বিজ্ঞাপন

করোনায় ইমেজ সংকট হলে রফতানি আয়েও প্রভাব পড়বে

July 11, 2020 | 9:40 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনা পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কিছুটা ইমেজ সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। এর প্রভাবে দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ কমে আসার শঙ্কাও রয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যে দেশের বর্তমান অবস্থা ধরে রাখতে স্বাস্থ্য খাতে আরও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১১ জুলাই) সারাবাংলা ডটনেট আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠান সারাবাংলা ফোকাসে ‘করোনা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

এছাড়া বক্তারা করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট ও গুটিকতক প্রবাসীদের অনাকাঙিক্ষত আচরণে ইতালি, মালয়েশিয়া ও জাপানের সঙ্গে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, এরজন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি দেশগুলোর সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দোষীদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হবে তা কূটনৈতিকভাবে তুলে ধরা ও দেশের অভ্যন্তরে অর্থের প্রবাহ বাড়াতে প্রয়োজনে রিজার্ভকে ব্যবহার করা যেতে পারে বলেও মত দেন।

সারাবাংলা ডটনেটের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট এম এ কে জিলানীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফায়েজ আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান, ব্যবসায়ী নেতা এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি ও বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এবং বিজিএমইএ-এর পরিচালক ও অনন্ত গার্মেন্টের এমডি ইনামুল হক খান। অনুষ্ঠানটি একযোগে সারাবাংলার ফেসবুক পেইজ, ইউটিউব চ্যানেল ও বেসরকারি টেলিভিশন জিটিভি থেকেও প্রচারিত হয়।

বিজ্ঞাপন

সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফায়েজ আহমেদ বলেন, ‘ইতালি ও মালয়েশিয়ার ঘটনা নিশ্চয় আমাদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু আমরা যদি পরিস্থিতিটা ওই সব দেশের সরকারকে বুঝাতে পারি সেটা একটা ভালো ফল আনতে পারে। কেন এই ঘটনা ঘটলো? সেটার পেছনে কাদের হাত আছে? যদি কেউ দুর্নীতি করে থাকে সেটার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছি সেটা দেখানো। সাথে সাথে ভবিষ্যতে যাতে এটা না ঘটে তার জন্য কী ব্যবস্থা নিচ্ছি সেটা তাদের বুঝানো। তাছাড়া বাণিজ্য এবং বিভিন্ন বিষয় যদি চলমান রাখতে পারি সেটা যে দুই দেশের জন্যই উপকারি সেটা যদি তাদের বুঝাতে পারি, নিশ্চয়ই এই সমস্যাটা একটা অস্থায়ী সমস্যা হবে। স্বল্প সময়ের জন্য হয়তো একটা সমস্যা হতে পারে। নিশ্চয় আমাদের ভাবমূর্তিতে আঘাত হেনেছে। সেটা আমরা আবার শুধরে নিতে পারি। শুধরে নেওয়ার সুযোগ আছে, সেই চেষ্টাটাই আমাদের করতে হবে। আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, কূটনীতিকি হিসেবে আমাদের তাই কাজ। কূটনীতিকরা কি করে, দেশের ভেতরে যে কাজ হয়, তা বাইরে প্রজেক্ট করা। দেশের ভেতরের সমস্যাগুলোকে দূর করতে আমাদের অত্যন্ত সচেষ্ট হতে হবে, যাতে এইরকম আর না হয়। যারা দোষী তাদেরকে যেন আমরা শাস্তি দিই। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারলেই অন্য পক্ষ যারা আছে আমাদের পার্টনার আস্থাবোধ করবেন বাংলাদেশের ওপরে। সমস্যা সব দেশেরই হয়, কিন্তু সমস্যা কাটিয়ে উঠার প্রচেষ্টা যদি আমাদের সচেতন হয়, সেটা যদি আমাদের প্রতিপক্ষ বা অংশীদাররা বুঝতে পারে, তাহলে আমাদের এগিয়ে যাওয়াতে খুব বেশি কষ্ট হবে না।’

তিনি বলেন, ‘যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই সেই সব শ্রমিকদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে, সবাইকে যে পাঠিয়ে দিচ্ছে তা নয়। বাংলাদেশর সবাইকে যে পাঠিয়ে দিচ্ছে তা তো নয়। ইতালি থেকে পুরো একটি ফ্লাইট ধরে পাঠিয়ে দিয়েছে, সেটা নিশ্চিয়ই নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলবে। অন্যান্য সব বিষয়ে আমরা যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। মালশিয়া ও আরব আমিরাতে শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষা হবে, হয়তো কিছুটা সময় লাগতে পারে। করোনার কারণে যে সবাইকে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে তা নয়, সেটি আমাদের খেয়াল রাখা দরকার। তিনি আরও বলেন, আমাদের সংসদ যখন মালেশিয়ার জেলে, সেখানে ওই দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও জেলে রয়েছেন। সমস্যা কিন্তু দুই পক্ষেরই আছে। সুতরাং শুধু আমার দিকে আঙ্গুল তুললে হবে না, যাদের সঙ্গে আমরা অংশীদার আছে এই ধরণের ঘটনা যাতে না ঘটে, সেটা দুই পক্ষের জন্যই ভালো হবে। এসব ব্যাপারে আমাদের আরও আন্তরিক হতে হবে।’

ফয়েজ আরও বলেন, ‘করোনায় সবাই যদি একসঙ্গে মিলে কাজ করতে পারি, একজন আরেকজনের দিকে আঙ্গুল না তুলে, যে ও দোষ করেছে, ওর জন্য এমন হয়েছে, তা না করে সবাই মিলে যার যা অভিজ্ঞতা আছে একযোগে এগিয়ে যেতে পারি এবং বাংলাদেশ সেখানে যে অবদান রাখতে পারে, বড় বড় রাষ্ট্রগুলোকে বলা ভাই তোমরা আমাকে সঙ্গে নিয়ে একযোগে কাজ করো, এই পরিস্থিতি থেকে সবাই আমরা তাড়াতাড়ি মুক্ত হতে পারবো।’

বিজ্ঞাপন

অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, ‘এন৯৫ মাস্ক বলেন, রিজেন্ট বলেন, জেকেজি বলেন, এগুলো কিন্তু নতুন কিছু না। আমাদের এখানে সব সময় দুর্নীতি ছিল। কিন্তু আমরা যে মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি সেই মুহূর্তে এ ধরণের দুর্নীতি গ্রহণযোগ্য নয়। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, সিট সংখ্যা বা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিয়ে মেথডলজি মেনে ক্রেডিবল ডাটা কারও কাছে কিন্তু আসছে না। বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং আছে, কিন্তু করোনা নিয়ে যাত্রীরা গেল কিভাবে? তাদের যে কোভিড সার্টিফিকেটগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো নেওয়ার জন্য হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাদের কতোটুকু স্ক্রিনিং আছে। ফলে আমরা কিন্তু দেখেন আজকে বৈশ্বিকভাবে খুব সম্ভবত বিবিসিতেই লেখা হয়েছে, আমরা কী বৈশ্বিকভাবে আইসোলেটেড হয়ে যাচ্ছি! যে উড়োজাহাজ ইতালিতে গেল, ইতালিতে নামতে দেয়নি। ফলে বিভিন্ন দেশতো বলবে ফেক সার্টিফিকেট নিয়ে তারা আসছে। মনিটরিংয়ের যে দুর্বলতা সেটি তো প্রকাশ পাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে বিদেশ থেকে যারা বিনিয়োগ করতে আসবে, তারা তো এসেই বলবে আমি তো আসার পরেই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে, আমি কী ইনভেস্ট করবো? কিংবা পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে জাহাজ নিয়ে তো ওইসব দেশে তো ভিড়তে হবে। করোনার কারণে বিশ্বে দুটি মেজর ঘটনা ঘটবে- প্রথমটি হচ্ছে রেমিট্যান্স বা মাইগ্রেশনের ক্ষেত্রে বড় রকমের কন্ট্রোলিং আসবে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে- আপনি কতোটুক হেলথ কমপ্লায়েন্সের মাধ্যমে পণ্য রফতানি করছেন পৃথিবীতে। স্বাস্থ্য খাতে কোন ধরনের স্বচ্ছতা নেই। কিন্তু এটা তো আজকের দিনে ভেঙে পড়েনি। দীর্ঘ বা লম্বা সময় ধরে এই ঘটনা ঘটেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যখন আমাদের দরকষাকষি হবে বা ডিলিংন্স হবে তখন এটা দুর্বলতা হিসেবে কাজ করবে। সাধারণভাবে যারা ব্যবসা করবে তারা তাদের টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনে কাজ করতে বলবে। গ্লোবাল্লি তারা বলবে আমাদের সার্টিফিকেশনে আসেন। এসব ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। আমাদের এসব সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’

এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘রফতানির ক্ষেত্রে আমাদের মূল প্রতিযোগিতা হচ্ছে ভিয়েতনাম, চীন ও বর্তমানে মিয়ানমারের সাথে। এখন ইন্দোনেশিয়াতেও কিন্তু যাচ্ছে। অথচ যে জাপানি কোম্পানিগুলো চীন থেকে সরে আসলো সেই কোম্পানিগুলো যাচ্ছে ভিয়েতনাম, মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়ায় যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের এখানে আসছে না। কারণ হল আমাদের এইযে সমস্যাগুলো আছে…। করোনা থেকে বের হয়ে না আসতে পারি, পরবর্তীতে দেখা যাবে সবাই বের হয়ে গেল। ইউরোপ বা আমেরিকা যদি দেখে বাংলাদেশে এটা কমছে না, বাংলাদেশে যদি না কমে এখানে অর্ডার প্লেস করলে পরবর্তীতে শ্রমিকরা আক্রান্ত হয়, কেউ যদি যোগাযোগ করতে না পারে, কেউ যদি না আসতে পারে, তাহলে তো তারা আমাদের অর্ডার প্লেস করবে না। আমাদের প্রতি তারা বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে। ইতালির কথা বলেছেন, ইতালির আগেই ইউরোপে আমাদের বিরুদ্ধে একটি প্রোপাগান্ডা চলছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও দেখতে পেয়েছে সেখানে আমাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। নেদারল্যান্ডের অ্যাম্বাসেডরের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, তিনিও বলেছেন, আমাদের কথাবার্তায় আরও সংযত হতে হবে। আমরা যদি বের হয়ে আসতে না পারি ওখানেও আলোচনা হচ্ছে। করোনায় সাড়ে তিন মাস কিন্তু হারালাম, কিন্তু কার্যকারভাবে যে কাজটি করা দরকার ছিল ঠিক সেভাবে আমরা করতে পারিনি। লকডাউনের মধ্যেও আমরা সাধারণ মানুষরা প্রচণ্ড রকমের অবহেলা করেছি। মহামারিকে অবহেলা করে আমরা ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছি। লকডাউন দিয়েও রাখা যাচ্ছে না, জোর করে বের হয়ে যাচ্ছি। এই জাতিকে কিভাবে মানুষ কন্ট্রোল করবে। প্রধানমন্ত্রী কষ্ট করে দেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দরকষাকষির যায়গায় নিয়ে গেছেন, কিন্তু আমাদের মুষ্টিমেয় কিছু অসাধু লোকের জন্য আমাদের দেশটাকে আমরা যে যায়গায় নিয়ে যেতে চাচ্ছি, সেখান থেকে বারবার আমাদের পিছুটান দিচ্ছে। আমাদেরকে কঠোর সিদ্ধান্তে আসতে হবে, সরকার যেটা বলবে মানুষকে সেটা শুনতে হবে। সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে, যে অন্যায় করছে তাদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকিং খাতে একটি দুর্বলতা আছে। তারমানে এই নয় যে তারা খুব নাজুক অবস্থায় আছে। পৃথিবীর সব যায়গায় কিন্তু দুর্নীতি আছে। সব দেশে মানুষ ভালো মন্দ আছে। মুষ্টিমেয় ‍কিছু লোকের জন্য এই ভাবমূর্তিটা নষ্ট করছি, ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা খুব কঠিন বিষয় নয়। প্রধানমন্ত্রী করোনার শুরুতেই প্রণোদনা দিলেন। এই প্রণোদনা যদি এসএমই খাতের জন্য প্রান্তিক পর্যায়ে ঠিকভাবে প্রদান না করা হয় তবে অর্থনীতিকে বেগ পেতে হবে। গার্মেন্টসে যেটা দিয়েছেন সেটা প্রণোদনা নয়, ঋণ। শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ ব্যাংকগুলো দিয়েছে আর ৪০ শতাংশ আমাদের দিতে হয়েছে। ৩ মাস আমরা বেতন দিতে পেরেছি। ২ মাসে শেষ হয়ে গিয়েছিল, পরবর্তীতে প্রধামন্ত্রী ৩০ হাজার কোটি টাকা থেকে নিয়ে এটা দিতে বলেছেন, এবং এই মাসের বেতনও আমরা দিতে পেরেছি। আমি মনে করি আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর গার্মেন্টস খাতের জন্য কঠিন সময়। এই সময়টি যদি আবার গার্মেন্টস খাতটিকে টিকিয়ে রাখতে হয়, যদি কোনো রকম সহায়তার প্রয়োজন হয়, সরকারের এগিয়ে আসা দরকার। কারণ করোনা থেকে রাতারাতি মুক্তি পেয়ে যাবো তা নয়। ব্যাংকগুলো বলছিল, আমরা যে প্রণোদনা দিব, পরে বাজেটের জন্য যে ৮৬ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হবে, তাহলে ব্যাংকের ওপরে একটি চাপ পড়বে। সেজন্য প্রধামন্ত্রী বলেছেন, রিজার্ভ থেকে ঋণ নেওয়া যায় কি না বাংলাদেশকে তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন। আমি মনে করি, আমাদের দেশে যে রিজার্ভ আছে, সেই রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে হলেও আমাদের যেসব যায়গায় প্রয়োজন তা সমাধান করতে পারি। রিজার্ভের টাকা যেখানেই রাখা হোক সেখানে কিন্তু কম সুদ পায়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে শূন্য সুদ। আমরা কোনো লোককে সহায়তা করতে চাই না যে ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপী। যারা কখনো খেলাপি হয় না তাদের আমরা সহায়তা করতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করছি কখন এই মহামারি চলে যাবে, এটি চলে যাওয়ার পরে, আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে না আসলে এখনো কিন্তু সরকারি অফিসে যেতে বলেছেন ৩০ শতাংশ। তাহলে কাজকর্ম ঠিক হচ্ছে। যে বের হচ্ছে সে আক্রান্ত হচ্ছে। সুতরাং মানুষের মনে যদি ভীতি থাকে তাহলে তো সাধারণ কাজটি করতে পারবে না। অর্থনীতি নিয়ে আমরা ভালো থাকতে পারি কারণ আমাদের এখানে খাদ্যটা আছে। ধান চাল বা মাছে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। খাদ্যের জন্য এখানে মহামারি লেগে যাবে তা না। যদি ব্যবসা বাণিজ্য ঠিক থাকে তাহলে সব ঠিক থাকবে। সেই যায়গায় মানুষের ভীতিটা কমিয়ে আনতে দ্রুততার সঙ্গে মহামারি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। কীভাবে নগরীগুলোতে করোনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তা চিন্তা করতে হবে।‘

বিজ্ঞাপন

বিজিএমইএ-এর পরিচালক ও অনন্ত গার্মেন্টের এমডি ইনামুল হক খান বলেন, ‘১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সময় এসেছে। এই মহামারি তো আমরা আগে দেখিনি। এখন আমাদের প্রতিটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। পারফেক্টলি চলতে হবে। চ্যালেঞ্জ যখন আসে তা আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পরিবর্তে আমরা কিছুটা ভিন্ন পথে হাঁটছি। কিছু ভুল প্রচারণা হচ্ছে। মারাত্মকভাবে আমরা ইমেজ ক্রাইসিসে পড়ছি। ইমেজ ক্রাইসিসে যদি পড়ি তাহলে আমাদের অবস্থা আরও খারাপ হবে। এমনিতেই অর্ডার সংকট রয়েছে। অর্ডার কমে গেছে, বেশ কিছু ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেক ফ্যাক্টরি বেতন দিতে পারছে না। প্রণোদনা দিয়েও এটাকে ধরে রাখা যাবে না, যদিনা অর্ডার আমরা পুনরায় না পাই। ইমেজ সংকট আমাদের আরও খারাপ পরিস্থিতিতে নিয়ে যাবে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এই পরিস্থিতি উৎরাতে হবে। ২৬ মার্চের পর আমরা এক মাস গার্মেন্টস বন্ধ রাখলাম, পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু করা হয়েছে। স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত সফলভাবে মেইনটেন করে যাচ্ছি। এই পর্যন্ত ৩৭০ থেকে ৩৭৫ জন করোনা রোগী আমাদের সেক্টরে ধরা পড়েছে, অথচ এখানে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ লোক কাজ করছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে এটি আমাদের বড় সাফল্য। আমরা এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। কারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা ফ্যাক্টরিতে কাজ করছি। করোনার কারণে গার্মেন্টস সেক্টরের সব কর্মীরা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, এমন সংবাদ আমাদের বায়ারদেরকে নিরুৎসাহিত করবে, তারা তাদের অর্ডার ফিরিয়ে নেবে। পুরো বিজিএমইএকে আমরা সেইফ রাখার চেষ্টা করবো, আমাদের শ্রমিকদের আমরা নিরাপদে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ফ্যক্টরিগুলো যেন সেইফ থাকে, ফ্যাক্টরিগুলো সেইফ থাকলে আমাদের বায়াররা আরও আশ্বস্ত হবে।‘

তিনি বলেন, ‘বায়ারদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হচ্ছে কোয়ালিটি গুডস যাবে এবং সময়মতো ডেলিভারি হবে। বায়াররা আমাদের কাছে আসছে, কারণ তাদের বিকল্প নেই। আমরা বিশ্বে দ্বিতীয় পোশাক রফতানিকারক। গার্মেন্টেসে যেন করোনা ছড়িয়ে না পড়ে এটা আমাদের দায়িত্ব, আমরা সে যায়গায় কাজ করছি। আমরা যদি গার্মেন্টসকে সেইফ রাখতে পারি তাহলে অর্ডার আসবে। তিনি বলেন, রিজার্ভ এখন ৩৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁচেছে। আমরা যতোটুকু পারি রিজার্ভকে কাজে লাগাবো, সেটা একটি ভালো জিনিষ। টাকার অবমূল্যায়সহ বেশ কিছু জিনিষ করলে আমাদের প্রতিযোগি দেশগুলোর সঙ্গে প্রযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি হবে। রফতানি বিধিনিষেধ ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করা উচিৎ। চট্টগ্রাম বন্দরকে সচল রাখতে হবে, বন্দরটিকে ঠিক রাখতে হবে।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/এমআই

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন