বিজ্ঞাপন

স্বামী-স্ত্রী মিলে লোপাট করেছেন গৃহায়নের ফ্ল্যাট-প্লট

July 6, 2020 | 1:00 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এ এস এম শামসুদ্দোহা পাটোয়ারী। চাকরির আড়ালে লোপাট করেছেন গৃহায়নের একাধিক ফ্ল্যাট-প্লট। তিনি শুধু একা নন, এ সব কাজে সহায়তা করেছেন তার স্ত্রী নার্গিস সুলতানা ও গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল শাহীন। এই মোস্তফা কামালের নামে রাজধানীয় ঢাকা শহরে ১৬টি ফ্ল্যাট-প্লটের মালিকানা রয়েছে। এ ছাড়া শামসুদ্দোহা ও শাহীন সিন্ডিকেট সরকারি জমি-প্লট দেওয়ার নাম করে লোপাট করেছেন আরও ১৫ কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

বিএনপি-জামায়াতের কোটায় ১৯৯৪ সালে চাকরিতে ঢোকেন এ এস এম শামসুদ্দোহা। এখন তিনি নিজেকে পরিচয় দেন আওয়ামী লীগ অনুসারী একজন সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে। শামসুদ্দোহার দাবি, তিনি একজন শিল্পমনা মানুষ, থিয়েটার আর্টিস্ট। তার হাতে তৈরি কয়েকশত শিক্ষার্থী বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকায় কর্মরত আছেন।

আরও পড়ুন: গণপূর্তের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ১৬টি ফ্ল্যাট-প্লটের মালিক

গৃহায়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শামসুদ্দোহা শুধু নিজের নামে প্লট-ফ্ল্যাট করেননি। এ কাজে সহযোগী হিসেবে নিয়েছেন তার স্ত্রী নার্গিস সুলতানাকে। স্ত্রীর নামে কখনও তিনি আলাদা প্লট করে দিয়েছেন। আবার কখনও যৌথ নামে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। কখনও স্ত্রীকে দিয়ে অন্যদের সঙ্গে নিয়ে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। আবার কখনও মোস্তফা কামাল শাহীনের সঙ্গেও নার্গিস সুলতানা প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এ সব সরকারি প্লট আবার কখনও বিক্রি করে দিয়েছেন দ্বিগুণ দামে। বরাদ্দ পাওয়া বিক্রি করা প্লটের কাগজপত্র সারাবাংলার হাতে রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তাদের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধান করছে দুদক। তবে দোহা দাবি করে বলেন, তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে কিছুই পায়নি দুদক। কিন্তু মিরপুরে তার কমপক্ষে চারটি ফ্ল্যাট ও একটি পাঁচ কাঠার প্লটের তথ্য প্রমাণের কাগজপত্র রয়েছে সারাবাংলার কাছে।

চাকরি পাওয়ার পর ২০০৬ সালে শামসুদ্দোহা প্রথম যে প্লটটি বরাদ্দ পান মিরপুর হাউজিং এস্টেটের সেই প্লটটি দ্বিগুণ বেশি দামে রাজিয়া খাতুন নামে এক নারীর কাছে বিক্রি করে দেন। এরপর তার নামে প্লট নেই মর্মে আবারও প্লট বরাদ্দ নেন। স্ত্রীকে ব্যবসায়ী বানিয়ে এবং স্বামীর নাম ব্যবহার না করে সেখানে পিতার নাম এবং লালমাটিয়ার ঠিকানা ব্যবহার করে একাধিক প্লট বরাদ্দ দেন শামসুদ্দোহা।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: ঢিমেতালে চলছে ঢাকায় ‘৩৯৮টি সরকারি ফ্ল্যাট নির্মাণ’ প্রকল্প

এই স্টানোগ্রাফার শুধু চাকরির দিকে তাকিয়ে বসে থাকেননি। ছুটেছেন ফ্ল্যাট প্লটের পেছনে। স্ত্রী ও নিজের নামে মিরপুরের স্বপ্ন নগর আবাসিক প্রকল্পে দুটি ফ্ল্যাট, হাউজিং স্টেটে একটি ফ্ল্যাট, মিরপুর সেকশন ৬-এ, লেন-৩ তে একটি প্লট (১৮/৩)সহ নামে বেনামে গড়েছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ। যার মধ্যে অনেক প্লট, ফ্ল্যাট তিনি বিক্রিও করেছেন।

তার নামে বেনামে থাকা সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১৯ সালে তার ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু দুদক। অনুসন্ধানে অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ করার প্রমাণ পেয়েছে দুদক। এখন রিপোর্ট দেওয়ার জন্য ঢাকা-১ এ অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে ফাইলটি।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের একজন সহকারী পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দোহা এবং শাহীনের অবৈধভাবে অর্জন করা সম্পদের অনুসন্ধানের কাজ শেষ হয়েছে। শিগগিরই প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: ছোট ফ্ল্যাটের দামও অর্ধকোটি টাকার বেশি

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ এস এম শামসুদ্দোহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি একজন থিয়েটার কর্মী। আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার আগে সাতবার ভাববেন। প্রেস কাউন্সিলের নতুন আইন জানেন তো। তাছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তো আছেই। আপনাকে খুঁজে নেব। নিউজ করলে করেন এখন।’

দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়টি তুলে ধরলে তিনি দাবি করে বলেন, ‘দুদক তার বিরুদ্ধে এখনও কোনো দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি।’

আরও পড়ুন: বিহারিদের জন্য ১০০০ একর জমি কেন চায় পূর্ত? প্রশ্ন পরিকল্পনার

ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতার সাবেক কাউন্সিলর মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজানের সঙ্গে এই সরকারি কর্মকর্তার গোপন ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল বলে জানিয়েছেন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টরা।

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানায়, দোহা এবং শাহীনকে দেড় বছর আগে বদলি করা হয়েছে। এরপরও গত দেড় বছর ধরে ঢাকার অফিস ছাড়েননি। কয়েক কোটি টাকা খরচ করে আবার তারা ঢাকা অফিসে যোগদান করেন। মন্ত্রী তাদের ফাইল এবার তলব করেছেন। তবে ফাইল তলবের বিষয়টি নিয়ে কারো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন