বিজ্ঞাপন

কমছে বানের পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ

July 7, 2020 | 10:57 pm

তুহিন সাইফুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানি দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল থেকেই কমতে শুরু করেছে। তবে বানের পানি কমলেও বাড়ছে দুর্ভোগ। জলাবদ্ধতা ও নদী ভাঙনের কারণে অনেকে ভিটেমাটি হারাচ্ছেন। এরই মধ্যে আবার ছড়াতে শুরু করেছে নানাধরনের পানিবাহিত রোগও।

বিজ্ঞাপন

তবে দেশের সবখানে বন্যার পানি কমলেও বেড়েছে মানিকগঞ্জে। এই জেলায় যমুনার পানি কমতে শুরু করেছিল আগেই। তবে সোমবার (৬ জুলাই) রাত থেকে ধলেশ্বরী, কালীগঙ্গা, ইছামতিসহ বেশকয়েকটি নদীর পানি বেড়েছে। এতে নতুন করে তলিয়ে যাচ্ছে জেলার অনেক লোকালয় ও ফসলি জমি।

মানিকগঞ্জে এখনও পর্যন্ত ২ হাজার ৪০০ হেক্টর জমির আমন, ৪০ হেক্টর জমির আউশ, ১৮০ হেক্টর জমির ভুট্টা, ৫০ হেক্টর জমির তিল ও ৫ হেক্টর জমির সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। গত সাত দিনে পানিতে তলিয়েছে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমির ফসল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হরিরামপুরে ৮০৩ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘পদ্মাপাড়ের হরিরামপুর, ধলেশ্বরী নদী পাড়ের ঘিওর, সাটুরিয়া এবং কালীগঙ্গা নদীপাড়ে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার অনেক বসত বাড়ি, আবাদি জমি, স্কুল, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীতে জোয়ারের পানির কারণে ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ভাঙন ঠেকানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।’

এদিকে গত কয়েক দিন বৃষ্টি কম হওয়ায় এবং উজানের পানিপ্রবাহ কমে আসায় যেসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে তার মধ্যে জামালপুর অন্যতম। জেলার যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রসহ শাখা নদ-নদীর পান কমতে শুরু করেছে। তবে পানি কমলেও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সাইদ জানান, ‘এই জেলায় পানি কমছে, কিন্তু নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। জেলার সাতটি উপজেলার মোট ৪৯টি ইউনিয়নে প্রায় চার লাখ মানুষ এখনও পানিবন্দি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ৪০০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। এছাড়াও বন্যার কারণে ৯৬ কিলোমিটার কাঁচা এবং ১৭ কিলোমিটার পাকা রাস্তা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার সাতটি উপজেলার ১৩ হাজার ৩৪৩ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের মাঝে ৫০০ মেট্রিক টনেরও বেশি চাল ও নগদ সাড়ে ১৩ লাখ টাকা ও দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।’

সুনামগঞ্জ জেলায় এখন প্রায় প্রতিটি নদ-নদীর পানিই বিপদসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বন্যার কারণে জেলায় ৩৫ হাজার ৫৭৯টি পরিবার ও ২৫ হাজার গবাদিপশু ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় চাল, শুকনো খাবার, স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে।

গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনও এই জেলায় এক লাখের মতো মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। এছাড়া তলিয়ে গেছে অনকে জমির ফসল।

বিজ্ঞাপন

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, এই জেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ বসতবাড়ি থেকে পানি এখনও নামেনি।

গাইবান্দার বেশিরভাগ এলাকায় বিশুদ্ধ পানি এবং খাবার সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। পাট, ভুট্টা, মরিচ ও বীজতলাসহ ফসলি জমিগুলোও তলিয়ে গেছে। এছাড়া পানিতে ভেসে গেছে কয়েক কোটি টাকার চাষের মাছ। বন্যা আর নদীভাঙনের শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা এক লাখেরও বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য এ পর্যন্ত ২০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১৩ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

উত্তরবঙ্গের আরেক জেলা কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানিও কমতে শুরু করেছে। তবে বন্যা কবলিত এলাকার ঘরবাড়ি থেকে পানি এখনও পুরোপুরি নামেনি। গাইবান্ধার মতো এই জেলাতেও বাড়ি আর ফসল হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে সাধারণ মানুষজন।

পাবনা জেলায় পানি কমলেও ভাঙন তীব্র হয়েছে। এই অঞ্চলের কৃষি জমি ও বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হোসেন জানান, ‘এই এলাকায় নদী ভাঙন প্রতিদিন প্রবল হচ্ছে।’

নীলফামারী জেলায় পানি কমার পর অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। তবে এসব মানুষের বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি, বীজতলা ও চাষের মাছ বানের জলে ভেসে গেছে।

রাজশাহীতে পদ্মার ভাঙনও তীব্র হয়েছে। শহর রক্ষা বাঁধেও আছড়ে পড়ছে পদ্মার ঢেউ। তবে এই জেলায় ক্ষতির পরিমাণ অনেক কম।

লালমনিরহাট জেলায় ধরলা ও তিস্তার পানি কমার সঙ্গে নদীভাঙনও তীব্র হয়েছে। এই এলাকায় নদীভাঙনের শিকার হওয়া পরিবারের জন্য ১২৩ দশমিক ৪৮০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১৫ লাখ ২৫ হাজার ৭০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

লালমনিরহাটে বন্য পরিস্থিতি গত দুদিনে উন্নতি হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেছেন, জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে আবারও বন্যা হতে পারে। জুলাইয়ের ১০ তারিখ থেকেই পানি বাড়তে পারে।

সারাবাংলা/টিএস/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন