বিজ্ঞাপন

‘এই বাজেট মানুষ বাঁচানোর জন্য না’

June 25, 2020 | 9:48 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট মানুষকে বাঁচানোর জন্য ঘোষণা করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা। বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল আলোচনায় তারা এ অভিযোগ করেন।

বিজ্ঞাপন

বিএনপির সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের পরিচালনায় ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নেন সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার, হারুনুর রশিদ, জাহেদুর রহমান, আমিনুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা।

উকিল আবদুস সাত্তার বলেন, ‘সরকার করোনা সংকটের সময় যে অবাস্তব কথা বলছে সেটা সত্যিই দুঃখজনক। এই সংকট মুহূর্তে একটি জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। যেখানে সব দলের অংশগ্রহণ থাকবে। সব দল থেকে লোক নিয়ে একটি জাতীয় কমিটি করা হোক। কিন্তু সরকার এগুলোর কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না।’

গোলাম মোহম্মদ সিরাজ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নামক যে দলটির জন্ম এ মাটি থেকে হয়েছে, গত দশ বছরের কর্মকাণ্ডে মাটি ও মানুষ থেকে সেই দলটির সম্পর্ক উচ্ছেদ হয়ে গেছে। এ দলটিকে এখন মানুষ বিশ্বাস করে না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘এবার যে বাজেট ঘোষণা হওয়া উচিত ছিল সেটা হলো আপদকালীন এবং সংকট উত্তরণের বাজেট। কিন্তু সেটা আমরা দেখিনি। এটা একটা স্বাভাবিক বাজেট বলে আমার মনে হয়েছে।’

হারুনুর রশিদ বলেন, ‘এই করোনার সময় যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে সেটাকে কেউ স্বাগত জানায়নি। আওয়ামী লীগের যারা বাজেট বিশেষজ্ঞ তারাও স্বাগত জানায়নি। বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সকলেই বলেছে, এটা একটা অস্বাভাবিক এবং কল্পনাবিলাসী বাজেট। করোনা সংকট উত্তরণের জন্য আমাদের যে রোডম্যাপ দরকার ছিল, এই বাজেটে সে ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই।’

বিজ্ঞাপন

‘আমি সুস্পষ্টভাবেই বলতে চাই, সরকারে দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে, তার একটাই কারণ- তারা যেন তেন ভাবে ক্ষমতায় থাকতে চায়। সরকারে এই ক্ষমতা লোভের কারণে আমরা পথ হারিয়েছি। অপরাধে অভ্যস্থ একটা জাতিতে আমরা পরিণত হয়েছি। আজকে কারা সবচেয়ে ক্ষমতাশালী? ব্যাংক লুটেরা, যারা বিদেশে টাকা পাচারকারী, মানব পাচারকারী, মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িতরা। তারাই আজকে সব চাইতে প্রভাবশালী’— বলেন হারুনুর রশিদ।

সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যদি করোনার সময়টা ভালোভাবে অতিক্রান্ত করতে চাই এবং ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো রাখতে চাই, তাহলে ড্রাইভিং পজিশনে বসে থাকা সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আর্থিক অনুদানের জন্য সরকার যে লোন দিয়েছে, এটা নিয়ে সারাদেশে খুব বাজে কথা হচ্ছে। সবাই বলছে, এই টাকা কোথায়? কিভাবে দেওয়া হচ্ছে?’

তিনি বলেন, ‘সবকিছুর জন্য একটা মনিটরিং সেল গঠন করা দরকার। কিন্তু সেটা করা হচ্ছে না। আমি যতুটুকু জানি আমাদের সরকারের কাছে বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে। আমি বলব, এই মুহূর্ত্বে ব্যাংক থেকে লোন না নিয়ে রিজার্ভ থেকে দশ বিলিয়ন ডলার ব্যাংকে দিয়ে দেন। ব্যাংক যদি ঠিক থাকে, তাহলে আবার আমাদের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠবে।’

সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এবারে যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে, এটার আকার অনেক বড়। কিন্তু এই টাকা কোথা থেকে আসবে? এই খবর অর্থমন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা মনে হয় জানেন না। উন্নত বিশ্বে আমরা যেটা দেখেছি মূল বাজেট পরিচালনা করার জন্য ছয় মাসের এটা প্রাক বাজেট করা হয়। আমিও মনে করেছিলাম এই করোনা মহামারি মোকাবিলার জন্য ছয় মাসের একটা বাজেট দেওয়া হবে। কিন্তু করা হয়েছে এর উল্টোটা। এই বাজেট একটা উচ্চভিলাষী বাজেট।’

বিজ্ঞাপন

জাহেদুর রহমান বলেন, ‘করোনার শুরু থেকে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। মূলত তাদের এই ব্যর্থতার কারণেই দেশের এই হাল হযেছে। সরকারে এমন পদক্ষেপের কারণেই দেশের মানুষের জীবন আজ হুমকির মুখে পরেছে। করোনার এই মাহামরিতে সরকার যে বাজেট ঘোষণা করেছে আমি মনে এই বাজেট ঘোষণা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি। উন্নয়ন বাদ দিয়ে মানুষের জীবনকে রক্ষা করাই হচ্ছে এখন বড় কথা। কিন্তু মানুষ বাঁচানোর লক্ষ্যে কোনো বাজেট হয় নাই।’

রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি এই বাজেট সেশননি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই বাজেট অধিবেশন আমরা ভার্চুয়াল করার আহবান জানিয়েছেলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার সে প্রস্তাব মিডিয়াতে আসছে, সব জায়গায় প্রচার হয়েছে তারপরেও সংসদ ভার্চুয়াল করা হয়নি। এর ফলে যেটা হলো সম্পূরক বাজেট ঘোষণার একদিন পরই সংসদ মুলতবি হয়ে গেছে। শুধু মাত্র ২৩ জুন বাজেটের উপর আলোচনা হয়েছে। কেবল একদিন আলোচনা করে বাজেট পাশ হওয়ার নজির বাংলাদেশের ইতিহাসে নেই।’

তিনি বলেন, ‘করোনা সংকটের মধ্যে যে বাজেট দিয়েছে, সেটা নিয়ে সমালোচনা হবে সেটা সরকার আগ থেকেই আচ করতে পেরেছিল। সরকার চাইলেই এক মাসব্যাপী ভার্চুয়াল এই অধিবেশন চালাতে পারতো। সেখানে সংসদ সদস্যরা মন খুলে তাদের মতামত দিতে পারত। মূলত সরকারের ভূলগুলো ঢাকার জন্যই এক দিনের মধ্যে বাজেটের আয়োজন করেছে তারা।

সারাবাংলা/এজেড/একে

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন