বিজ্ঞাপন

‘ত্বকী হত্যার বিচার  হচ্ছে না কেন?’

March 6, 2018 | 9:39 am

আশিকুর রহমান হান্নান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

নারায়ণগঞ্জ: ৫ বছর পেরিয়ে গেছে , ত্বকী নেই । কিন্তু মা রওনক রেহানা কাছে ত্বকী এখনো জীবত। তাই এখনো খাতার ফাঁকে ফাঁকে ত্বকীর লেখা কবিতা পড়েন। বিড়বিড়িয়ে কথা বলেন ছেলের সাথে । আদরের ছেলেকে বলা হয়নি, এমন একটা কিছু বলার অপেক্ষায় থাকেন তিনি।

শিশুপুত্র হত্যার বিচার না পেয়ে হতাশ ত্বকীর মা রওনক রেহানা বলেন, ’ছোট্ট একটা শিশুকে তারা বড় হতে দিল না। বিচারহীনতার সংস্কৃতির জন্য এমনটা হচ্ছে। যারা ক্ষমতায় আছে তারাই তো বিচার করবে। বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা আবার মাথা নাড়া দিয়ে উঠছে। সরকারের কাছে ত্বকী হত্যার বিচারের জন্য এখনো আমি তাকিয়ে আছি।বিচার হচ্ছে না কেন? আর কত বছর অপেক্ষা করব?

ত্বকী হত্যাকান্ডের বিচারে প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে বলে মনে করেন নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি। তিনি বলেন, সব কিছু প্রমানিত হওয়ার পরও ত্বকী হত্যার বিচার হচ্ছে না, এটি একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য কোন সুবিচার হতে পারে না এটি। সব কিছু প্রমানিত হওয়ার পরেও মনে হয়, হয়ত সরকার এই মামলা সমাধানে ব্যাপারে উদাসীন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছাড়া এই হত্যাকান্ডের কোন সমাধান কোন দিনই হবে না বলে মনে করেন তিনি ।ত্বকীর বাবা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন,প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময় তার বক্তব্যে বলেন শিশু হত্যাকারী ঘৃণ্য জীব। তাহলে ত্বকী হত্যার বিচার কেন হচ্ছে না?

বিজ্ঞাপন

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারন সম্পাদক আব্দুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য ত্বকী হত্যাকান্ডের বিচার হওয়া প্রয়োজন। ত্বকী হত্যার বিচার পেতে ৫ বছর ধরে আন্দোলন করতে হচ্ছে । তারা চাননা এই আন্দোলন  আরো দীর্ঘ হোক।

মানবাধিকার কর্মী মাহবুবুর রহমান মাসুম সারাবাংলাকে বলেন, এ হত্যাকান্ডের তদন্ত বন্ধ হওয়ার কারন এটিই প্রমান করে যে একটি প্রভাবশালী পরিবার এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত। ত্বকী হত্যাকান্ডের সকল কিছু স্পষ্ট তারপরেও এই হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়া আমাদেরকে হতাশ করে।ত্বকী হত্যার বিচারহীনতা বিচার বিভাগকে এক ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে। আসন্ন নির্বাচনে ত্বকী হত্যার বিচারটি ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে। আমি আশা করি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই হত্যার বিচার অচিরেইে হবে।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জে নিজ বাসার কাছ থেকে অপহৃত হয় মেধাবী ছাত্র তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী। দু’দিন পর ৮মার্চ নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষা নদীর খাল থেকে পুলিশ উদ্ধার করে তার নিথর দেহ।পরবর্তীতে এই হত্যাকান্ড নিয়ে মামলা হলে উচ্চ আদালত র‌্যাবকে এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়। এদিকে এ হত্যাকান্ডের পর পরই শুধু নারায়ণগঞ্জ জেলাই নয় এ দেশে ব্যাপক হারে বেড়ে যায় শিশু হত্যাকান্ড। নাগরিক সমাজ মনে করেন ত্বকী হত্যাকান্ডে বিচার না হওয়াতেই শিশু হত্যাকারীদের সাহস  বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও তার পরিবারকে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ করে আসছে ত্বকীর পরিবার। এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে র‌্যাব এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে সুলতান শওকত ভ্রমর ত্বকী হত্যার জন্য সাংসদ শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমীর ওসমানের জড়িত থাকার কথা জানিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি  দেন। র‌্যাব মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ২০১৩ সালের ৭ আগষ্ট আজমীর ওসমানের কার্যালয়ে অভিযান চালায়।

ত্বকী হত্যার তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব ২০১৪ সালের ৫ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, ওসমান পরিবারের নির্দেশেই তাদের টর্চার সেলে ত্বকীকে ১১ জন মিলে হত্যা করে। সে সময় তারা সাংবাদিকদের একটি অভিযোগপত্র সরবরাহ করে জানান তা অচিরেই আদালতে পেশ করা হবে।

সারবাংলা/এআর/জেডএফ

 

বিজ্ঞাপন

 

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন