বিজ্ঞাপন

ব্যাংকে তারল্য সংকট নেই, সরকারকে ঋণ দিতে সমস্যা হবে না: গভর্নর

June 12, 2020 | 9:08 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশের ব্যাংক খাতে বর্তমানে পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে, তারল্যের কোনো সংকট নেই বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। ফলে বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে বাড়তি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে যে শঙ্কা অনেকেই প্রকাশ করছেন, সেই শঙ্কার কারণ নেই বলেও মনে করছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির গভর্নর বলেন, গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংক খাতে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি নগদ তারল্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। এছাড়া রিজার্ভ রয়েছে আরও ৬২ হাজার কোটি টাকা। ফলে ব্যাংক খাতের তারল্য সমস্যা নেই। বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে সরকার ৮৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিলেও ব্যাংক খাতের কোনো সমস্যা হবে না।

আরও পড়ুন- এই বাজেট মানুষ বাঁচানোর বাজেট: অর্থমন্ত্রী

শুক্রবার (১২ জুন) ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন। প্রশ্নোত্তর পর্বে গণমাধ্যমকর্মীরা ব্যাংক খাত নিয়ে প্রশ্ন করলে গভর্নরকে তার উত্তর দিতে আহ্বান জানান অর্থমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, বৃহস্পতিবার (১১ জুন) জাতীয় সংসদে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। কেবল আকারে নয়, ঘাটতিতেও এটি দেশের বৃহত্তম বাজেট। এই বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে ৮৪ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বাজেটে।

আরও পড়ুন- বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারব: অর্থমন্ত্রী

এর আগে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল বাজেটে। তবে অর্থবছরের ১১ মাসে, অর্থাৎ মে মাস পর্যন্ত ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ২৯৬ কোটি টাকায়। আগামী অর্থ বছরে এর চেয়ে ২০ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা বেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরা হয়েছে বাজেটে।

বিজ্ঞাপন

অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে, ব্যাংক খাত থেকে সরকার বাড়তি ঋণ নিলে তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকের টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। তাছাড়া সরকার ঘোষিত প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনাও ব্যাংকগুলোকেই বিতরণ করতে হবে। এ অবস্থায় ব্যাংক খাত থেকে এত বিপুল পরিমাণ ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা। বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন গণমাধ্যমকর্মীরা।

আরও পড়ুন- করোনা মোকাবিলায় ‘শেকড়’ কৃষিতে ফেরার লক্ষ্য অর্থমন্ত্রীর

অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে এ বিষয়ে উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানান। গভর্নর বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে ৮৪ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা নেওয়া হলেও এই খাতে কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ চলতি অর্থবছরে সরকার ব্যাংক খাত থেকে এরই মধ্যে ৬৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। কোনো সমস্যা হয়নি। আগামী অর্থবছরে ৮৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এতেও কোনো সমস্যা হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, প্রণোদনা বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে রি-ফাইন্যান্স হিসেবে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে ৪০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সিআরআর (ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণ) ছাড় দেওয়া হয়েছে। এতে ১৮ হাজার কোটি টাকাসহ প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকা সহযোগিতা করা হচ্ছে। সরকার ঘোষিত প্রণোদনা বাস্তবায়নেও কোনো সমস্যা হবে না।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ‘মানুষকে বাঁচাতে আয়ের অপেক্ষা না করেই খরচের হিসাব করেছি’

ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রীও জানান, ব্যাংকগুলোতে এখন তারল্য সংকট নেই। তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার সময় ব্যাংক খাতে নন-পারফরমিং লোনের পরিমাণ বেশি ছিল। এ কারণে মাঝে মাঝেই দেখতাম ব্যাংকগুলোর তারল্যের অবস্থা খারাপ হয়ে যেত। ইদানীং কোনো ব্যাংকই লিকুইডটির সমসাায় ভুগছে না। এখন কেউ বলতে পরবে না যে ব্যাংকে গিয়ে টাকা না পেয়েছে ফেরত এসেছে কিংবা ব্যাংকের কাছ থেকে খারাপ আচরণ পেয়েছে। এসময় দেশের রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৩৪ বিলিয়ন অতিক্রম করায় গভর্নরকে অভিনন্দন জানান অর্থমন্ত্রী।

ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া প্রসঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীও। তিনি বলেন, একশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় মন্দার মুখোমুখি আমরা। যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ছয় ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে, এটা তাদের জিডিপি’র এক-তৃতীয়াংশ। এই ঋণ নিয়ে তারা সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন খাতকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সে তুলনায় আমাদের এখানে যে পরিমাণ ঋণের কথা বলা হচ্ছে, সেটা অনেক কম।

আরও পড়ুন- বাংলাদেশকে ‘গরিব দেশ’ বলায় চটলেন অর্থমন্ত্রী

তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে আমাদের ভয় পাওয়ার কারণ নেই। ব্যক্তি বা পারিবারিক প্রয়োজনে যেমন মানুষকে ধার নিতে হয়, রাষ্ট্রীয় কাজেও তেমনি সরকারকে ধার নিতে হয়। এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পরে আরও দুয়েকটি বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন। বাজেটে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর বিষয়ে ফজলে কবির বলেন, ১০ লাখ টাকার বেশি যাদের আমানত আছে, তাদের আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। তবে ১০ লাখ টাকার কম আমানত হলে তাদের শুল্ক বাড়ানো হয়নি।এতে করে আমানতের কোনো সমস্যা হবে না। সঞ্চয়পত্রের কারণে আগে ব্যাংকে আমানতের চাপ কম ছিল। কিন্তু এখন সে অবস্থা নেই।

বিদেশি বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ নিয়ে যাচ্ছে— এমন প্রশ্নের জবাবে ফজলে কবির বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক লভ্যাংশ নেওয়ার বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করে না। যদি শেয়ার বিক্রি করে নিয়ে যায় তখন দেখা হয়।

ফাইল ছবি

আরও পড়ুন-

প্রথমবারের মতো অনলাইনে বাজটোত্তর সংবাদ সম্মেলন

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন