বিজ্ঞাপন

পারফরম্যান্সই আমার গ্ল্যামার: তাসকিন

August 1, 2020 | 10:59 am

মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

উচ্চতা ৬ ফিট ১ ইঞ্চি। গৌর বর্ণের, নিস্পাস চেহারা, মুখে সবসময় স্মিত হাসি লেগেই থাকে। চলতে বলনেও দারুণ আধুনিক। প্রথম দর্শনেই যে কোন রমনী তার প্রেমে পড়ে যেতে পারেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই প্রজন্মের সদস্যদের মধ্যে সেরা গ্ল্যামার বয়’র তকমা তার গায়েই লেপ্টে আছে। এই গ্ল্যামারের কারণেই হয়ত এদেশের কিংবদন্তি অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্ত্তজাও তাকে ‘হিরো’ বলে ডাকেন। বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই কার কথা বলছি? হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন। তিনি তাসকিন আহমেদ, লাল সবুজের ক্রিকেটের গতি তারকা।

বিজ্ঞাপন

একে তো গ্ল্যামারাস তার ওপরে আবার অভিষেকে চোখ ঝলসানো পারফরম্যান্স। এই দুয়ের সমন্বয়ে ক্যারিয়ারের ঊষালগ্নেই এদেশের লাখো রমনীর স্বপ্নের পুরুষ মানুষ হয়ে উঠেছিলেন তাসকিন আহমেদ। ২০১৪ সালের জানুয়ারির কথা। সফরকারী ভারতের বিপক্ষে বল হাতে গোলা ছুঁড়ে ৫ উইকেট শিকার করে ক্রিকেট বিশ্বে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন এই তরুণ। চার দিকে থেকে ধেয়ে আসছিলো বিজ্ঞাপন ও নতুন নতুন এনডোর্সমেন্ট। যেন ঊনিষেই এদেশের ক্রিকেটর আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম নক্ষত্র বনে গিয়েছিলেন!

কিন্তু সেই স্টারডাম বা তারকাখ্যাতি শক্ত হাতে সামলাতে পারেননি উদীয়মান এই পেসার। ফলে ক্যারিয়ারটা আজ যেখানে আসার কথা ছিল, আসেনি। তাসকিনও তা অকপটে স্বীকার করেন। আরেকটু সতর্ক হলে, স্রোতে গা না ভাষালে হয়ত ক্যারিয়ার আরো ঝলমলে হত। তবে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছেন ২৫ বছর বয়সী এই পেসার। ভুলেও আর ওপথ মাড়াবেন না। তারকাখ্যাতিকে ক্যারিয়ারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে দেবন না বলে তিনি দৃঢ় সংকল্প। চেহারা নয়, এখন থেকে পারফরম্যান্সই তার গ্ল্যামার হয়ে দ্যুতি ছড়াবে, একথাও সাফ জানিয়ে দিলেন।

বিজ্ঞাপন

অবশ্য শুধুই যে গ্ল্যামার তাসকিনের ঝলমলে ক্যারিয়ারের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে তা কিন্তু নয়। ইনজুরিও এক্ষেত্রে খলনায়কের ভুমিকা পালন করেছে। কেননা গেল ৬ বছরে এই পর্যন্ত অসংখ্যবার পড়েছেন ইনজুরিতে। কখনো ব্যাক পেইন, কখকো সাইডস্ট্রেন আবার কখনো বা আঙুলে চিড়। ছোট খাট নিগলস তো ছিলই। টানা খেলায় ইনজুরি ম্যানেজমেন্টও সেভাবে করতে পারেননি। তবে এখন তিনি দারুণ সতর্ক। ইনজুরি ব্যবস্থাপনায় ঢেঢ় সময় দিচ্ছেন। এর মধ্য দিয়েই আগামিতে আবার স্বরুপে ফিরেপা জাতীয় দলের হারানো জায়গা পুনরুদ্ধারের আশাবাদ ব্যক্ত করলেন। এবং সেই লক্ষ্যে তাকে বেষ আত্মবিশ্বাসিও শোনাল। (সবশেষ টেস্ট ও ওয়ানডে খেলেছেন ২০১৭ সালে। টি টোয়েন্টি ২০১৮)।

সারাবাংলার সঙ্গে একান্তে আলাপকালে কথাগুলো বলছিলেন তাসকিন। বলেছেন ঈদুল আজহার পরিকল্পনা, ফেইসবুকে সরব থাকা নিয়ে বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া এবং তার প্রতিক্রিয়াসহ প্রাসঙ্গিক আরো অনেক বিষয়েই। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরা হল।

সারাবাংলা: এই ঈদে আপনার পরিকল্পনা কি?

বিজ্ঞাপন

তাসকিন: এখন তো তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। বাবা গরু কিনেছেন। ঈদের দিন গরু কাটতে হবে। আর আমার ছোট্ট একটা ছেলে-তাশফিন ওর সাথে ঈদ করব। আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া করোনার মধ্যে আমাদের পরিবারের সবাই ভালো আছে কারো কোন সমস্যা হয়নি। তেমন বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই।

সারাবাংলা: আপনাকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পেস বোলিংয়ের কমপ্লিট প্যাকেজ বলা হয়। আপনার উচ্চতা, আপনার গতি সবকিছুই। আপনার কী মনে হয় আপনি কতটুকু আসতে পেরেছেন?

তাসকিন: সত্যি বলতে শুরুটা যেভাবে করেছিলাম ওভাবে আগাতে পারিনি। আমার মেধা অনুযায়ী আমি দিতে পারিনি। তার মনে এই না আমি আর পারব না। অবশ্যই আমি পারবো। তবে মাঝখানে ইনজুরির কারণে অফ ফর্ম গিয়েছে। সবমিলিয়ে দুইটা বছর নষ্ট হয়েছে। এটা একদিকে ভালোই হয়েছে। হয়তো কিছু কিছু ব্যর্থতা, ভুল আমাকে বদলে দেবে। এসবই আমার জন্য একটি ভাল শিক্ষা। আমার বিশ্বাস আমি যদি আমার মেধানুযায়ী অনুযায়ী খেলতে পারি আমি আবার আগের ফর্মে ফিরতে পারব।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: ইনজুরি আপনাকে কতখানি ভুগিয়েছে?

তাসকিন: অনেক ভুগিয়েছে। এটা আমাকে মেনে নিতেই হবে। কেননা ফাস্ট বোলারদের জীবনে ইনজুরি একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সবারই ইনজুরি আছে। বিষয়টা হচ্ছে ব্যবস্থাপনা করা। ইনজুরি ব্যবস্থাপনাটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এমন হয়েছে খেলার চাপে ইনজুরি ব্যবস্থাপনা ঠিকমতো হয়নি। আমার হয়তো ঠিকমতো ব্যবস্থাপনা করা উচিত ছিল। সামনে ব্যবস্থাপনাটা ভালভাবে হাতে করতে হবে।

সারাবাংলা: ইনজুরি ব্যবস্থাপনা কী আপনার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে?

তাসকিন: জ্বি, বলতে পারেন। শুধু আমি না, যাদের একবার বড় ইনজুরি হয়েছে তাদের সবারই ব্যবস্থা করে করে খেলতে হয়। সেটা টেস্ট হোক ওওয়ানডে কিংবা টি টোয়েন্টি। এই দায়িত্বটা কিন্তু আমার নিজের। এটা কেউ করে দিবে না এটা আমাকেই করতে হবে।

সারাবাংলা: ২০১৬ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আপনার বোলিং একশন অবৈধ প্রমানিত হয়েছিল। পরে শুধরে আবার খেলায় ফিরলেন। এটা আপনার ক্যারিয়ারে কতটা ছন্দপতন করেছে বলে মনে হয়?

তাসকিন: সত্যি বলতে ওই সময় আমি দারুণ ফর্মে ছিলাম। ওইটার পরে আবার ফিরে এসে খেলেছি। তখন ছন্দটা একটু খারাপ ছিল পরে আবার ভালো হলো। ২০১৭, ২০১৮ বিপিএলে কিন্তু আমি দারুণ ছন্দে ছিলাম। পরে ইনজুরিতে পড়লাম। তবে ২০১৬ সালের ছন্দটাই আমার কাছে সেরা। এরপরে ইনজুরির কারণে ছন্দ কিছুটা কমে গেল। দেখা যাক সামনে কি হয়।

সারাবাংলা: জ্যাকি স্যারের (মাহবুবুল আলী) প্রভাব আপনার ক্যারিয়ারে কতটা?

তাসকিন: অনেক। তবে ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আমাকে লাইমলাইটে আসতে সাহায্য করেছেন সুজন স্যার (খালেদ মাহমুদ)। ২০১৬ সালে আমার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে ওই ঘটনার পর জাকির স্যার আমাকে সাহায্য করেছেন এবং এখনো করছেন। যে কোনো সময় তার সাহায্য পাই। তো এই দুই স্যারর কাছে আমি কৃতজ্ঞ‌। আমার সর্বপ্রথম একাডেমির যে কোচ সাজু স্যার (শাজাহান সাজু, কোচ, ডিসকভার ক্রিকেট একাডেমি) তিনি আমাকে সবসময় অনেক সাপোর্ট করেছেন। এখনো কিন্তু আমি সুজন স্যার জাকির স্যারের সঙ্গে ফোনে কথা বলে, ভিডিও কলে যতটুকু পারছি কাজ করছি। যেহেতু করোন্র কারণে বাইরে বেরুতে পারছি না।

সারাবাংলা: এদেশে পেসারদের ধারাবাহিকতা দেখা যায় না। দুই কি তিন সিরিজ পরেই দেখা যায় আগের পেসার বদলে নতুন কাউকে আনা হয়েছে। এটা কেন?

তাসকিন: এর প্রধান কারণ ইনজুরি। দেখা গেল একজন পেসার ধারাবাহিক দুই সিরিজ খেলে ইনজুরিতে পড়ে গেল। শতভাগ ফিট হওয়ার আগে প্লেয়ার খেললে সে তার পুরোটা দিতে পারে না।

সারাবাংলা: অনেকের মতে আপনার চেহারা আপনার ক্যারিয়ারের প্রধান অন্তরায়। আপনি কতটা একমত?

তাসকিন: এটা কিন্তু ঠিক। আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে বিজ্ঞাপন ও এনডোর্সমেন্টের ছড়াছড়ি ছিল। যা হয়তো আমার ক্যারিয়ারকে ঠিকমত ফোকাস করতে বিঘ্ন ঘটিয়েছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে এই অনুধাবনটা নিজের ভেতরে এসেছে। এখন আমার গ্লামার হল আমার পারফরম্যান্স। অন্য কিছু না। আমার পারফর্মেন্স ঠিক থাকলে সব কিছুই আসবে, যাবে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার আমাকে ক্রিকেটকেই দিতে হবে। হয়তো এই জিনিসগুলো আগে বুঝতে ভুল হয়েছে বা অন্য দিকে ফোকাস বেশি ছিল। এরকম ছোটখাটো অনেক ভুল আমাকে পিছিয়ে দিয়েছে। আমি জানি না ফিরে এসে আবার কেমন খেলব। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যেসব ভুল আমার হয়েছে তা আর কখনো হবে না। যে যাই বলুক, আমাকে হয়তো অনেকে অনেক কিছু মনে করতে পারে। কিন্তু এটা আমার নিজের কাছে প্রতিশ্রুতি যে আমি আগামীতে নিজের খেলার প্রতি ফোকাস দিব। এবং নিজের সেরাটা দিয়েই খেলব।

সারাবাংলা: জনশ্রুতি আছে তাসকিন আহমেদ ফেইসবুকে অনেক সময় ব্যয় করেন। । আপনি কী বলবেন?

তাসকিন: সত্যি বলতে একেকজনের দৃষ্টিভঙ্গি একেক রকম। এটা ঠিক একটা সময় আমি কোনো জায়গায় গেলেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় পোস্ট বেশি দিতাম। এটা কিন্তু একটা সময়ের ব্যাপার। প্রতিটি মানুষই একটা সময় পার করে আসে। আমার ওই সময়টা হয়তো ওরকম ছিল। কারণ ওই সময়টা এগুলো করতে ভালো লাগতো। এখন কিন্তু ক্রিকেট সম্পর্কিত ছবি ছাড়া অন্য কোনো ছবি তেমন আপলোড করি না। ক্রিকেটের ছবি এইজন্যই আপলোড করি আমাকে দেখে অনেকে উৎসাহিত হয়। আর কিছু না। এরপরেও যদি কেউ বলে খুশি থাকে খুশি থাক। দিনশেষে আমি ভালো খেললেই ওই জবাব দেয়া হয়ে যাবে। ভালো খেললে সবই ভালো আর খারাপ খেলে হাঁটা বাঁকা, সবই বাঁকা।

সারাবাংলা: আপনাকে ধন্যবাদ।

তাসকিন: আপনাকেও।

সারাবাংলা/এমআরএফ/এসএইচএস

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন