বিজ্ঞাপন

করোনাকালে আইনিসেবা বঞ্চিত মোবাইল কোর্টে সাজাপ্রাপ্তরা

June 15, 2020 | 8:22 am

জসিম উদ্দিন মজুমদার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

খাগড়াছড়ি: করোনার কারণে খাগড়াছড়িতে ভ্রাম্যমাণ আদালতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা কারাগারে সাজা খাটছেন। কোর্ট না বসায় তারা আপিল বা জামিনের আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছেন না। আসামিদের পরিবার ও আইনজীবীদের অভিযোগ, সাংবিধানিকভাবে পাওয়ার কথা থাকলেও মোবাইল কোর্টে সাজাপ্রাপ্তরা আইনিসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের কারণে ২৪ মার্চ থেকে পুরো মে মাস পর্যন্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বন্ধ ছিলো। যে কারণে এসব আসামিরা আপিল, জামিনের আবেদন করা এবং আবেদনগুলোর শুনানি করতে পারেননি। ১ জুন থেকে অফিস খুললেও শনিবার (১৩ জুন) পর্যন্ত কোন আপিল, জামিনের দরখাস্ত সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট গ্রহণ ও শুনানি না করায় আইনিসেবা বঞ্চিত সাজাপ্রাপ্ত হাজতিরা।

খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের জেলার মো. দিদারুল আলম জানান, জেলা কারাগারে মোবাইল কোর্টে সাজাপ্রাপ্ত ১০ আসামি ছিলো। এর মধ্যে একজনের সাজা গত ৫ জুন শেষ হওয়ায় তিনি বের হয়ে গেছেন। করোনার কারণে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বন্ধ থাকায় তারা কোনো ধরনের আবেদন করতে পারেননি এবং আইনি সুবিধাও নিতে পারেননি।

খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার আইয়ুবনগর এলাকার আলেয়া বেগম জানান, তার স্বামী হাবিল মিয়াকে গত ১৬ মার্চ যৌতুকনিরোধ আইনের ৮ ধারায় অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। সেই থেকে তিনি জেলেই আছেন। করোনার কারণে তারা আইনের আশ্রয় নিতে পারেননি। অফিস খোলার পর (১ জুন) আপিল দায়েরপূর্বক জামিন মঞ্জুরের দরখাস্ত দিলেও তা এখনও গ্রহণ করেননি খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক ও  জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।

বিজ্ঞাপন

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার শালবন এলাকার হাছান মিয়া জানান, তার ভাই মো. মানিক মিয়াকে গত ৫ মে তারিখে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া আসফার সায়মা বালুমহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ১১ ধারায় ১ মাসের সাজা দেন। ঈদের আগে আপিল দায়ের করে জামিনের দরখাস্ত দিলেও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তা গ্রহণ না করায় শুনানিও হয়নি, জামিনও হয়নি।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আইনের সেবা না পাওয়ায় পুরো সময়টা হাজতবাস করতে হলো আমার নিরাপরাধ ভাইকে।’

বাংলাদেশে বর্তমানে ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে সকল আদালতে জেলে থাকা আসামীদের জামিন শুনানীক্রমে জামিনে বেরিয়ে আসছে কিন্তু আমরা আইনানুগ প্রক্রিয়ায় এগোলেও কাজ হয়নি। সংবিধানের ৩১ ধারায় যে আইনের আশ্রয় লাভের কথা বলা হয়েছে-তা কাদের জন্য বলে প্রশ্ন করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

খাগড়াছড়ি জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আশুতোষ চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আকতার উদ্দিন মামুন বলেন, ‘দেশে ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট, জজ কোর্ট, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের বিচারকরা হাজতে বা জেলে থাকা আসামিদের জামিন আবেদনের শুনানি করছেন। কিন্তু তা থেকে বঞ্চিত খাগড়াছড়ি জেলায় মোবাইল কোর্টে সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা। গত ১ জুন হতে অফিস আদালত খুললেও এখন পর্যন্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বন্ধ থাকায় মোবাইল কোর্টে সাজাপ্রাপ্তরা আইনিসেবা বঞ্চিত।’

‘খাগড়াছড়িতে করোনাকালের পুরো সময় ধরে মোবাইল কোর্ট চলছে। বিভিন্ন আইনে জেল-জরিমানা দেওয়া হচ্ছে। যদি কোর্ট চালাতে অসুবিধা না হয়, তাহলে সাজাপ্রাপ্তদের আপিল করে জামিন শুনানি করতে দিতে অসুবিধা কোথায়’, প্রশ্ন দুই আইনজীবীর।

পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট বিধান কানুনগো জানান, সরকার থেকে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা না থাকায় আইনিসেবা বঞ্চিত মোবাইল কোর্টে সাজাপ্রাপ্তরা।’ তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্টেটের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘করোনার কারণে সরকারি নির্দেশে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বন্ধ আছে, এখন পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে কোর্ট চালু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসেনি। আগামী ১৫ জুনের মধ্যে কোন সরকারি নির্দেশ এলে, পুনরায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ন্ত্রণাধীন আদালতগুলোর কার্যক্রম শুরু হবে।’

বিজ্ঞাপন

করোনাকালে যদি মোবাইল কোর্ট চলতে পারে, তাহলে সেসব কোর্টের আসামিরা কেন সাংবিধানিকভাবে আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পুরো দেশেই মোবাইল কোর্টের সব কাজ চলছে। সরকার নির্দেশনা দিলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সারাবাংলা/এমও

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন