বিজ্ঞাপন

‘২৫ লাখ গ্রাহক সংযোগ’ প্রকল্পে পল্লী বিদ্যুতের অসাধারণ সফলতা

July 3, 2020 | 8:07 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দুই বছরে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় এসেছেন গ্রামীণ এলাকার ২৫ লাখ গ্রাহক। সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট মেয়াদে, বরাদ্দের চেয়ে কম অর্থ ব্যয়ে প্রকল্পের শতভাগ বাস্তবায়ন করেছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। ‘পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণের মাধ্যমে ২৫ লাখ গ্রাহক সংযোগ’ প্রকল্পের আওতায় এসব মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পেয়েছেন। এটি বাস্তবায়নে অর্থায়নে সহযোগিতা দিয়েছে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেসমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সব এলাকায় সমভাবে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। যেখানে যেমন চাহিদা, সেখানে সেভাবেই গ্রাহকদের যুক্ত করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রভাব মূল্যায়ন সমীক্ষায় এমন আশাব্যঞ্জক চিত্র উঠে এসেছে। কেননা বছরের পর বছর মেয়াদ বাড়িয়েও অনেক উন্নয়ন প্রকল্প শেষ হয় না, সেখানে এ প্রকল্পে একটি উদাহারণ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আইমইডি’র খসরা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এটির মূল উদ্দেশ্য ছিল পল্লী এলাকায় বিদ্যুৎ সম্প্রসারণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করা। এ লক্ষ্য অর্জনে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ৬১টি জেলার ৭৯টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পিবিএস) জন্য ৬৫ হাজার ট্রান্সফরমার, ২৫ লাখ ইলেকট্রিক মিটার, ৭৫ হাজার ৬৫১ কিলোমিটার কন্ডাক্টর কেনার মাধ্যমে ২৫ লাখ গ্রাহককে সংযোগ দিয়েছে।

প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল, একহাজার ২২৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৫৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং এআইআইবি’র ঋণ থেকে ৭৭১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। অনুমোদিত মেয়াদের মধ্যেই প্রকল্পের সব কাজ শেষ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ৯৪৩ কোটি ৬ লাখ টাকা, যা মূল অনুমোদিত ব্যয়ের চেয়ে ২৮৫ কোটি ২০ লাখ ৪৮ হাজার টাকা কম। মোট নয়টি প্যাকেজের মাধ্যমে ১৬টি লটে সমস্ত ক্রয় কার্যক্রম শেষ করা হয়। প্রতিটি ক্রয় কাজেই প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে প্রকল্প এলাকায় অনেক সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে ছেলে-মেয়েরা বেশি সময় ধরে পড়ালেখা করতে পারছে। স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যেও সুবিধা বেড়েছে। রাতে কাজের সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। চুরি, ডাকাতিসহ অন্যান্য অপরাধ আগের তুলনায় কমেছে। হাট-বাজারের উন্নতি হয়েছে। সেচ পাম্পের ব্যবহার এবং ইন্টারনেট ও কম্পিউটার ব্যবহার বেড়েছে। যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। নারীদেরও কাজের সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে।

সরেজমিন পরিদর্শন পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্প সেচ খরচ কমেছে। আগে ডিজেল চালিত সেচ পাম্পে প্রতি শতকে গড় খরচ পড়তো ৭৮ টাকা। এখন বিদ্যুৎ চালিত পাম্পে খরচ পড়ে ৫৬ টাকা। তুলনামূলকভাবে বিদ্যুতের তুলনায় ডিজেলে শতকে ২২ টাকা বেশি খরচ পড়তো। প্রকল্প এলাকার প্রতিটি দোকানে গড়ে ২ জন করে লোক কাজ করে। প্রতিটি দোকানোর বার্ষিক আয় চার লাখ নয় হাজার ৪৮৫ টাকা। গড়ে তাদের ব্যয় হয় দুই লাখ ৬৫ হাজার ৩৭৫ টাকা। গড় মুনাফা দাঁড়ায় এক লাখ ৪৪ লাখ ৮৩ টাকা। বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার ফলে তাদের ব্যবসার অনেক উন্নতি হয়েছে।

প্রকল্পটির সবল দিক সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রকল্পের কার্যক্রম সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের সময় একজন প্রকল্প পরিচালকই দায়িত্ব পালন করেন। যথাসময়ে অর্থছাড় হয়েছে। বাৎসরিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি ও সেই অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হয়েছে। খাতওয়ারি বাজেট চাহিদা ও সে অনুযায়ী বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নিয়মিত মনিটরিং ছিল।

বিজ্ঞাপন

আইএমইডির সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজ উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দ্বিতীয় খসড়া প্রতিবেদনটির ওপর গত ৩ জুন জাতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত হয়েছে। এটি একটি ভালো প্রকল্পের নজির। শিগগিরই এই প্রতিবেদনটি পাঠানো হবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে। যেখানে দেশের ৭০ শতাংশ প্রকল্পেরই মেয়াদ বাড়াতে হয়, সেখানে এ প্রকল্পটি ভাল উদাহরণ তৈরি করেছে।’

সারাবাংলা/জেজে/এমও

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন