বিজ্ঞাপন

ভাটারা হাটে ক্রেতাদের আকর্ষণ ‘রাজা বাবু’

July 29, 2020 | 10:01 pm

সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কুচকুচে কালো শরীর থেকে যেন তেল ঝরছে। আকৃতিতে দশাসই। হাঁক ছেড়ে ডেকে উঠলে একনজর না তাকিয়ে উপায় নেই। রাজধানীর ভাটারা-সাঈদনগরে কোরবানির পশুর হাটের যেন ‘আকর্ষণ’ হয়ে উঠেছে অস্ট্রেলিয়ান জাতের এই গরু। সুঠামদেহী এই ষাঁড়কে এর খামারি আদর করে নাম দিয়েছেন ‘রাজা বাবু’। এই ‘রাজা বাবু’কে দেখতে হাটে আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীদেরও সামলাতে হচ্ছে মালিক রইচ মিয়াকে। তাতে বিরক্তি যে একেবারে নেই, তা নয়। তবে তার ‘রাজা বাবু’ যে মানুষের নজর কেড়েছে, সেই গর্বও রয়েছে তার চোখেমুখে। এখন দ্রুত ‘রাজা বাবু’কে কারও হাতে তুলে দিতে পারলেই স্বস্তি তার।

বিজ্ঞাপন

ভাটারা-সাঈদনগর হাটে গিয়ে দেখা যায়, কেউ ‘রাজা বাবু’কে চারদিক থেকে ঘুরে ঘুরে দেখছেন, কেউ সেলফি তুলছেন তার সঙ্গে। দলবেঁধে যারা এসেছেন, তারা ‘রাজা বাবু’র সঙ্গে তুলছেন গ্রুপ ছবি। মালিক রইচ মিয়ার প্রত্যাশা, দেখতে দেখতেই হয়তো বিক্রি হয়ে যাবে তার গরুটি।

কথা হয় রইচ মিয়ার সঙ্গে। জানালেন, ১৮ থেকে ২০ মণ ওজন হবে ‘রাজা বাবু’র। দাম চাইছেন ১৫ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত ১০ লাখ টাকা দর উঠেছে। আর লাখ দুয়েক হলেই হয়তো বিক্রি করে দেবেন ‘রাজা বাবু’কে।

রইচ মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, দুই বছর বয়সী ‘রাজা বাবু’র লালন-পালনে তিন জন কর্মী গত ১২ মাস ধরে কাজ করেছেন। এতোদিন প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ বার চালের ভুষি, গমের ভুষি, খৈল ও লবণ মিলিয়ে প্রায় ২০ কেজি খাবার খাইয়েছি। সঙ্গে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ কেজি ঘাস। সব মিলিয়ে প্রচুর খরচ। তবে ঠিকমতো যত্ন নিতে না পারলে তো শরীরও পড়ে যাবে। হাটে আনার পর থেকে সেই যত্নটাই ঠিকমতো হচ্ছে না। হাটে আর কতটুকুই বা যত্ন নেওয়া যায়!

বিজ্ঞাপন

ক্রেতার সাড়া কেমন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত দু’দিনে মাত্র একজন ১০ লাখ টাকা দাম বলেছে। কিন্তু এ দামে বিক্রি করলে খরচ উঠবে না। তাই অন্তত খরচ উঠিয়ে সামান্য কিছু লাভও যদি থাকে, ধরে রাখব না। তেমন দাম না পেলে ফেরত নিয়ে যাব। তবে আশা করছি দ্রুত বিক্রি করতে পারব।

এদিকে, হাট ঘুরে দেখা গেছে, এবার বড় সাইজের গরু তেমন একটা ওঠেনি হাটে। অধিকাংশ গরু মাঝারি থেকে একটু বড় আকৃতির। ২ থেকে ৫ লাখ টাকা দাম হাঁকা হচ্ছে। ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যেও রয়েছে অনেক গরু। তবে নানা আকৃতির গরু থাকলেও ব্যাপারীরা বলছেন, ক্রেতার আনাগোনা তেমন নেই। যে দুই-চার জন আসছেন, তারাও দামদর করছেন, কিন্তু কেনার পুরো আগ্রহটা নেই তাদের মধ্যেও। ফলে গরু বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে পারবেন কি না— তা নিয়ে শঙ্কায় ভুগছেন ব্যাপারীরা।

বিজ্ঞাপন

নাসিরনগর থেকে পাঁচটি মাঝারি আকৃতির গরু নিয়ে হাটে এসেছেন নুরু ব্যাপারী। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আমার নিজস্ব খামার। দেড় বছর ধরে খুব যত্নে লালন পালন করেছি। ভেবেছিলাম সবগুলো না হলেও দেই-তিনটা বিক্রি হবে। কিন্তু চার দিন হলো একটা গরুও বিক্রি হয়নি। সবাই দাম জিজ্ঞাসা করেই চলে যাচ্ছে। কাস্টমাররা মনে করছে, দাম বেশি চাচ্ছি। কিন্তু আমি তো জানি, আমার কী পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে গরু লালন-পালনে। ওই খরচও যদি না ওঠে, তাইলে এত কষ্ট করে গরু লালন-পালনই বা করলাম কেন, হাটেই বা কষ্ট করে আনলাম কেন?

কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হলো। তারা বলছেন, গরুর দাম তাদের কাছে বেশিই মনে হচ্ছে। আর গরু কিনে রাখা, গরুকে খাওয়ানোর ‘ঝামেলা’ এড়াতে তারা যত দেরি করে সম্ভব গরু কিনতে চান।

এদিকে, পশুর হাটে একদিকে প্রবেশ ও অন্যদিক দিয়ে বের হওয়ার জন্য বারবার মাইকিং করা হলেও অনেককেই সে নিয়ম মানতে দেখা যায়নি। তারা ওদিক-ওদিক ঘোরাঘুরিতেই ব্যস্ত। তবে ব্যাপারী থেকে শুরু করে বেশিরভাগ ক্রেতার মুখেই ছিল মাস্ক।

স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে জানতে চাইলে হাটের তত্ত্বাবধায়ক সাজ্জাদুর রহমান বলেন, হাটে ক্রেতাদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে এবং ভিড় এড়াতে ১১টি কাউন্টার বসানো হয়েছে। গতবার ছিল সাতটি। এছাড়া প্রতিটি কাউন্টারের সামনে সুনির্দিষ্ট দূরুত্ব চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবার মূল গেটের পাশে মাস্ক বিক্রেতারা রয়েছেন। কেউ মাস্ক না নিয়ে এলেও সেখান থেকে কিনতে পারবেন। মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসএইচ/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন