বিজ্ঞাপন

‘করোনায় প্রস্তুতি ও সুশাসনের ঘাটতিতে দেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে’

June 15, 2020 | 7:20 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত কার্যক্রমে সুশাসনের প্রতিটি নির্দেশকের ক্ষেত্রে ব্যাপক ঘাটতি লক্ষ করা যায়। দীর্ঘসময় ধরে পরিকল্পনাহীনতা, সুশাসনের ঘাটতি ও অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দের কারণে স্বাস্থ্যখাতের দুর্বল সক্ষমতা করোনার সংকট উন্মোচিত হয়েছে বলে বলা হয়েছে টিআইবির এক প্রতিবেদনে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৫ জুন) ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ শীর্ষক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টার ন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআঅইবি)‘র এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

এ সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান গবেষণার সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাস মোকাবেলায়, সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমে পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের ঘাটতি প্রকটভাবে লক্ষ করা গেছে। চীন দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর তিন মাস সময় হাতে পেয়েও করোনাভাইরাস মোকাবিলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ না করায় এবং সুশাসনের ঘাটতির কারণে দেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। এইসব ঘাটতি মোকাবিলায় টিআইবির পক্ষ থেকে ১৭ দফা সুপারিশমালা দেয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

টিআইবির সুপারিশ মালায় মধ্যে রয়েছে, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের বিদ্যমান যন্ত্রপাতি ও জনবলের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে নমুনা পরীক্ষার সুবিধা জেলা পর্যায়ে আরও সম্প্রসারণ এবং বিদ্যমান সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। করোনাভাইরাসের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ হার ও মৃত্যুর সময়ে লকডাউন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে। লকডাউন প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে যৌক্তিক ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং পরীক্ষার সম্প্রসারণের মাধ্যমে সংক্রমণের ব্যাপকতার নিরিখে এলাকাভিত্তিক ঝুঁকি বিবেচনা করতে হবে।

এছাড়া সুপারিশমালার মধ্যে রয়েছেছে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি দফতরের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে জেলা পর্যায়ে সার্বিকভাবে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে (জিডিপির ৫ শতাংশ), এবং স্বাস্থ্যখাতের ব্যয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যখাতে ক্রয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে জবাবদিহিতা নিশ্চিত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হববে। সকল পর্যায়ের হাসপাতালসমূহে স্ক্রিনিং ও ট্রায়াজ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে; সম্মুখ সারির সকল স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ মানসম্মত সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

সুপারিশমালায় আরও বলা হয়েছে, সমন্বিত চিকিৎসার প্রয়োজনে বেসরকারি হাসপাতালসমূহকে সরকারি বিধির অধীনে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে সকল বেসরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, সকল হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের চিকিৎসার পাশাপাশি অন্যান্য রোগের জন্য নিয়মিত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করে সংকটাপন্ন রোগীর চিকিৎসায় অস্বীকৃতির ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যবহৃত সুরক্ষা সামগ্রীসহ চিকিৎসা বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। অতি দরিদ্র এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক, দিনমজুরদের জন্য আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে; চলতি কৃষি ঋণ মওকুফ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া ত্রাণ ও সামাজিক সুরক্ষার উপকারভোগীদের তালিকা হালনাগাদ করতে হবে; ত্রাণ বা নগদ সহায়তাপ্রাপ্ত উপকারভোগীদের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা, দেশজুড়ে প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতার জন্য সরকারি বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গবেষণাটি প্রকাশের জন্য গত ১৫ এপ্রিল হতে ১৪ জুন, ২০২০ পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের কাজ করা হয়েছে। তবে জরিপে প্রাপ্ত তথ্যের সময়কাল ২০ মে, ২০২০ পর্যন্ত। এছাড়া অনলাইন চেকলিস্ট ব্যবহার করে সারাদেশের ৩৮টি জেলা থেকে ৪৭টি হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ এবং ৪৩টি জেলা থেকে স্থানীয় নাগরিক (সাংবাদিক, শিক্ষক, পেশাজীবী) থেকে ত্রাণ বিতরণের তথ্য এবং চিকিৎসক ও সাংবাদিকের সঙ্গে টেলিফোন সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তাদের নিকট হতে প্রাপ্ত তথ্য সংগৃহীত হয়েছে।

সারাবাংলা/জিএস/এমআই

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন