বিজ্ঞাপন

১৩টি গরুর একটিও বিক্রি করতে পারেননি আজমত শেখ

July 31, 2020 | 10:41 am

সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) বিকেল সোয়া ৪টা। লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠে ঢুকতেই ডান দিকে একটু ভেতরেই বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে রাখা ১৩টি গরুর পাশে শুয়ে আছেন তিনজন। তাদের একজন আলমডাঙ্গা থেকে আসা গরুর ব্যাপারি আজমত শেখ। বাকি দুজন তার কর্মচারি। শুয়ে বসে দিন কাটলেও তাদের অপেক্ষা শুধু ক্রেতার। কিন্তু ক্রেতা সেরকম নেই বললেই চলে। কখনও কখনও দুয়েকজন ক্রেতার দেখা মিললেও দরদামে মিলে না। তাই এক প্রকার দুশ্চিন্তার ভাঁজ তার কপালে।

বিজ্ঞাপন

‘আজ চারদিন হল ১৩টি গরু আনছি। সবগুলো আমার খামারের। কিন্তু এহন পর্যন্ত একটাও বিক্রি করতে পারিনি। বিক্রির সময় আছে আর কালকের দিন। কিন্তু কাল যদি একটা গরুও বেচতে পারি তবে বাকিগুলো বাড়িতে নেওয়ার খরচটা উঠবে। নয়তো সেই খরচার জন্য ধার-দেনা করতে অইবো’- চরম দুশ্চিন্তা নিয়ে এভাবেই সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলছিলেন আজমত শেখ।

তিনি বলেন বলেন, ‘গত তিনদিনের কথা কী আর বলব। আজ সারাদিনও মনে হয় ২০ জন কাস্টমারও দাম জিগাইছে না। কিন্তু এমন হইলে বাড়ি যামু কি নিয়া। এত কষ্ট করে ৩০ হাজার টাকা ট্রাক ভাড়া দিয়া গরুগুলো আনছি। লগে দুজন খাটতেছে। তাদেরও খরচ দিতে হবে। আর যদি বিক্রি করতে না পারি তাইলে গরুগুলো খামারে নেয়ার জন্য বাড়তি খরচা বহন করতে অইবো।’

বিজ্ঞাপন

হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছর ধরে আমি ঢাকায় প্রতি হাটে গরু আনি কখনও পাঁচটা। কখনও দশটা। বিশটাও এনেছি। কিন্তু কোন হাটেই একটা গরুও ফেরত নিয়ে যেতে হয় নাই। শুধু এবার তার ব্যতিক্রম হইল। গতবার ২০ টা গরু আনছিলাম। সবগুলা বিক্রি করছি। কিন্তু এবার ১৩ টা আইন্যা একটাও বিক্রি করতে পারি নাই। আমার গরুগুলা দেড় থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম। কিন্ত দুয়েকজন কাস্টমার যারা মুলামুলি করছে তারা লাভ তো দূরের কথা খরচের পরিমাণ দামও বলছে না। যদি চালানও থাকে তবুও চাইতেছি বিক্রি কইরা দিমু। তাতেও কোনো সাড়া নাই।’

এমন অবস্থা শুধু আজমত শেখের নয়। হাটের অধিকাংশ ব্যাপারিই পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়। সময় যত গড়াচ্ছে চিন্তা তত বাড়ছে। তেমনি একজন রুস্তম ব্যাপারি। মেহেরপুর থেকে চারটি গরু নিয়ে এসেছেন তিনি। কিন্তু তিনদিনেও একটা গরু বিক্রি করতে পারেননি। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে কোরবানির হাটে গরু বেচি। এবারই এমনটা দেখলাম। হাটে কাস্টমারও নেই। দুয়েকজন যা আসে তাও বিক্রি করার মত দাম বলে না।’

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু রহমতগঞ্জ হাট নয়, রাজধানীর সবকটি হাটেই একই চিত্র। হাটের গরু ব্যাপারি ও খাস আদায়কারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতবারের তুলনায় এবার অর্ধেক গরুও বিক্রি হয়নি। অপেক্ষা বাকি একদিনে কি পরিমাণ গবাদি পশু বিক্রি হয়।

রহমতগঞ্জ হাটের ইজারাদার শফি মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘যে পরিমাণ পশু বিক্রি হচ্ছে তা প্রত্যাশিত নয়। প্রায় অর্ধেক গরুই অবিক্রিত এখনও। দিন বাকি আছে একটা। এখন সবার অপেক্ষা এই একদিনে কী পরিমাণ বিক্রি হয়।’ তবে এখন পর্যন্ত ঠিক কী পরিমান গরু বিক্রি হয়েছে সে তথ্য দিতে রাজি হননি তিনি।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মোট কতটি গরু বিক্রি হয়েছে সে হিসেব এখনও করিনি। কোরবানির পরে তা জানানো যাবে।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসএইচ/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন