বিজ্ঞাপন

‘মা-মেয়ে ও জামাই মিলে হত্যা করে ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী হেলালকে’

June 20, 2020 | 9:19 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দক্ষিণখানে ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী কোরআন হাফেজ হেলাল উদ্দিনকে মা-মেয়ে ও জামাই মিলে হত্যা করার পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে মৃতদেহ তিন টুকরো করে। এরপর মৃতদেহের টুকরোগুলো তিনটি আলাদা ব্যাগে ভরে তিনটি আলাদা স্থানে ফেলে দেয় জামাই। মা ও মেয়েকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও জামাই এখনও পলাতক রয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের পুরো বর্ণনা দিয়েছে মা ও মেয়ে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২০ জুন) সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিবি উত্তর) মশিউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, গত ১৪ জুন হেলালের মৃতদেহের তিনটি টুকরো উদ্ধারের পর গোয়েন্দা পুলিশ মাঠে নামে। দক্ষিণখানের গাওয়াইর এলাকা থেকে কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায়, এক ব্যক্তি অটোরিকশায় করে মৃতদেহের টুকরো ফেলছে। এটি অনুসরণ করেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা হয়।

তিনি জানান, গত ১৮ জুন রাতে দক্ষিণখানের প্রেম বাগান ও উত্তরার আব্দুল্লাহপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাহীনা আকতার (৪৮) ও তার মেয়ে মনিষা সরকারকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে লুট হওয়া ৩৩ হাজার টাকাও উদ্ধার করে ‍পুলিশ। তবে মেয়ের জামাই চার্লস রুপম সরকারকে এখনও গ্রেফতার কার যায়নি।

হেলালকে হত্যার দায় স্বীকার করে লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে মা ও মেয়ে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, গত ১৪ জুন ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী হেলালকে খ্রিষ্টান মেয়ে জামাই চার্লস রুপম সরকারের মাধ্যমে বাসায় ডেকে নেয় তারা। একটি ফটোস্ট্যাট মেশিন বিক্রির কথা বলে হেলালকে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে প্রথমেই তাকে চা পান করতে দেয়। চায়ের মধ্যে চার্লস রুপম ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। চা পানের পর হেলাল সেখানে ঘুমিয়ে পড়লে স্যাটেলাইট ক্যাবল পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করে মনিষা সরকার ও তার স্বামী চার্লস রুপম সরকার। এরপর মৃতদেহ গুম করার জন্য তিন টুকরো করা হয়।

বিজ্ঞাপন

মা শাহীনা আকতার গোয়েন্দা পুলিশকে বলে, ‘প্রথমে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হেলালের মাথা শরীর থেকে আলালা করে একটি ছোট ব্যাগে ভরে কবরস্থানের ড্রেনে ফেলা হয়। এরপর নাভী বরাবর কেটে আরও দুই টুকরো করা হয়। পরে সেগুলো দুই বস্তায় ভরে আলাদা জায়গায় ফেলা হয়। মরদেহ ফেলার পুরো কাজটি চার্লস রুপম সরকার একাই করে।’

এদিকে সিসিটিভি পর্যালোচনা করে ডিবির ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ‘সন্দেহভাজন খুনি মৃতদেহের টুকরো বস্তায় ভরে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর সে রাস্তায় এসে ব্যাটারিচালিত একটি অটো রিকশা ভাড়া করে। বস্তাটি রিকশায় তুলে সেও উঠে পড়ে। কিছুদূর যাওয়ার পর অটোরিকশাটি একটি গলির সামনে দাঁড় করানো হয়। পরে এদিক সেদিক তাকিয়ে অটোরিকশা চালককে ভাড়া পরিশোধ করে বস্তাটি কাঁধে করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। কিছুক্ষণ পর ওই গলি থেকে বেরিয়ে যায় সন্দেহভাজন খুনি।

মা ও মেয়ে শুক্রবার (১৯ জুন) আদালতে ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। রুপমকে গ্রেফতারে ডিবির অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান মশিউর রহমান।

বিজ্ঞাপন

এদিকে আদালত সূত্রে জানা যায়, হেলালের ব্যবসার টাকা লুট করতেই পরিকল্পিতভাবে মা-মেয়ে ও জামাই মিলে হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এরপর ঠান্ডা মাথায় সবাই মিলে হেলালের মৃতদেহ তিন টুকরো করে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেয়।

গত ১৫ জুন দক্ষিণ খানের গাওয়াইর ও বিমানবন্দরের ঝোপ থেকে মরদেহের দুই টুকরো উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর ১৭ জুন গাওয়াইর কবরস্থানের পাশের ড্রেন থেকে মাথা উদ্ধার করে পুলিশ। স্বজনরা মৃতদেহের পরিচয় শনাক্ত করলে ডিবি এর রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে।

দক্ষিণখান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সারোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, হেলাল দক্ষিণ খানের বাসিন্দা। তিনি কোরআনে হাফেজ ছিলেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে। এর পাশাপাশি তিনি ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করতেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন