বিজ্ঞাপন

সিআর সেভেন: বার্নাব্যুতে যাকে এখনো মিস করেন রামোস-বেনজেমারা

July 10, 2020 | 12:43 pm

স্পোর্টস ডেস্ক

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো অনেকদিন ধরেই আর রিয়াল মাদ্রিদের নয়। সেই ২০১৮ সালে রিয়াল-রোনালদোর দুটি পথ বেঁকে গেছে দুই দিকে। দীর্ঘ নয় বছরের মায়া ত্যাগ করে মাদ্রিদ ছেড়ে জুভেন্টাসে পাড়ি জমান পর্তুগাল সুপারস্টার। ফিসফাস অবশ্য অনেক আগে থেকেই চলছিল। চু্ক্তি নিয়ে বনিবনা হচ্ছিল না দুই পক্ষের। কিন্তু তার পরিনতি যে চুক্তিভঙ্গ পর্যন্ত গড়াবে সেটা ভাবেনি অনেকেই। রাশিয়া বিশ্বকাপের পরপর সমর্থকদের কাঁদিয়ে জুভেন্টাসে গিয়ে রোনালদো এগুচ্ছেন তার মতো করেই। বয়স ৩৫ পেরিয়েছে, তবে মাঠের ফুটবলে সিআর সেভেন যেন তরুণই!

বিজ্ঞাপন

মাঠে এখনো আগের মতোই প্রাণচঞ্চল। অনেকটা একাই টানছেন জুভেন্টাসকে। ইতালির ক্লাবটির গত মৌসুমে ২৮ গোল করা রোনালদো এবারের মৌসুমে এরই মধ্যে করে ফেলেছেন ২৭ গোল, যার মধ্যে লিগে ২৪ ম্যাচে ২৩ গোল। কদিন আগে সিরি ‘আ’ লিগের আলাদা ২০ দলের বিপক্ষে গোল করার রেকর্ড নিজের করে নিলেন পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার। তবে জুভেন্টাসের হয়ে দু’বছরে যতো যাই করেন না কেন, রোনালদোর ক্লাব ফুটবলের আলোচনায় সবার আগে রিয়াল মাদ্রিদের নামটাই আসবে।

পর্তুগালের স্পোর্টিংয়ে সম্ভবনা জাগিয়ে কুঁড়ি হয়ে ফুটেছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। রোনালদো ফুল হয়ে ফুটে সুবাস ছড়িয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি গায়েই। নয় বছরে কী না করেছেন! রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে সম্ভাব্য সবাই জিতেছেন, নিজেকে সর্বকালের সেরাদের কাতারে নিয়ে গেছেন মাদ্রিদের ক্লাবটির হয়ে বছরের পর বছর ধরে ধারাবাহিক অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স দেখিয়ে।

বিজ্ঞাপন

রোনালদো-রিয়ালের যাত্রা শুরু ২০০৯ সালের জুনে। ২০০৯ সালের ২৬ জুন ৯ কোটি ৪০ লাখ ইউরোর রেকর্ড চুক্তিতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন পর্তুগাল তারকা। কদিন আগে (২৬ জুন) সেই চুক্তির ১১ বছর পূর্ণ হলো। চুক্তি ভঙ্গের আগে রিয়ালের জার্সিতে সিআর সেভেন যা করেছেন সেটা অনেক তরুণ ফুটবলারের কল্পনাকেও হার মানাবে!

নিজের স্বর্ণ সময়েই রিয়ালের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। ২০০৭-০৮ মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জয়ে বড় অবদান ছিল রোনালদোর। ২০০৮ সালে জিতেছিলেন ব্যালন ডি’অর। তবুও রিয়ালের চুক্তির ৯ কোটি ৪০ লাখ ইউরোর অঙ্কটাকে বেশিই মনে করছিলেন অনেকে। সেই প্রশ্ন দূরে ছুড়ে ফেলেছেন কবেই। ইংল্যান্ড ছেড়ে স্পেনে এসে প্রথম মৌসুমেই করেছিলেন ৩৩ গোল। এরপর আর এমন কোন মৌসুম কাটেনি যেটিতে ৪০’শের কম গোল করেছেন। সময় যতো গড়িয়েছে রোনালদোর গোলসংখ্যাও ততো বেড়েছে।

২০১৪-১৫ মৌসুমে ছিলেন অবিশ্বাস্য, সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে রিয়ালের জার্সিতে ৬০ গোল করেছিলেন সিআর সেভেন, সতীর্থদের নিয়ে করিয়েছিলেন আরও ২১টি। পর্তুগাল সুপারস্টার নয় মৌসুমে রিয়ালের হয়ে গোল করেছেন যথাক্রমে- ৩৩, ৫৩, ৬০, ৫৫, ৫১, ৬১, ৫১, ৪২ ও ৪৪। মোট ৪৫০ গোল, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও ১১৯টি, দুটিই রেকর্ড। সেই ২০১৫ সালে রাউল গঞ্জালেসকে (৩২৩ গোল) ছাড়িয়ে রিয়াল মাদ্রিদের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড গড়েছিলেন। পরে নিজের রেকর্ডটা নিয়ে গেছেন অন্য পর্যায়ে।

বিজ্ঞাপন

রোনালদো ৪৫০ গোলের মধ্যে স্প্যানিশ লা লিগায় করেছেন ৩১১টি। স্পেনের শীর্ষ লিগটিতে তার চেয়ে বেশি গোল আছে মাত্র একজনেরই, লিওনেল মেসি। পুরোটা ক্যারিয়ার বার্সেলোনায় খেলা মেসি লা লিগায় গোল করেছেন ৪৪০। রোনালদো স্প্যানিশ লিগের চেয়েও বেশি সফল ছিলেন ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদার টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। টানা সাত মৌসুমে কমপক্ষে ১০ গোল করার রেকর্ড তার দখলে। একক কোন দলের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে গোলের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন। রিয়াল মাদ্রিদে থাকতেই ব্যালন ডি’অর জয়ের সংখ্যায় লিওনেল মেসিকে ধরে ফেলেছিলেন। ক্যারিয়ারে পাঁচবার বর্ষসেরা হয়েছেন সিআর সেভেন, যার মধ্যে রিয়ালে থাকতেই চারবার।

এতো গেল ব্যক্তিগত সাফল্যের হিসেব, মাদ্রিদের ক্লাবটির হয়ে শিরোপা জয়ের সাফল্যেও অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রোনালদো। নয় মৌসুমে রিয়ালের দুটি লা লিগা, দুটি কোপা দেল রে, দুটি সুপার কোপা, তিনটি ক্লাব বিশ্বকাপ ও দুটি উয়েফা সুপার কাপ জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। রোনালদোকে নিয়ে রিয়াল সবচেয়ে বড় দাওটা মেরেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। একটা সময় ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদার টুর্নামেন্টটি রিয়ালের জন্য ছিল হাহাকারের এক নাম। ২০০১-০২ মৌসুমের পর থেকে হন্যে হয়ে নিজেদের দশম শিরোপা বা ‘লা ডেসিমা’ খুঁজছিল মাদ্রিদের ক্লাবটি। কিন্তু কোন কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। রোনালদো সেই আক্ষেপ ঘুচান ২০১৩-১৪ মৌসুমে।

সেবার রোনালোর কাঁধে ভর করেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও কোপা দেল রের ‘ডাবল’ জিতে রিয়াল। সব মিলিয়ে সেই মৌসুমে ৬৫ গোলে সরাসরি অবদান ছিল রোনালদোর (৫১ গোল, ১৪ অ্যাসিস্ট)। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে শেষ দিকে গোল করে রিয়ালের ‘লা ডেসিমা’ নিশ্চিত করেছিলেন। সেবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মোট ১৭ গোল করেছিলেন সিআর সেভেন, যা এখনো প্রতিযোগিতাটির এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। ‘লা ডেসিমা’ জয়ের পর রোনালদোকে সঙ্গে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যেন অপ্রতিরোধ্যই হয়ে উঠে রিয়াল। পরের চার মৌসুমে আরও তিনবার টুর্নামেন্টটির শিরোপা জিতে মাদ্রিদের ক্লাবটি। টানা তিন মৌসুমে জিতে প্রথম দল হিসেবে শিরোপা জয়ের হ্যাটট্রিকও করে রিয়াল।

বিজ্ঞাপন

রোনালদো রিয়ালে থাকতে সর্বশেষ দুই মৌসুমেও ছিলৈন দুর্দান্ত। এসময় গোল করেন ৮৬টি, শিরোপা জেতেন ৮টি। অসাধারণ পথচলায় রিয়াল মাদ্রিদ-রোনালদো হয়ে উঠেছিলেন একে অন্যের পরিপূরক। ২০১৮ সালে হঠাৎ কোন ঝড়ে সম্পর্ক ভেঙে গেল কে জানে! রিয়াল সমর্থকরা নিশ্চয় চাইছিলেন, আরও কয়েক মৌসুম সেখানে থাকবেন রোনালদো।

সে সময় স্প্যানশি গণমাধ্যমগুলো খবরে বলা হচ্ছিল, নতুন করে চুক্তি চাইছিলেন রোনালদো। কিন্তু ‘বয়ষ্ক’ রোনালদোর সঙ্গে মোটা অঙ্কের দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তি করতে চায়নি রিয়াল মাদ্রিদ। নতুন চুক্তিতে রোনালদোর বেতন কমানোর চিন্তাও নাকি ছিল মাদ্রিদের ঐতিহ্যবাহি ক্লাবটির। এসব নিয়ে বনিবনা না হতেই রোনালদোর দিকে হাত বাড়িয়ে দেন জুভেন্টাস। শেষম্যাস ১০৫ মিলিয়ন ইউরোর ট্রান্সফার ফি চুকিয়ে সিআর সেভেনের সঙ্গে চার বছরের চুক্তি সেরে ফেলে তুড়িনের বুড়িরা।

এই বয়সেও যেভাবে খেলছেন তাতে ইতালির ক্লাবটির হয়েও হয়তো অনেক ইতিহাস গড়বেন রোনালদো, অনেক শিরোপা জিতবেন। সেসব দেখে রিয়াল মাদ্রিদ হয়তো আড়চোখে কষ্ট পাবে। এখনও হয়তো পাচ্ছে! মার্সেলো, সার্জিও রামোস, লুকাস ভাসকেসের মতো রিয়াল মাদ্রিদের আত্মপ্রাণ ফুটবলাররা অনেকবারই বলেছেন, মাঠে রোনালদোকে এখনো মিস করে রিয়াল।

সারাবাংলা/এসএইচএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন