বিজ্ঞাপন

বাধা পেরিয়ে নারীরা এগুচ্ছে নীতি নির্ধারণীতেও

March 7, 2018 | 8:46 pm

একটা সময় ছিল পরিবারে মেয়ে সন্তানের জন্মে অখুশি হতো বাবা, কান্নায় ভেঙে পড়তো মা। কন্যা সন্তান মানেই ছিল পরিবারের বোঝা। একটা পুত্র সন্তান হলে উপার্জন করে পরিবারের হাল ধরবে, বৃদ্ধ বাবা মায়ের শেষ বয়সে অবলম্বন হবে, অন্যদিকে কন্যার জন্য শুধু দিয়েই যেতে হবে- এমনটাই ছিল আমাদের সমাজের চিন্তাধারা।

বিজ্ঞাপন

সময়ের সাথে সাথে সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে, সাথে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। কন্যা-নারীরা আর সমাজের বোঝা নয়। দেশ বিনির্মাণে পুরুষের সমান তালে কাজ করে যাচ্ছে নারীরা। স্বাধীনতার পর থেকে নারীরা অবদান রেখে যাচ্ছে আমাদের অর্থনীতিতে, রাজনীতিতে। দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকারসহ পুলিশ র‍্যাব সেনাবাহিনী নৌবাহিনীসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় কৃতিত্বের সাথে কাজ করে যাচ্ছে নারীরা। দেশের তৈরি পোষাক শিল্প টিকিয়ে রেখেছে এদেশের কর্মঠ নারীরা। শুধু পেশাগত কাজেই নয় নারীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে শিল্পে সাহিত্যে, খেলাধুলায়, ভ্রমণে– এই বাংলার নারীর কাছে হার মেনেছে এভারেস্টও।

বাংলাদেশের প্রতিটা ক্রান্তিকালে, প্রতিটি আন্দোলনে নারীরা অংশ নিয়েছে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে। ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র গণ অভ্যুত্থানে, ১৯৭০’র নির্বাচন, ১৯৭১’র মুক্তিযুদ্ধ প্রতিটা ঘটনায় বাংগালী নারী প্রমাণ করেছে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, রাজনৈতিক সচেতনতা। বাংলাদেশে সংগঠিত প্রতিটি রাজনৈতিক আন্দোলনে নারীর ভুমিকা ছিল অপরিসীম। দেশের প্রয়োজনের সময়ে বাঙ্গালী নারী কখনোই ঘরে বসে থাকে নি। এমনকি মুক্তিযুদ্ধে নারীরা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মোকাবেলা করেছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ কখনোই সহজ ছিল না। নারীকে স্বাধীনতার আগেও যেমন নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও নারীকে পড়তে হচ্ছে নানা প্রতিবন্ধকতায়। রাজনীতিতে নারীর মূল প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে পুরুষ সহকর্মী এবং তার পেশিশক্তি। একজন নারী রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের সাথে সাথে তাকে প্রথম যে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় তা হচ্ছে তার পুরুষ সহকর্মী। রাজনীতির মাঠে একজন পুরুষ সহকর্মী যতটা সহজে তার পেশিশক্তি দেখাতে পারেন, একজন নারীর ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়েই সেই পেশি শক্তির সাথে লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।

বিজ্ঞাপন

এছাড়াও রয়েছে সামাজিক বাধা। উচ্চবিত্ত পরিবারের নারীরা যতটা সহজে রাজনীতিতে অংশ নিতে পারেন, নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীদের পক্ষে সেখানে রাজনীতিতে আসাটা অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়ে। আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজ কোন মেয়েকে রাজনীতিতে অংশ নিতে দেখলেই ধরে নেয় মেয়েটা বখে গেছে। আর এই সামাজিক নিগ্রহ সহ্য করে খুব কম মেয়েই নিজেকে দেশ সেবার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। শুধু সমাজ না অধিকাংশ সময়ে দেখা যায় রাজনীতি সচেতন একটি মেয়ে তার পরিবার থেকে যথাযথ সহায়তা পায়না যেটা খুব সহজেই পেয়ে যায় একই পরিবারের ছেলেরা। এছাড়া পুরুষ সহকর্মীদের বাঁকা হাসি, কটু মন্তব্য, অনৈতিক দুর্ব্যবহারের কারনে অনেক উচ্চশিক্ষিত মেধাবী মেয়েরাও ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও রাজনীতিতে সক্রিয় অংশ নিতে চায় না।

মিটিং মিছিল আর সমাবেশে নারীরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করলেও গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থায় নারী অনেক সময়ই পিছিয়ে পড়ে মনোনয়ন যুদ্ধে। সংরক্ষিত নারী আসন ছাড়া অন্য আসনগুলোতে নারীরা শিক্ষায়, জনপ্রিয়তায়, যোগ্যতায় এগিয়ে থাকলেও খুব বেশি সংখ্যক নারী পাচ্ছেন না মনোনয়ন।

তবে এসকল প্রতিবন্ধকতার সাথে লড়াই করেও এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা। আর এতো প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও রাজনীতিতে নারীকে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য “বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ” এবং তার সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ। তার দৃষ্টিভঙ্গি ও সুদূরপ্রসারী চিন্তা ভাবনা জন্য নারীরা আজ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর পাশাপাশি অন্যান্য মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোতেও মূল্যায়িত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সংগ্রাম ও প্রজ্ঞার কারণেই রাজনীতিতে বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ, নারীরা জনপ্রতিনিধি হিসেবেই ভূকিমা রাখছেন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও। সংখ্যায় খুব কম হলেও নারীরাও অংশগ্রহণ করছে সরকারের জাতীয় পর্যায়ের নীতি নির্ধারণী ফোরামে।

বিজ্ঞাপন

লেখক: পরিচালক, রেডিও ঢোল, এফএম ৯৪.০ ও প্রতিষ্ঠাতা, দ্য লাভলি ফাউন্ডেশন

[এই কলামে উপস্থাপিত সকল মত লেখকের নিজের]

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন