাসের কারণে যেসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা চিহ্নিত করা; এবং অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুনরুদ্ধারে প্রযোজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এবারের বাজেট স্বাভাবিক সময়ের বাজেট নয়, গতানুগতির ধারার বাজেটও নয়। বাজেট করার আগে আমাদের কাছে ডাটা ছিল না, তথ্য-উপাত্ত ছিল না। স্বাভাবিক পথ ছিল রুদ্ধ। তাই ভিন্ন পথে বাজেট তৈরি করতে হয়েছে। আর এ কারণে বাজেটে কোথাও কোথাও অসঙ্গতি মনে হতে পারে অনেকের কাছে। কিন্তু এ ছাড়া উপায় ছিল না। বাজেট না থাকলে কিভাবে টাকা নেব? তাই বাজেট করতে হয়েচে। গত ১০ বছরে সারাবিশ্বের মধ্যে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল সর্বোচ্চ— ৮ দশমিক ২ শতাংশ। গত ৫ বছরে মাথাপিছু আয়ে আমরা সারাবিশ্বে সেরা। ভারত ও চীন আমাদের সমান ছিল। আমরা এসব অর্জন বিবেচনায় নিয়ে বাজেট করেছি।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- বাংলাদেশকে ‘গরিব দেশ’ বলায় চটলেন অর্থমন্ত্রী

এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হবে কি না, আমরা জানি না। আর দীর্ঘায়িত হলেও আমাদের ব্যবস্থা আছে। এই বাজেট অত্যন্ত নমনীয় (ফ্লেক্সিবল)। করোনা মোকাবিলায় যেকোনো কিছু করার প্রয়োজন হলে আমরা করতে পারব। দেশের মানুষকে বাঁচাতে আমরা প্রবাসী ও বিদেশিদের কাছে যাবো। পাশাপাশি দেশের ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব রয়েছে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা করার দায়িত্ব সরকারের না। সরকারের কাজ হলো দেশের অর্থনীতি গতিশীল  করা। আর দেশের অর্থনীতি গতিশীল হলে পুঁজিবাজার চাঙ্গা হবে।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আগে উপকূলীয় এলাকায় একটিমাত্র ফসল ফলত। এখন আমাদের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে লবণসহিষ্ণু ফসল উদ্ভাবন করেছেন। উপকূলেও এখন তরমুজ, মুগ ডাল উৎপাদন হচ্ছে, যা আগে কখনো হয়নি। উপকূলের কৃষকদের জন্য সব ধরনের সহায়তা থাকবে। আম্পান ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত উপকুলীয় কৃষকদের জন্য বিনামূলো সার ও বীজসহ প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন- প্রথমবারের মতো অনলাইনে বাজটোত্তর সংবাদ সম্মেলন

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, এক ইঞ্চি জমি যেন পতিত না থাকে। এই নির্দেশ বাস্তবায়নে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সে প্রকল্প অনেকটাই চূড়ান্ত হওয়ার পথে। কৃষিতে ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে। কৃষকদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মোবাইল সেবায় সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোয় কলরেট বাড়লে তা নেতিবাচক প্রভাব রাখবে— এমন প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, মোবাইল ফোনের কর বেশি বাড়ানো হয়নি। এটি আগে ১০ শতাংশ ছিল। বর্তমানে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের কষ্ট হওয়ার কথা নয়। কারণ সাধারণ মানুষ ফোনে প্রচুর কথা বলে। রেললাইন দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মোবাইলে কথা বলার সময় অনেক মানুষ মারা গেছে। মোবাইল কল রেট কম বলেই মানুষি এত কথা বলতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের করের হার না বাড়িয়ে করের জাল বাড়ানো দরকার। করের আওতা বাড়ানো গেলে করহার আরও কমানো সম্ভব হবে।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন