বিজ্ঞাপন

‘সস্তা’র ইলিশে ব্যাগ ভরছেন ক্রেতারা

August 6, 2020 | 8:04 pm

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ইলিশে সয়লাব হয়ে পড়েছে রাজধানী। কেবল মাছ বাজার নয়, অলিগলিতে ইলিশ মাথায় নিয়ে ছুটছেন খুচরা বিক্রেতারা। দাম তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় ক্রেতারাও কিনছেন দেদারছে। বলা যায় যে যতটুকু পারছেন, প্রয়োজনের তুলনায় বেশিও কিনছেন। তাতে ক্রেতারা যেমন হাসিমুখে ব্যাগভর্তি ইলিশ নিয়ে ফিরছেন বাড়ির পথে, বেশি বেশি ইলিশ বিক্রি করা বিক্রেতাদের মুখটাও তেমনই বেশ চওড়া। নিজেরা কমে কিনতে পারছেন বলেই ক্রেতাদের হাতে কম দামে তুলে দিতে পারছেন ‘মাছের রাজা’ ইলিশ— তাতে তৃপ্তিবোধও রয়েছে তাদের।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেল এমন চিত্র। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে অন্য মাছের তুলনায় ইলিশের বেচাকেনাই বেশি।

রাজধানীর মতিঝিল এজিবি কলোনি মাছ বাজার, মতিঝিল আরামবাগ বাজার ও খিলগাঁও বাজার ঘুরে দেখা গেল, বাজারে প্রচুর ইলিশ। দাম অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশ কম। ফলে ক্রেতারা অন্য মাছের তুলনায় ইলিশ মাছই বেশি কিনছেন। বলছেন, ফ্রিজে সংরক্ষণ করে অনেক দিন ধরে খেতে পারবেন।

বিজ্ঞাপন

গড়ে ইলিশের দাম কম হলেও সবার কপালে সস্তায় জুটছে না এই মাছ। দরদামে যারা একটু কাঁচা, তাদের পকেট থেকে এই ‘সস্তার সময়ে’ও ইলিশের পেছনে টাকা খসছে একটু বেশিই। কারণ ইলিশের দামটা নির্দিষ্ট নেই কোথাওই। বিক্রেতারাও বলছেন, ‘ফিক্সড প্রাইসে’ কখনো ইলিশ বিক্রি হয় না। ফলে একই আকৃতির ইলিশ মাছও একেক ক্রেতাকে কিনতে হচ্ছে একেক দামে। তাতে করে আকারভেদে ইলিশের দাম কেজিতে ৫০/১০০ টাকা পর্যন্তও কমবেশি হয়ে যাচ্ছে।

রাজধানীর মাছ বাজারগুলো সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ১ কেজি থেকে ‍শুরু করে পৌনে দুই কেজি পর্যন্ত আকারের ইলিশকে ‘বড়’ বলে অভিহিত করছেন বিক্রেতারা। এসব ইলিশের দাম ক্রেতাভেদে সর্বনিম্ন ৭০০ টাকা থেকে গড়ে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্য সময়ে এমন আকৃতির ইলিশের দাম হাজার টাকার নিচে কল্পনাই করা যায় না। বিশেষ করে দেড় কেজি বা তার চেয়ে বড় আকৃতির ইলিশের কেজিও ১২শ থেকে দেড় হাজারের নিচে সচরাচর হয় না। এই আকৃতির ইলিশগুলোর ক্রেতা সাধারণত উচ্চবিত্ত পরিবারগুলোর পাতে এই ইলিশ পড়লেও দাম কমে আসায় উচ্চমধ্যবিত্ত ক্রেতাদের ব্যাগেও ঢুকছে ‘ব্ড় ইলিশ।’।

এদিকে, মাঝারি অর্থাৎ ৭০০ গ্রাম থেকে এক কেজির কম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা দরে। সপ্তাহখানেক আগেও এমন আকৃতির ইলিশের দাম ছিল প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। দাম কমে আসায় এই ইলিশগুলোর বিক্রি বেশ বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

বরাবরই রাজধানীর বাজারগুলোতে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ‘৬০০ গ্রাম প্লাস’ আকারের ইলিশের। এই আকৃতির ইলিশের সরবরাহ ও বিক্রিও বেশি হয়ে থাকে। নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের দৃষ্টিটা এই আকারের ইলিশেই বেশি থাকে। এমন ইলিশগুলো এখন গড়ে ৫০০ টাকা কেজিতে নেমে এসেছে, স্বাভাবিকভাবেই বিক্রিও বেড়েছে। এছাড়াও ৪০০ গ্রাম থেকে আধা কেজি আকারের ইলিশেরও বেশ সরবরাহ রয়েছে। এগুলো বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে।

রাজধানীর মতিঝিল এজিবি কলোনি মাছ বাজার থেকে চারটি বড় সাইজের ইলিশ মাছ কিনেছেন রেহানা সুলতানা। জানালেন, চারটি ইলিশের ওজন ৫ কেজি ৮০০ গ্রাম, অর্থাৎ গড়ে একেকটি প্রায় দেড় কেজি। ৭০০ টাকা কেজি দরে চারটির দাম পড়েছে চার হাজার ৬০ টাকা। রেহানার মুখে হাসিই বলছিল, তিনি খুবই সন্তুষ্ট ইলিশগুলো কিনতে পেরে।

রেহানা সারাবাংলাকে বলেন, এত বড় আকারের ইলিশ এই প্রথম কিনালাম। কারণ আগে এই আকারের ইলিশের কেজি এক হাজার টাকারও বেশি পড়ত। সে হিসাবে একেকটি ইলিশের দামই আসে দেড় হাজার টাকার বেশি। ফলে চাইলেও কিনতে পারতাম না। আজকে কিছুটা সস্তা পেয়ে লোভ সামলাতে পারলাম না। কিনেই ফেললাম।

বিজ্ঞাপন

খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা রবিউল হাসানকে দেখা গেল গুনে গুনে ইলিশ ব্যাগে তুলছেন। জানতে চাইলে বললেন, মাঝারি আকারের চার হালি (১৬টি) ইলিশ কিনেছেন। সবগুলোর ওজন প্রায় সাড়ে ১২ কেজি, অর্থাৎ একেকটি ওজন গড়ে ৭৫০ গ্রামের বেশি। কেজি পড়েছে ৫২০ টাকা করে।

জানতে চাইলে রবিউল বলেন, ইলিশের বাজারটা একটু সস্তা যাচ্ছে শুনলাম। তাই বাজারে আসা। চার হালি ইলিশ কিনলাম আজকে, ৫২০ টাকা করে কেজি নিয়েছে। এরকম সস্তা পেলে আরও ইলিশ কিনে রাখব। কারণ বাসার সবাই ইলিশ মাছ খুব পছন্দ করে। ফ্রিজে ঠিকঠাকমতো সংরক্ষণ করলে দীর্ঘদিন এই মাছ রেখে খাওয়াও যায়।

কথা হয় ইলিশ বিক্রেতা কামাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আড়তগুলাতে এখন প্রচুর ইলিশের সরবরাহ। দামও অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় আকারভেদে কেজিতে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত কম যাচ্ছে। ফলে বিক্রিও হচ্ছে বেশি।

দাম কম থাকা প্রসঙ্গে এই বিক্রেতা বলেন, মাঝখানে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর মাছ ধরা পড়ছে বেশি। কিন্তু মাত্র কোরবানির ঈদ গেল। এ অবস্থায় মাছের চাহিদা বেশ কম ক্রেতাদের মধ্যে। স্বাভাবিকভাবেই সরবরাহ বেশি আর চাহিদা কম থাকায় ইলিশের দাম পড়ে গেছে।

এদিকে, বাজারে ইলিশের দাম কম হলেও অন্য মাছের দাম কিছুটা বেশিই। আরামবাগ বাজারে প্রতি কেজি পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, টেংরা মাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বড় চিংড়ি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি, বাইন মাছ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, রুই/কাতল মাছ ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি।

এছাড়াও বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাচাঁবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজির বাজার অনেকটা আগের মতোই। তবে কাঁচামরিচের দাম এখনো অনেক বেশি— প্রতিকেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা। ধনিয়া পাতা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০ টাকায়। সবজির মধ্যে বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, করল্লা, পটল ও ঢেঁডস ৫০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছিল। আলুর দামও একটু বেশি— প্রতি কেজি ৩৫ টাকা। এছাড়াও বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪৫ টাকা, আদা ১৫০ টাকা, রসুন ৯০ টাকা কেজি।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন