বিজ্ঞাপন

আবার নতুন করে শুরু করতে হবে: হাবিবুল বাশার

June 24, 2020 | 2:41 pm

মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বাংলাদেশ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের যুগে পা রেখেছিল ভারত সফর দিয়ে। গেল বছরের নভেম্বরে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নেমেছিল টিম টাওইগার্স। কিন্তু শুরুটা প্রত্যাশিত রঙে রাঙাতে পারেনি মুমিনুল হক অ্যান্ড কোং। পক্ষান্তরে সেখানে ছিল নিদারুণ হতাশার ও ক্লেশের ছটা। যা শুধুই হারের মান দন্ডে নয়, খেলার ধরনেও। হোয়াইটওয়াশ তো হয়েছেই পাশাপাশি দুটি ম্যাচই সমাপ্তি দেখেছে মাত্র তিন দিনে! ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিংয়ের ধরন, টেম্পারমেন্ট, বোলিং আক্রমণ; সবই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।

বিজ্ঞাপন

ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান সফরেও শপ্ত হার পিছু ছাড়েনি। ভারত সফরের অভিন্ন বাংলাদেশকে পেয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি ইনিংস ও ৪৪ রানে নিজেদের করে নিল আজহার আলী ও তার দল। তবে এই ম্যাচ শেষে সফরকারীদের একটি জায়গায় স্বস্তি থাকলেও থাকতে পারে। সেটা হলো, ভারত সফরের দুই ম্যাচেই তিন দিনে তপ্লিতপ্লা গোটালেও এই ম্যাচটি গড়িয়েছিল চতুর্থ দিন পর্যন্ত!

যা হোক দেশে ফিরে টাইগার কন্টিনজেন্ট যখন করাচিতে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিক তখন সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করল করোনাভাইরাস। অতি অল্প সময়ের মধ্যে তা রূপ নিল বৈশ্বিক মহামারিতে। ফলে ৫-৯ এপ্রিল করাচিতে অনুষ্ঠেয় ম্যাচটি স্থগিত করে দেওয়া হলো। এরপর একের পর এক সিরিজ স্থগিতের হিড়িক পড়ে গেল। মে মাসে বাংলাদেশের আয়ারল্যান্ড সফর (ওয়ানডে, টি টোয়েন্টি), জুনে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর (২টি টেস্ট) ও আগস্ট-সেপ্টেস্বরে দুই টেস্ট খেলতে নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ সফরও স্থগিত করে দেওয়া হলো।

বিজ্ঞাপন

অর্থাৎ ইতোমধ্যেই লাল সবুজের দল ৫টি টেস্ট ম্যাচ থেকে বঞ্চিত, এর মধ্যে দেশের মাটিতেই ৪টি। এরপর শ্রীলঙ্কা সিরিজও যদি স্থগিত হয় তাহলে সংখ্যাটি গিয়ে দাঁড়াবে আটে। পারস্পারিক আলোচনার ভিত্তিতে বোর্ডগুলো নিশ্চয়ই দিনক্ষণ ঠিক করে মাঠে গড়ানোর ব্যবস্থা করবে। কিন্তু মূল ক্ষতি যা হবার তা বাংলাদেশেরই হলো। কেননা নিকট অতীতে এক বছরে এতগুলো টেস্ট একটানা টিম বাংলাদেশ কখনোই খেলেনি। ফলে টেস্ট ক্রিকেটে তাদের পশ্চাৎপদতা ও নবিশ ভাব থেকেই গেছে।

সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার নিদারুণ সুযোগ এবছরেই ছিল। এতগুলো ম্যাচ টানা খেলতে পারলে এই ফরম্যাটে তামিম-মুশফিকরা যেমন দক্ষ হয়ে উঠতে পারতেন তেমনি নতুন অধিনায়ক মুমিনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ টেস্ট দলের টিউনিংটাও চমৎকার হত। এর বাইরে ঘরের মাঠে জয়ের হর্ষে ভাসার সুযোগ তো ছিলই। কিন্তু ম্যাচগুলো স্থগিত হওয়ায় ডমিঙ্গো শিষ্যদের আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। ঠিক বিগত বছরগুলোর মতো- জানুয়ারিতে একটি সিরিজ খেললাম তো বছরের দ্বিতীয় সিরিজ জুলাই কিংবা আগস্টে! ফলে পারফরম্যান্সের অবস্থাও নাজুক। করোনা শেষে আবারও যখন তারা টেস্টে ফিরবেন পুরোনো সেই দৃশ্যগুলোই হয়ত নতুন করে মঞ্চস্থ হবে।

সারাবাংলার সঙ্গে একান্তে আলাপকালে সেই শঙ্কাই প্রকাশ করলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক ও নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন। তবে একটি জায়গায় তার স্বস্তি আছে। আর সেটা হলো ম্যাচগুলো বাতিল হয়নি।

বিজ্ঞাপন

‘যেহেতু টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শুরুটা ভালো করিনি তাই আমাদের জন্য খুব ভালো হত যদি খেলতে পারতাম। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমরা খেলতে পারছি না। সবচেয়ে হতাশার হলো আমরা এক বছরে এতগুলো ম্যাচ কখনোই পাইনি। টেস্ট খেলায় উন্নতি করতে হলে বেশি বেশি খেলার কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া ওই ম্যাচগুলো খেলতে পারলে আমাদের টেস্ট দলটাও থিতু হতে পারত। যেটা হয় আমরা টেস্ট খেলি লম্বা বিরতির পর। ফলে নতুন করে শুরু করতে হয়। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে আমরা কিন্তু ভালো শুরু করিনি। ভারতকে দিয়ে শুরু করেছিলাম। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে একটা খেলেইে আর খেলা হয়নি। কিন্তু আমরা যদি একটানা খেলতে পারতাম তাহলে পুরোনো অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারতাম। এখন আমাদের আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। কিন্তু যদি এই ৫টা খেলতে পারতাম নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারতাম।’

‘ভালো খবর হচ্ছে ম্যাচগুলো স্থগিত হয়েছে কিন্তু বাতিল হয়নি। কোনো না কোনো সময় ম্যাচগুলো হবেই। অতএব ওইটা একটা বড় বিষয়। আরকেটা বিষয় হলো সবাই তো বসে আছে। শুধু আমরাই না। হ্যাঁ, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান খেলা শুরু করেছে এটা ওদের জন্য ভালো। অস্ট্রেলিয়া হয়ত বছরের শেষের দিকে শুরু করবে। দক্ষিণ আফ্রিকার খবর নেই। সব দেশই তো কমবেশি আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু আমাদের যেটা হয়েছে ঘরের মাটিতে এসময় ৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলতে পারলে খুব ভালো হত। খেলার মধ্যে থাকতাম।’ যোগ করেন হাবিবুল বাশার।

বিজ্ঞাপন

বলার অপেক্ষাই থাকছে না করোনা পরিস্থিতি সামলে দেশগুলো যখন ক্রিকেটে ফিরবে এফটিপি (ফিউচারর ট্যুর প্ল্যানিং) জট বেঁধে যাবে। কেননা করোনাকালে শুধু বাংলাদেশেরই নয় ক্রিকেট খেলুড়ে প্রতিটি দেশেরই একাধিক সিরিজ স্থগিত হয়েছে। কিন্তু যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে নিঃসন্দেহে ক্রিকেটারদের টানা খেলার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তখন আবার ফ্যাটিগ পেয়ে বসবে না তো?

না তেমন কিছুর সম্ভাবনা দেখছেন না হাবিবুল বাশার। বরং তার বিশ্বাস, টানা তিন চার মাস ঘরে থাকায় ক্রিকেটাররা যথেষ্টই চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। এরপর যখন খেলায় ফিরবেন তখন ফ্যাটিগ বা ক্লান্তি ছাপিয়ে খেলতেই তারা ঢের স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।

‘আমার মনে হয় না এটা তাদের জন্য ক্লান্তির কারণ হবে। কেননা আমার বিশ্বাস এই তিন চার মাসে তারা বেশ ভালোই বিশ্রাম পেয়েছে। এবং আমি মনে করি আমাদের প্লেয়াররাও খেলা শুরু হলে খুবই খুশি হবে।’

সারাবাংলা/এমআরএফ/এসএস

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন