বিজ্ঞাপন

আসামের পানি ঢুকছে বাংলাদেশে, বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

June 29, 2020 | 4:14 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: উজানে ভারতের আসাম প্রদেশ থেকে বন্যার পানি এসে ঢুকছে বাংলাদেশের নদ-নদীতে। এই কারণে জামালপুর, সুনামগঞ্জ ও সিলেটসহ দেশের অনেক জেলায় বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দেশের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

বিজ্ঞাপন

গত ২৪ ঘণ্টার ভেতরে বন্যা পরিস্থিতির সবচেয়ে বেশি অবনতি হয়েছে জামালপুর জেলায়। এখানে ছয়টি উপজেলায় প্রায় ২৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষ।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, যমুনার পানি সোমবার (২৯ জুন) দুপুর পর্যন্ত বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদী তীরবর্তী ২৫টি ইউনিয়ন তলিয়ে গেছে। রাস্তাগুলো জলের তলায় চলে যাওয়ায় এসব এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। ফসলের মাঠ ডুবে যাওয়ার পর গোলায় জমা রাখা শষ্যও নষ্ট হয়েছে অনেকের।

জামালপুর জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় একশরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এছাড়া পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জামালপুরের জেলা প্রশাসক এনামুল হক বলেন, ‘জেলায় বন্যা কবলিতদের জরুরি সেবা দানের জন্য ৮টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। সাড়ে ৪ শ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বন্যা হয়তো কমানো যাবে না, তবে ক্ষতিগ্রস্থদের দুঃখ-দুর্দশা কমানোর চেষ্টা চলছে।’

সুনামগঞ্জ জেলায় পানি না কমলেও পানিবন্দি সাধারণ মানুষদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। এই প্রায় সব সড়কই ৫ থেকে ১০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে। ফলে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়াবাজার ও জামালগঞ্জ উপজেলার মানুষজন।

জেলা প্রশাসনের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা যায়, এই জেলার দুর্গতদের জন্য ১২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১২’শ পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ৪১০ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ২৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সুনমাগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, এখানে হাওরের পানি বাড়ছে। বৃষ্টি পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে পানি আরও বাড়বে। গত কয়েকদিনে উজানে ৫৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর পুরো পানিটাই হাওরে এসে জমা হবে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে আরও ত্রাণ ও ওষুধ সামগ্রী আসছে। আমরা এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার চেষ্টা করছি।

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রগুলো জানায়, এই জেলায় সোমবার দুপুরে ব্রহ্মপুত্র নদে চিলমারী পয়েন্টে ৮০ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬৫ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি ৭৮ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীগুলোতে জুলাই মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেতে থাকবে বলে জানিয়েছেন রংপুর বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ।

বিজ্ঞাপন

এই জেলায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ৩ হাজার ৬ শ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, শাক সবজি, পাটসহ অন্যান্য ফসল। এছাড়া ৯ উপজেলার ৩৫ ইউনিয়নের প্রায় ১ লাখ মানুষ পানিবন্দী জীবনযাপন করছে।

পানিবন্দী এসব মানুষের বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। বন্যা কবলিত এসব মানুষের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩০২ মেট্রিক টন চাল ও শুকনো খাবারের জন্য ৩৬ লাখ ৬৮ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সিলেটেও বন্যা পানি বাড়তে শুরু করেছে। এর উপ-শহরসহ আশেপাশের ১০টি এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উপজেলাগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। ভারতের মেঘালয়ের পাশাপাশি সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে পানি বাড়ছে।

সিলেটের উজানে ভারতের মেঘালয়, আসামের করিমগঞ্জ ও মণিপুরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। অপেক্ষাকৃত উচু ওই অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের পথ হলো সিলেট। সুরমা, কুশিয়ারাসহ অন্তত ১০টি শাখা নদী হয়ে এই পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এসব নদীতে এখন পাহাড়ি ঢলের পানি বিপদসীমার ৫ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে ভারতের আসাম প্রদেশে বন্যার পানিতে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল জলে ভেসে গিয়েছে। প্রদেশটির ২৩টি জেলা এখন পুরোপুরি জলের তলায় রয়েছে। গত সপ্তাহ মিলিয়ে আসামে বন্যায় মারা গেছে ২০ জন। এছাড়া ভয়াবহ ভূমিধসের কারণে প্রাণ হারিয়েছেন ২৩ জন।

ভারতের সরকারি হিসাব বলছে, এখনো পর্যন্ত ২৩টি জেলার ২ হাজার ৭২ গ্রামের ১০ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। লাগাতার ভারী বর্ষণের কারণে উপচে উঠেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। ভুটান ও আসামসহ উত্তরপূর্বের অন্য রাজ্যগুলিতে অবিরাম বর্ষণ হয়ে চলছে। যার ফলে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি আগামী কিছুদিনের মধ্যেই চরম আকার ধারণ করবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, ‘দেশের প্রধান নদ-নদীরগুলোর পানির উচ্চতা বাড়ছে। দুএক দিনের মধ্যেই পদ্মানদীর পানিও বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। চলতি সপ্তাহে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিলেট, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।

সারাবাংলা/টিএস/এমআই

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন