বিজ্ঞাপন

দেশের প্রথম করোনা হাসপাতালে ৪ মাসেও পূরণ হয়নি প্রতিশ্রুতি

July 19, 2020 | 1:31 pm

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতালের নাম। এই হাসপাতালগুলোর মধ্যে সবার আগে ঘোষণা দেওয়া হয় বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের নাম। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ হাসপাতালে ২৬টি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) প্রস্তুত রাখার কথা।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ৮ মার্চ প্রথম কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ার পর প্রায় সাড়ে ৪ মাস হতে চলল। হাসপাতালের একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছে এখনও ১৬টি আইসিইউ বেডেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। বাকি ১০টি আইসিইউতে এখনও কোনো রোগী ভর্তি রাখা হচ্ছে না।

কর্তৃপক্ষ জানালেন, আগে যে ১০টি আইসিইউ চালু ছিল সেগুলো বন্ধ আছে। সেগুলো বাদে নতুন ১৬টি আইসিইউ চালু আছে। আর এর জন্য বলছেন জনবল সংকটের কথা। বলছেন, খুব দ্রুতই চালু করা হবে এই আইসিইউগুলোতে চিকিৎসা দেওয়া।

এর আগে, ৫ এপ্রিল সারাবাংলায় সংবাদ প্রকাশিত হয় ‘কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল: নেই পর্যাপ্ত আইসিইউ, খাবার আসে বাইরে থেকে’ শিরোনামে। সেই সংবাদে বলা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতর ২৬টি আইসিইউয়ের কথা বললেও বাস্তবে এই হাসপাতালে আইসিইউ বেডের সংখ্যা ১০টি। তবে তার সবগুলোকেও পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ দাবি করা যায় না। তাছাড়া রয়েছে জনবলের ঘাটতি। আবার কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে খাবার বরাদ্দ থাকলেও চিকিৎসকদের খাবার আসছে বাইরে থেকেই। প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনেক তথ্যের সঙ্গেই বাস্তবতার মিল নেই।

বিজ্ঞাপন

সে সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালকের (হাসপাতাল) পক্ষ থেকে বিষয়গুলো অস্বীকার করা হয়।

৫ এপ্রিল বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. শিহাব উদ্দিনের কাছে জনবল সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেছিলেন, এখানে কোনো জনবল সংকট নেই। আমি যা বলছি, তা ঠিকই বলছি। এই কথা আমাকে শোনাচ্ছেন কেন? সবাই এখানে ডিউটি করছে। বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন সেকশনে ডিউটি ভাগ করা আছে।

এ দিন হাসপাতালে ২৬টি আইসিইউ বেড প্রস্তুত না থাকা, পোর্টেবল এক্সরে মেশিন বা ব্লাড গ্যাস অ্যানলাইজার না থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আমিনুল হাসান। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, হাসপাতালে সবকিছুই প্রস্তুত আছে। চিকিৎসকদের খাওয়া-দাওয়ার বিষয়টিও এরই মধ্যে সরকারিভাবেই করা হচ্ছে। ১০ দিন ধরে তারা হোটেলে থাকছেন সরকারি ব্যবস্থাপনাতেই। তাদের যাতায়াতের জন্য তিনটি গাড়ি দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু বাস্তবতায় সেই সময়ে এমন কোনো ব্যবস্থাপনাই ছিল না যা নিয়ে পরবর্তী সময়ে ১৩ এপ্রিল সারাবাংলায় আরেকটি সংবাদ প্রকাশিত হয় ‘করোনা চিকিৎসায় কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল?’ শিরোনামে।

আগের সংবাদে অস্বীকার করলেও ১৩ এপ্রিল আইসিইউ’র জনবল বিষয়ে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. শিহাব উদ্দিন বলেন, আইসিইউতে বর্তমানে যে রোগী আছে, তার জন্য যে জনবল ঠিক আছে। তাছাড়া আমাদের ২৬টি আইসিইউ’র জন্য এখনো লোক নিয়োগ হচ্ছে। ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ২৬টি আইসিইউর মধ্যে ১০ টি চালু হলেও বাকি ১৬ টি এখনো চালু হয় নি বলে সারাবাংলাকে নিশ্চিত করে হাসপাতালের একাধিক সূত্র।

১৫ জুলাই হাসপাতালের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ১৬টি আইসিইউ চালু আছে। আগের ১০টা চালু নেই।

এদিন এই তথ্য স্বীকার করে নেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. শিহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, জনবল কিছু দিছে। কিছু জয়েন করেছে আর কিছু এখনো জয়েন করে নাই। জয়েন করলেন চালু করব। এ মুহূর্তে হাসপাতালে ১৪২ জন চিকিৎসক আছেন, ২০৬ জন বা ২০৭ জন নার্স আছেন। আমাদের এখানে সরকারি ওয়ার্ড বয় নেই তাও আমরা দৈনিক হিসেবে আউটসোর্সিং করে ১০৮ থেকে ১০৯ জন ওয়ার্ড বয় রেখেছি। আশা করছি, খুব দ্রুতই শুরু হবে।

বিজ্ঞাপন

সেন্ট্রাল অক্সিজেন বিষয়ে তিনি বলেন, আইসিইউতে চালু হয়েছে কিন্তু অন্যান্য স্থানে এখনো চালু হয়নি। আমাদের ২৪৩টা অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকায় কোনো সমস্যা হচ্ছে। যদি সেন্ট্রাল পাইপলাইন লাগায় তাহলে হয়তো আরেকটু ভালো সেবা দেওয়া যাবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আমিনুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

আরও পড়ুন
কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে এখনও চালু হয়নি ১৬টি আইসিইউ
কুয়েত মৈত্রী ও কুর্মিটোলায় নেই কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা
করোনা চিকিৎসায় কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল?
কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল: নেই পর্যাপ্ত আইসিইউ, খাবার আসে বাইরে থেকে

সারাবাংলা/এসবি/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন