July 14, 2020 | 2:09 am
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: যশোর-৬ (কেশবপুর) ও বগুড়া-১ (সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ আজ মঙ্গলবার (১৪ জুলাই)। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দুই আসনে বিরতিহীনভাবে ভোট চলবে।
‘সাংবিধানিক নিয়ম রক্ষা’র এই নির্বাচনে সবধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই মধ্যে দুই সংসদীয় এলাকায় মোটরসাইকেলসহ গণপরিবহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এছাড়া ভোটগ্রহণের দিন, আজ মঙ্গলবার এই দুই নির্বাচনি এলাকায় সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, দুই আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে কারণ দেখিয়ে নির্বাচন বন্ধ রাখার জন্য ইসিতে তারা চিঠিও দিয়েছে। তবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় অতিবাহিত হওয়ার পর বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ায় ব্যালটেও তাদের দলীয় প্রার্থীর প্রতীক থাকছে।
অন্যদিকে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর দিন উপনির্বাচন হওয়ায় তারিখ পেছানোর দাবি জানিয়েছিল তারাও। কিন্তু দুই দলের দাবিই নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এর আগে ইসি সচিব মো. আলমগীর জানান, ওই দুই আসনে নতুন করে কোনো মনোনয়নপত্র জমা দাখিলের প্রয়োজন নেই। যেসব প্রার্থী ছিলেন এবং যে অবস্থায় নির্বাচন স্থগিত হয়েছিল, সে অবস্থা থেকেই আবার কার্যক্রম শুরু হবে।
গত ১৮ জানুয়ারি আবদুল মান্নান মারা গেলে বগুড়া-১ আসনটি শূন্য হয়। এ আসনে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৮৯৩ জন ভোটার। উপ-নির্বাচনে প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের সহধর্মিণী সাহাদারা মান্নান (নৌকা), বিএনপির একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির মোকছেদুল আলম (লাঙ্গল), প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) মো. রনি (বাঘ), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নজরুল ইসলাম (বটগাছ) ও স্বতন্ত্র ইয়াসির রহমতুল্লাহ ইন্তাজ (ট্রাক)।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইসমাত আরা সাদেক গত ২১ জানুয়ারি মারা যাওয়ায় যশোর-৬ আসনটি শূন্য হয়। এ আসনে ২ লাখ ৩ হাজার ১৮ জন ভোটার। এই আসনের প্রার্থীরা হলেন হলেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহীন চাকলাদারকে (নৌকা), বিএনপির প্রার্থী আবুল হোসেন আজাদ (ধানের শীষ) ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব (লাঙ্গল)।
দুই সংসদীয় আসনে ২৯ মার্চ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরে নির্বাচনের সপ্তাহখানেক আগে তা স্থগিত ঘোষণা করা হয়। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের তীব্রতা নাম কমলেও নির্বাচন কমিশন বলছে, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থেকে তারা নির্বাচন করছে। আগামী ১৫ জুলাই বগুড়া-১ আসনের এবং ১৮ জুলাই যশোর-৬ আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সংবিধান নির্ধারিত ১৮০ দিন শেষ হতে যাচ্ছে বলেই তারা করোনার মধ্যে নির্বাচন করতে বাধ্য হচ্ছে।
সংবিধানের যে অনুচ্ছেদ দেখিয়ে ইসি এই নির্বাচন আয়োজন করছে, সেই ১২৩ অনুচ্ছেদের ৪ দফায় বলা হয়েছে— সংসদ ভেঙে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো কারণে সংসদের কোনো সদস্যপদ শূন্য হলে পদটি শূন্য হওয়ার নব্বই (৯০) দিনের মধ্যে ওই শূন্যপদ পূর্ণ করার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে শর্ত থাকে— যদি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) মতে, কোনো দৈব-দুর্বিপাকের কারণে এই দফার নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে ওই নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হয়, তাহলে ওই মেয়াদের শেষ দিনের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সংবিধানের এই ধারা অনুযায়ী, আসন শূন্য হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণসহ আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন চাইলে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে কিংবা রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা শিথিলের উদ্যোগ নিতে পারত। অথবা কিছুদিন আগ পর্যন্তও সংসদ অধিবেশন চলছিল। সরকারকে চাপ দিয়ে মহামারি পরিস্থিতিতে নির্বাচন পেছানো বিষয়ক বিলও পাস করিয়ে নিতে পারত।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর