বিজ্ঞাপন

অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ধমক দিয়ে কাজ করাত জেকেজি হেলথকেয়ার

June 23, 2020 | 10:35 pm

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: স্বাস্থ্য অধিদফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়ে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার ভয় দেখিয়ে নিজেদের অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছিল জেকেজি হেলথ কেয়ার। তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সাড়া না দেওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্বব্যহারও করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই জেকেজি হাসপাতালের। মিথ্যা পরিচয় ও তথ্য দিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে তারা সুবিধা নিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে ১৬ জুন সারাবাংলা ডটনেটে ‘করোনা পরীক্ষা নিয়ে জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রতারণার জাল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে তাদের নানা রকমের প্রতারণার বিষয়ে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের নিজের কক্ষেই একদিন অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে উচ্চবাচ্যে কথা বলেন জেকেজি হেলথকেয়ারের এমডি আরিফ চৌধুরী। এ দিন তাদেরকে বলা হয় ছয়টি বুথ থেকে ৩০টি করে ১৮০টি নমুনা পরীক্ষা করতে পারবে। এর সঙ্গে যদি যোগ হয় তবে আরও ২০টি সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষা করাতে পারবে ল্যাবে। কিন্তু জেকেজি হেলথকেয়ারের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই তখন নমুনা দেওয়া হতো ৫০০ এর অধিক।

এ বিষয়ে যখন স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা কথা বলেন, তখন তার দিকে তেড়ে আসেন আরিফ চৌধুরী। এ সময় সেখানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির দু’জন অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও সাবেক একজন পরিচালক যিনি নমুনা পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করছিলেন।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, সেদিন আরিফুল ইসলাম উচ্চবাচ্য করার পরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক তাকে থামান। এ সময় আরিফুল চৌধুরী কিছুটা শান্ত হলেও পরবর্তীতে অনৈতিকভাবে তার কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখে। সারাবাংলার রিপোর্ট প্রকাশের পরেও এই কার্যক্রম চলে। পরবর্তীতে একদিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের আরেকজন কর্মকর্তাকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘যদি নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ল্যাব কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ না দেওয়া হয় তবে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে বিচার দেবে। তবে এ সময় সেই কর্মকর্তা ধমক শুনেও তেমন কোনো নির্দেশনা না দিয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে কখনো সমর্থন দেবেন না। সেই বিশ্বাস আমাদের আছে।’

তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই। মূলত এটা জেকেজি হেলথকেয়ারের বিভিন্ন স্থানে প্রভাব বিস্তারের একটা কৌশল মাত্র।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে জানতে আরিফুল চৌধুরীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। তাদেরকে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করানোর বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাসায় গিয়ে নমুনা পরীক্ষার অনুমতি যেহেতু তাদের নেই সেটাও তাদের বন্ধ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

দেশে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোর কথা বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি দুই প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় নমুনা সংগ্রহের অনুমতি। তার মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান ওভাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা তথা ‘জেকেজি হেলথকেয়ার’। প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ নমুনা সংগ্রহের অনুমতি রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির এবং সেটি করার কথা বিনামূল্যে। তবে সারাবাংলার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে— প্রতিষ্ঠানটি নমুনা সংগ্রহ নিয়ে নানা ধরনের জালিয়াতিতে যুক্ত। জেকেজি হেলকেয়ারের এমন সব অনিয়ম-জালিয়াতি নিয়ে সারাবাংলার ধারাবাহিক প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্ব এটি। তৃতীয় ও চতুর্থ পর্ব পড়ুন আগামীকাল বুধবার (২৪ জুন)।

প্রথম পর্ব: করোনা পরীক্ষা নিয়ে জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রতারণার জাল

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবি/এমআই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন