বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগের হাত দিয়েই বাঙালির সব অর্জন

June 23, 2020 | 9:59 pm

ড. সেলিম মাহমুদ

বাঙালি জাতি স্বাধীনতা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যা কিছু পেয়েছে, তার সবটুকুই পেয়েছে আওয়ামী লীগের কারণে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দীর্ঘ মুক্তি-সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল। মোটা দাগে বলতে গেলে, বঙ্গবন্ধু সমকালীন বিশ্ব ব্যবস্থার বিপরীতে অবস্থান নিয়ে বাঙালির স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন। ন্যূনতম সময়ের মধ্যে পৃথিবীর অন্যতম সেরা একটি সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন, যা পৃথিবীর অসংখ্য দেশ বহু বছর সময় নিয়েও করতে পারেনি। স্বাধীনতাকে টেকসই ও চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি অর্জন করেছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক রাজনীতির ইতিহাসকে ভুল প্রমাণ করে। ফ্রেন্ডশিপ চুক্তির মাধ্যমে মাত্র তিন মাসের মাথায় বাংলাদেশ থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছিল ভারত। পৃথিবীর প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কোনো অঞ্চলে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এভাবে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটেনি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা নিষ্কণ্টক ও টেকসিই করার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা ভারতের সঙ্গে স্থল সীমানা চুক্তি সই করে। আবার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগই সেই চুক্তি ব্স্তবায়ন করেন। বাংলাদেশের জাতীয় সব প্রতিষ্ঠানের জন্ম আওয়ামী লীগের হাত দিয়েই। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ বাঙালির অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্যে একটি পরিপূর্ণ সংবিধান দিয়ে গিয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধু কী রকম বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন, বাংলাদেশ নিয়ে তার কী স্বপ্ন ছিল— সেটি তিনি সংবিধানে বলে গিয়েছেন। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ও মৌলিক অধিকারের অধ্যায়সহ আমাদের সংবিধানের অন্যান্য অংশে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের কথারই প্রতিফলন রয়েছে। বঙ্গবন্ধু মানুষে মানুষে সব ধরনের বৈষম্য, বঞ্চনা ও শোষণ নির্মূল করার লক্ষ্যে যথাযথ সাংবিধানিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। স্বাধীন দেশে যেন উপনিবেশিক আমলের শোষণ অব্যাহত না থাকে, সেই লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু বাংলদেশের অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর বহুজাতিক কোম্পানির ইজারাভিত্তিক মালিকানা সাংবিধানিক বিধানের মাধ্যমে রহিত করেন।

আওয়ামী লীগ জাতীয়তাবাদ, শোষণ মুক্তির লক্ষ্যে সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার সুরক্ষার বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে। বঙ্গবন্ধুর সংবিধান কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তির লক্ষ্যে সংবিধানে বিশেষ বিধান করেন। বঙ্গবন্ধু প্রণীত সংবিধানে নাগরিকগনের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবন ধারনের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার রয়েছে। রয়েছে গ্রামীণ উন্নয়ন, কৃষি বিপ্লব, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার অঙ্গীকার।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শুধু বাংলাদেশের জন্য রাজনৈতিক স্বাধীনতাই এনে দেয়নি, এই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার জন্য জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন ছিল তার সবটুকুই করেছে।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশীয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদের ওপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা (Permanent Sovereignty Over Natural Resources) প্রতিষ্ঠা করে। এই আইনি অধিকারের ধারণাটি তৎকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক আইন অঙ্গনে একদমই নতুন ছিল। ঔপনিবেশিক শক্তি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর অনুকূলে খনিজ ও জ্বালানি সম্পদের ওপর প্রদত্ত ইজারাভিত্তিক মালিকানা জাতীয় স্বার্থে বাতিল করে জারি করা বঙ্গবন্ধুর এই বিধান সমকালীন সময়ে পৃথিবীর খুব কম দেশই তাদের সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করতে পেরেছিল। বঙ্গবন্ধুর এই পদক্ষেপ ছিল তারই নেতৃত্বে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী মাইলফলক অর্জন। জাতির পিতা গ্রামীণ উন্নয়ন এবং নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য দূর করার জন্য গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতায়নের বিষয়টিকে  সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করেছেন (অনুচ্ছেদ-১৬)। বঙ্গবন্ধুর এই বৈপ্লবিক ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। তৎকালীন তৃতীয় বিশ্বে এটি একটি অনুসরণীয় মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করার লক্ষ্যে দেশের জ্বালানি খাতকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে যে পেট্রালিয়াম আইন ও পেট্রোলিয়াম পলিসি প্রণয়ন করেন, তার আওতায় তিনি দেশীয় কোনো মূলধন বা বিনিয়োগ ছাড়াই বিদেশি বা বহুজাতিক কোম্পানির মাধ্যমে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনের লক্ষ্যে ‘উৎপাদন বণ্টন চুক্তি’ পদ্ধতি বাংলাদেশে প্রবর্তন করেন। বর্তমানে সারাবিশ্বে এই মডেলটি বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় হলেও ওই সময় পৃথিবীর অনেক দেশেই এই মডেলটির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৫৯-এর মাধ্যমে দেশের সবখানে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিদ্যুৎ খাত পুনর্গঠন করেন। জাতির পিতা ১৯৭৫ সালের ১৪ মার্চ The ESSO Undertaking Acquisition Ordinance 1975-এর মাধ্যমে বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের ESSO Eastern Inc.-কে অধিগ্রহণ করে এ দেশে জ্বালানি তেল মজুত, সরবরাহ ও বিতরণে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেন। বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত এসব স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানগুলোই আজও এ দেশের তেল খাতের জ্বালানি নিরাপত্তা বলয় হিসেবে কাজ করছে। বঙ্গবন্ধু তার দৃঢ় মনোবল, মেধা, সাহস ও সুকৌশলের মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট বহুজাতিক কোম্পানি শেল ইন্টারন্যাশনালকে পাঁচটি বৃহৎ গ্যাসক্ষেত্র (তিতাস, বাখরাবাদ, রশিদপুর, কৈলাশটিলা ও হবিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র) মাত্র ১৭ দশমিক ৮৬ কোটি টাকায় বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য করেছিলেন, যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ১২ লাখ কোটি টাকা। এটি কেবল আর্থিক মূল্য, এর অর্থনৈতিক মূল্য তার চেয়ে বহুগুণ বেশি। স্বাধীন বাংলাদেশে গত চার দশকে যতটুকু শিল্পায়ন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, তার মূল চালিকাশক্তি ছিল বঙ্গবন্ধুর নামমাত্র মূল্যে কেনা গ্যাস ক্ষেত্রগুলো। মোটা দাগে বলতে গেলে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সফলভাবে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতাকে টেকসই করতে পেরেছিল। এই কৃতিত্ব শুধুই বঙ্গবন্ধুর ও তার আওয়ামী লীগের। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সম্পাদিত ২৫ বছরের ফ্রেন্ডশিপ চুক্তিকে গোলামি চুক্তি বলে অপপ্রচার করেছিল পঁচাত্তর পরবর্তী অবৈধ সরকারগুলো ও তাদের উচ্ছিষ্টভোগী কিছু নীতিভ্রষ্ট বুদ্ধিজীবী। অথচ জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ ও মর্যাদার সুরক্ষা বিবেচনায় জাতির পিতার সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের এই চুক্তি ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম চুক্তি। এই চুক্তির মাধ্যমেই মাত্র তিন মাসের মাথায় বাংলাদেশ থেকে ভারত তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। পৃথিবীর প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কোনো অঞ্চলে যুদ্ধপরবর্তী সময়ে এভাবে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃত অর্থে, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে টেকসই করার ক্ষেত্রে এই চুক্তির বিশেষ ভূমিকা ছিল। মহলবিশেষ এত বছর একে একটি গোলামি চুক্তি হিসেবে অপপ্রচার করলেও এই চুক্তির ১২টি অনুচ্ছেদের প্রতিটি অনুচ্ছেদই ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পরিচায়ক ও বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূলে। ভৌগলিক সীমারেখা বিবেচনায় প্রতিবেশী কোনো ছোট রাষ্ট্রের সঙ্গে বড় কোনো রাষ্ট্রের এ ধরনের আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ চুক্তি পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

বিজ্ঞাপন

জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর অর্পিত হয়। তিনি সব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে পরাভূত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা অর্জনে যা যা কাজ বাকি ছিল, তার প্রতীটিই অত্যন্ত নিপুণভাবে সম্পন্ন করে যাচ্ছেন। তিনি শাসনভার নিয়েছিলেন জনগণের জন্য, আমাদের সবার জন্য। তিনি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছেন, গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছেন, আর সংসদকে সত্যিকার অর্থে কার্যকর করে সংসদের কাছে সবার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছেন। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু মৃত্যুর হার, পরিবেশ, কৃষি, শিল্পায়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিনিয়োগ ইত্যাদিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে একটি অনুকরণীয় রাষ্ট্র। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উপনীত হয়েছে। দেশের এই যুগান্তকারী সাফল্যের কৃতিত্ব একমাত্র জননেত্রীর। মানুষের প্রতি তার মমত্ববোধ আর ভালোবাসার কারণে তিনি আজ বাংলাদেশকে বানিয়েছন একটি কার্যকর কল্যাণমুখী রাষ্ট্র। এ দেশের মানুষের জন্য তার প্রবর্তিত ‘সোস্যাল সেফটি নেট’ বা সামাজিক নিরাপত্তা বলয় গোটা উন্নয়নশীল বিশ্বে এক অনন্য ঘটনা।

২০ লাখ শহিদের রক্তে লেখা আমাদের সংবিধানকে তিনিই কলঙ্কমুক্ত করেছেন। পঁচাত্তরের পর অসাংবিধানিক সরকারের সময় এই পবিত্র সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। তিনিই এই সংবিধান থেকে মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী সব বিধান বাতিল করেছিলেন। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানে আবার প্রতিষ্ঠিত করেছেন। উন্নয়নশীল বিশ্বে তিনিই একমাত্র সফল রাষ্ট্রনায়ক যিনি সংবিধানকে সকল অপশক্তি থেকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য বিশেষ সাংবিধানিক রক্ষাকবচ (constitutional entrenchment) তৈরি করেছেন, যার সুফল আজ গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষ পাচ্ছে। তিনিই এ দেশে গণহত্যাকারী, মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধকারীদের গাড়িতে যখন জাতীয় পতাকা উড়ছিল, তখন এ দেশে তাদের বিচার হবে না— এমন একটি ধারণায় যখন মানুষ হতাশাগ্রস্ত ছিল, তিনিই তখন জাতির সামনে আশার আলো প্রজ্জ্বলিত করেছিলেন। জাতির পক্ষে ঘোষণা দিয়ে এই নরঘাতকদের তিনিই বিচার করেছেন। বাঙালির ইতিহাসে জাতি হিসেবে এটি একটি মাইলফলক অর্জন ছিল। এর কৃতিত্ব একমাত্র প্রিয় নেত্রীর।

রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে জননেত্রী অনন্য সাফল্য দেখিয়েছেন। জাতির পিতার দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় নেত্রীর ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ (মধ্যম আয়ের দেশ) ও রূপকল্প-২০৪১ (উন্নত দেশের মর্যাদা) অর্জনে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, গোটা উন্নয়নশীল বিশ্বের একমাত্র সরকারপ্রধান, যিনি জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তার সমার্থক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি সরকারপ্রধান হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগী এই মডেলটির প্রশংসা করেছেন। শেখ হাসিনার সরকার এক দশকে দেশে ব্যাপকভিত্তিক শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে অব্যহতভাবে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা করে বিস্ময়কর অগ্রগতিসাধন করেছেন। এক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ অন্যতম প্রধান নিয়মক হিসেবে কাজ করেছে।

শেখ হাসিনাই দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম রাষ্ট্রনায়ক যিনি ‘এনার্জি ডিপ্লোমেসি’-কে আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে প্রধান্য দিয়ে আসছেন। জননেত্রীর উদ্যোগে ভারত থেকে নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ আনার জন্যে যে ক্রসবর্ডার ইন্টারকানেকশনগুলো স্থাপিত হয়েছে, সেগুলো বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী ঘটনা। নেত্রী এটি অনুধাবন করেছিলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। বিদ্যুৎ আর জ্বালানির সংস্থান আর উৎপাদনে তিনি রেকর্ড স্থাপন করেছেন। একটি কথা আমরা জানি, জাতির পিতা যে গ্যাস সম্পদ আমাদেরকে দিয়ে গিয়েছিলেন, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা, তথা সার্বিক উন্নয়নের জন্য সেই সম্পদ রক্ষা করেছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। এই সম্পদ রক্ষা করেছিলেন বলে ২০০১ সালের প্রহসনমূলক নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরে নেত্রী দেশের সমুদ্রসীমা রক্ষা করতে গিয়েছেন। দেশি-বিদেশি সব বিশেষজ্ঞ ও গবেষকের হাইপোথিসিসকে ভুল প্রমাণ করে তার সুদক্ষ ও সাহসী নেতৃত্ব এবং সফল এনার্জি ডিপ্লোমেসির কারণে তিনি মিয়ানমার ও ভারতের দাবির বিরুদ্ধে বিশাল সমুদ্রসীমা জয় করেছন। আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে পৃথিবীর খুব কম দেশই এত সফলভাবে সমুদ্রের ওপর তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। এই কৃতিত্ব কেবলই রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার।

পাকিস্তান সরকার ২৪ বছরে, জিয়া এরশাদ ও খালেদা জিয়ার মোট ৩১ বছর শাসনামলে যেখানে ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারেনি, শেখ হাসিনার সুদক্ষ উদ্যোগ ও কার্যকর ডিপ্লোমেসি’র কারণে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারত গ্রহণ করেছে, যার মোট আয়তন ৭১১০ একর ভূমি। আর ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশ পেয়েছে, যার মোট আয়তন ১৭ হাজার ১৬০ একর ভূমি। এর ফলে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে ১০ হাজার ৫০ একর ভূমি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর চুক্তি সম্পাদন ও শেখ হাসিনার মাধ্যমে চুক্তি বাস্তবায়নের কারণে আজ বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে এই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভূমি লাভ করেছে।

রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস উদ্ভূত সব বিষয় ইস্পাত কঠিন মনোবল নিয়ে পারদর্শিতার সঙ্গে মোকাবিলা করছেন। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় যা যা প্রয়োজন, তিনি তার প্রত্যেকটাই করে যাচ্ছেন। তিনি দেশের মানুষকে বাঁচাতে ও অর্থনীতিকে রক্ষা করতে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার অনুদান ও প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছেন। এক শ্রেণির নিন্দুক আছে যারা সারাটি জীবন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করে আসছে। শেখ হাসিনার প্রতিটি অর্জনেই তারা বিরোধিতা করেছে; চরম অপপ্রচার আর মিথ্যাচার করেছে। তাদের সব অপপ্রচারকে তিনি পৃথিবীর কাছে অসত্য প্রমাণ করেছেন। তাদের মিথ্যাচার আর তথ্য সন্ত্রাস এখনো থেমে নেই। এখন আবার সেই পুরোনো শকুন অপপ্রচারে নেমেছে। করোনাভাইরাস নিয়ে তারা অসংখ্য লাশ চায়। এ সংখ্যা দুই মিলিয়ন অর্থাৎ ২০ লাখ মানুষের। তারা অপপ্রচার করে জনমনে নানা ভীতির সঞ্চার করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে কেন এখনো যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি আর স্পেনের মতো মানুষ মরছে না, এজন্য তারা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। তারা বাংলাদেশে সত্যিকারের একটা মহামারি চায়, যেখানে হাজার হাজার এমনকি লাখ লাখ মানুষ মারা যাবে। সম্প্রতি তাদের কয়েকজনের লেখায় সেটাই পরিষ্কার হয়েছে। বাংলাদেশ তথা বিশ্ববাসীর এই সংকটের মধ্যেও তারা সরকার পতনের উপাদান খুঁজে বেড়ায়। তারা প্রতিদিনই নানা রকমের অপপ্রচার করে যাচ্ছে। এই বৈশ্বিক মহামারি মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে যা যা করণীয়, শেখ হাসিনার সরকার তার প্রত্যেকটিই করছেন। তার বলিষ্ঠ নির্দেশে প্রতিটি কাজই হচ্ছে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে।

পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় অনেক দ্রুত, কার্যকর ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে এই কাজগুলো সম্পন্ন হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। প্রিয় নেত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের সময় অনেক দেশ বাজেট দিতে পারছে না। কিন্তু আমরা একদিকে যেমন করোনা মোকাবিলা করব, পাশাপাশি আমরা দেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করব। তারা যেন কষ্ট না পায়, সেজন্য যা যা করণীয় করে যাব।’

মোটা দাগে বলতে গেলে, বাঙালি জাতি হিসেবে এ পর্যন্ত যা কিছু পেয়েছে, তার সবটুকুই দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ; দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আর রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের সব অর্জন জননেত্রী শেখ হাসিনার কারণেই। এ দেশের সব মানুষের কল্যাণের কথা, বিশেষভাবে দরিদ্র-অসহায় মানুষদের কথা, প্রিয় নেত্রীর চিন্তা চেতনায় সবসময় থাকে। পিতার মতো এ দেশের মানুষকে ভালোবেসে তিনি তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছেন। জননেত্রী বলেন, ‘আমি তো এখানে বেঁচে থাকার জন্য আসিনি। আমি তো জীবনটা বাংলার মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতে এসেছি, এটাতে তো ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’ প্রিয় নেত্রী আপনি হাজার বছর বেঁচে থাকবেন বাঙালির হৃদয়ে।

লেখক: তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন