বিজ্ঞাপন

‘ত্রাণ সংকট নেই, বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে সে প্রস্তুতিও নিয়ে রাখছি’

July 26, 2020 | 7:02 pm

সিনিয়র করেসপনডেন্ট

ঢাকা: দলীয় নেতাকর্মীদের বন্যা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ত্রাণের কোনো সংকট নেই। পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা রয়েছে। এবারের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে সে প্রস্তুতিও আমরা নিয়ে রাখছি। আমাদের সবধরনের প্রস্তুতি ও যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৬ জুলাই) বিকেল চারটার দিকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকের মোবাইল ফোনে ভিডিও কলে যুক্ত হয়ে উপস্থিত নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। এ সময় ধানমন্ডিতে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমানের নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এক অনির্ধারিত বৈঠকে বসেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। বৈঠকে গণভবন থেকে জাহাঙ্গীর কবির নানকের মোবাইল ফোনে ভিডিও কলে যুক্ত হন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি দলীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘যেসব এলাকায় বন্যা, সেসব এলাকার স্থানীয় সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিতে হবে। এদিকে আবার করোনা ভাইরাস; এটা নিয়েও সতর্ক থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে। ত্রাণের কোন সংকট নেই। পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা আছে।’

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বন্যায় যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছে, তাদের ঘরবাড়ি করে দিচ্ছি। বন্যার্তদের আপাতত স্কুল-কলেজে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে সবধরনের সহায়তা করা হচ্ছে। করোনা ভাইরাসে কৃষকদের ধান কাটাও আমরা নেতাকর্মীদের সহায়তায় ভালোভাবে করতে পেরেছি। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে ১৫ আগস্ট যেভাবে করতে চেয়েছিলাম সেভাবে পারলাম না। তাই আমরা একদিকে বৃক্ষরোপণ করব, আরেকদিকে বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ দেবো। দোয়া-মোনাজাত করা হবে। বন্যাদুর্গত মানুষের ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছানো, খাবার বিতরণ এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করা- এটাই হবে আমাদের কাজ।’

সবাইকে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এবার যেহেতু করোনা ভাইরাস। তারপরও কোরবানির ঈদ। অনেকেই কোরবানি দেবে। সবাই সবার মতো মানুষকে সাহায্য করতে হবে, মানুষের পাশে থাকতে হবে। স্বাস্থ্য সচেতন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন সবধরনের ব্যবস্থা নেবে। আমাদের সবাইকেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।’

এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আপনার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা এগিয়ে যাব। আপনাকে জানাতে চাই, আমাদের বিভিন্ন সংগঠন বন্যা কবলিত এলাকায় তারা কাজ করছে; ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আমাদের নেতাকর্মীরা করোনার মধ্যেও ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। করোনায় আমাদের একের পর এক নেতা মৃত্যুবরণ করছে। আমরা অনেক নেতাকে হারিয়েছি।

বিজ্ঞাপন

এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘করোনায় আমরা সবচেয়ে বেশি আমাদের নেতাকর্মী হারালাম। কারণ এই করোনায় সবাই কাজ করেছে।’ এ সময় কেন্দ্রীয় নেতারা সারাদেশে করোনাসহ বিভিন্ন বয়সজনিত রোগে নিহত নেতাদের নাম উল্লেখ করে দলীয় প্রধানকে অবহিত করেন। তখন তিনি বলেন, ‘আমি খবর পাচ্ছি। আসলে এই সময়ে অনেকেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলো। আমার কাছে সব খবর আছে। আসলে এখন এমন একটা সময় যে, মারা গেলেও দেখতে যেতে পারছি না। তারপরও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন উত্তরবঙ্গের কিছু এলাকা বন্যা কবলিত। এরপর মধ্য এলাকায় নেমে আসবে। হয়তো জুলাইয়ের শেষে দিকে মধ্য এলাকা এবং আগস্টের শেষ দিক দক্ষিণাঞ্চল বন্যা কবলিত হবে। এটা আমাদের দেশের প্রাকৃতিক নিয়ম। মধ্য উপকলূীয় এলাকায় বন্যা তেমন হয়নি। কিন্তু পদ্মার ওপারের এলাকায় এবার বন্যাটা ব্যাপক হারে দেখা যেতে পারে এবং এই বন্যাটা স্থায়ী হতে পারে। সব থেকে দীর্ঘ সময় ১৯৯৮ সালের বন্যা স্থায়ী ছিল। ১৯৮৮ সালের বন্যা ছিল দুই সপ্তাহ। ১৯৯৮ সালের বন্যা কিন্তু দীর্ঘ ৬৯ দিন ছিল। ওই সময় অনেকেই বলেছিল যে, দুই কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। আমরা ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। আল্লাহর রহমতে কোনো মানুষ না খেয়ে মারা যায়নি। সে কারণে এবারের বন্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে তা থেকে আমাদের কী করণীয়, সে ব্যাপারেও প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অতীতে বন্যার সময় দুর্যোগ কবলিত এলাকায় কীভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সে বিষয়েও স্মৃতিচারণ করেন। এ সময় তিনি নিজ হাতে রুটি বানানোর কথা, খাবার বিতরণের কথা, খাবার পানি, স্যালাইন তৈরিসহ ওষুধ বিতরণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সবধরনের প্রস্তুতি ও ব্যবস্থা যথেষ্ট রয়েছে। তারপরও আমাদের সেভাবেই তৈরি থাকতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সুবর, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন